হাওর ডেস্ক::
আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতিহারে গ্রামকে শহরে রূপ দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। ইশতিহারে বলা হয়েছিল, প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সমৃদ্ধ শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সে অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কর্মপন্থা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এ কর্মপন্থা তৈরি করবে পরিকল্পনা কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে মন্ত্রীর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ওই সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সব সদস্য ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এনায়েত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রামকে কিভাবে শহরে রূপ দেওয়া যায়, তার একটি গাইডলাইন তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এ বিষয়ে কাজ করতে পারে। কমিশন একটি খসড়া কর্মপন্থা তৈরি করবে। পরে তা নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা হবে। ’
নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশের প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক নগর সুবিধা দিয়ে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ হিসেবে গড়ে তুলবে আওয়ামী লীগ।
যেখানে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে।
গতকালের বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। কিভাবে গ্রামেও শহরের সুবিধা দেওয়া যায়—এ বিষয়ে বৈঠকে বেশ কয়েকটি মতামত তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা। তাঁদের মতে, সারা দেশে গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে বেশির ভাগ এলাকায়। ডিজিটাইজেশনও হয়েছে ব্যাপক হারে। এখন দরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন কেউ কেউ। সে জন্য চিকিৎসকরা যাতে গ্রামে থাকেন, সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্কুলের পাশে শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকদের থাকার অবকাঠামো করতে হবে। এ ছাড়া গ্রামে যারা ঘর করতে চাইবে, তাদেরকে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সবার বক্তব্য শুনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আরো মতামত নিয়ে তিনি আগামী সপ্তাহে আবারও বৈঠক করবেন। সেখানে সবাইকে মতামত তুলে ধরার কথা বলেছেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও সংস্থা অতি উৎসাহী হয়ে এরই মধ্যে গ্রামকে শহরে রূপ দিতে গ্রামাঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। কিছু মন্ত্রণালয় প্রকল্প প্রণয়নের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে খবর এসেছে।
কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামকে শহর করে তোলা হবে মানে এই নয় যে গ্রামের মধ্যে বহুতল ভবন করা হবে। আসলে এটি হবে শহরের বাসিন্দারা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে, গ্রামের মানুষও যাতে সেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তার নিশ্চয়তা দেওয়া। কিন্তু কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিষয়টি না বুঝেই অতি উৎসাহী হয়ে বহুতল ভবন নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া শুরু করেছে।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনকে ঢেলে সাজানোর কথাও উঠেছে গতকালের সভায়। বলা হয়েছে, অন্যকে ধরার আগে নিজের ঘর সামলাতে হবে। পরিকল্পনা কমিশন এখন যেভাবে ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) টাকা বিতরণ করে, সেটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে এ প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে পরিকল্পনা কমিশনের কর্তৃত্ব খর্ব হতে পারে বলে মত দিয়েছেন কেউ কেউ।
এ ছাড়া প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা উঠেছে বৈঠকে। বলা হয়েছে, মধ্যবর্তী মূল্যায়নের জন্য যে টাকা প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়, তার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়নের জন্য বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) রয়েছে। তাই যেকোনো প্রকল্পে মধ্যবর্তী মূল্যায়নের নামে যে টাকা রাখা হয়, তা বাদ দেওয়ার প্রস্তাবও উঠেছে। এ ছাড়া ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ কমিটি করা কতটা যৌক্তিক তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব নিয়ে আবারও বৈঠকে বসবেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
(সূত্র:
দৈনিক কালের কণ্ঠ)