অনলাইন ডেক্স::
বাংলার সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ইউনাইটেড হাসপাতালের কমিউনিকেশন ম্যানেজার চিকিৎসক সাগুফতা আনোয়ার লেখকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশের এই প্রধান কবির মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে গুলশানে নিজ বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখান থেকে রাতেই লেখকের মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে।
লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে চার মাস চিকিৎসার পর ২ সেপ্টেম্বর সৈয়দ শামসুল হক দেশে ফেরেন। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে তিনি লন্ডনে যান। সেখানে পরীক্ষার পর তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে। দেশে ফেরার পর তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে সৈয়দ হকের মরদেহ গুলশানে নিজ বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখান থেকে রাতেই লেখকের মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে।
লেখকের মরদেহ কাল বুধবার সকাল ১০টায় চ্যানেল আই কার্যালয়ে নেওয়া হবে। সেখান থেকে বেলা পৌনে ১১টায় মরদেহ নেওয়া হবে বাংলা একাডেমিতে। এরপর বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁর মরদেহ হেলিকপ্টারে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে নেওয়া হবে। সেখানেই সব্যসাচী এই লেখককে দাফন করা হবে।
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের জন্ম। ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, শিশুসাহিত্য, নাটক, প্রবন্ধ সাহিত্যের সব শাখায় সমানভাবে অবদান রাখার জন্য তিনি বাংলাদেশের সব্যসাচী লেখক। লেখালেখি শুরু করেন ১২ বছর বয়স থেকেই। সাংবাদিক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে লেখালেখিকেই মূল উপজীব্য হিসেবে নিয়েছিলেন। তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক।
সৈয়দ শামসুল হক স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
বিখ্যাত সাহিত্যকর্মগুলো হলো—উপন্যাস: ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘খেলা রাম খেলে যা’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’ ও ‘মৃগয়ার কালক্ষেপ’। নাটক: ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরলদীনের সারাজীবন’, ‘গণনায়ক’। কবিতা সংকলন: ‘পরানের গহীন ভেতর’, ‘বেজান শহরের জন্য কোরাস’, ‘এক আশ্চর্য সংগ্রামের স্মৃতি’, ‘প্রেমের কবিতা’। শিশুসাহিত্য: ‘সীমান্তের সিংহাসন’।
ব্যক্তিগত জীবনে লেখক দুই সন্তানের জনক। জীবনসঙ্গী মনোরোগের চিকিৎসক ও লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
লেখকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘গেরিলা’ সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছিল।