শামস শামীম::
১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের আমলে জেলা প্রশাসকের চাকুরি ছেড়ে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব হতে চেয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। প্রয়োজনে বিনাবেতনে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব হওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাঁকে। কিন্তু শেখ হাসিনা তাকে কাজ করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের নির্দেশনা দিয়ে আগামীতে সুযোগ এলে মন্ত্রী করবেনÑএই কথা দিয়েছিলেন। ৩২ বছর পর তিনি তাকে জীবনের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ট উপহার মন্ত্রীত্ব দিয়ে তার স্বপ্ন বাস্তবানের সুযোগ করে দেওয়ায় শেখ হাসিনার প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশব্যাপী সজ্জন রাজনীতিক খ্যাত এমএ মান্নান। বুধবার বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগ আয়োজিত সংবর্ধনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার পরিচয়, পরবর্তীতে ঘনিষ্টতা ও মন্ত্রীত্ব বিষয়ে নানা প্রসঙ্গের অবতারণা করেন তিনি। তার এই জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার এই পরিচয়ের স্মৃতি রোমন্থণের সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা বারবার করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।
এমএ মান্নান বলেন, ১৯৮৬ সনে আমি ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ছিলাম। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা হালুয়ারঘাটে গিয়েছিলেন। আমি রাতে তার সঙ্গে খেয়েছিলাম। সকালে জেলা প্রশাসক হিসেবে বিদায় দিতে গিয়েও একসঙ্গে নাস্তা করেছিলাম। ওই সময়ই তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়, কথা বার্তা হয়। তখন অনেক কথা বার্তা বলেছিলাম নেত্রীর সঙ্গে।
এমএ মান্নান এ ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, এসময় আমি নেত্রীকে বলেছিলাম নেত্রী, আমি আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দূর থেকে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাইনি। আমি তাঁকে বলেছিলাম, আমি সাধারণ পরিবারের ছেলে, গ্রামের মানুষ। বৃত্তি নিয়ে পাকিস্তানে পড়াশোনা করেছি। এ কারণে বাধ্য হয়েই লোভনীয় চাকুরি সুযোগ নিতে হয়েছে আমাকে। আমি নেত্রীকে বললাম, আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। তিনি আমার এ কথার উত্তরে বলেছিলেন, কাজ করতে বাধা কোথায়, কাজ করুন। তখন আমি তাকে বলেছিলাম সরকারি চাকুরি করে আপনার সঙ্গে কাজ করতে পারবনা। তাই চাকুরি ছেড়ে আপনার রাজনৈতিক সচিব হতে চাই। তিনি আমাকে তখন বললেন, আমার উপ-সচিব মর্যাদার একজন সচিব আছেন। তাছাড়া আমিতো আপনাকে কাজ করলেও বেতন দিতে পারবনা। তাই প্রয়োজন নেই। আমি তখন তাকে বলেছিলাম আমি বিনা বেতনেই আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমার এ কথার উত্তরে নেত্রী বললেন, খবরদার চাকুরি ছাড়বেন না। আমরা এখন এমনিতেই কষ্টে আছি। আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের যাতাকলে নিষ্পেষিত, নেতাকর্মীরা লাঞ্চিত।
এমএ মান্নান বলেন, তিনি দৃপ্তকণ্ঠে আমার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘মান্নান সাব এই বাংলায় আওয়ামী লীগ আবার সিংহের গর্জনে ফিরে আসবে। আমরা আবার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করব। বাংলার মানুষ আবার আমাদের ক্ষমতায় বসাবে। আপনি অপেক্ষা করুন। কাজ করুন, কাজ শিখে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। তখন আপনার মতো লোকদের আমরা মন্ত্রী করব।’ ১৯৮৬ সালে দেওয়া সেই কথা এবার জননেত্রী ২০১৯ সালে এসে রেখেছেন। তিনি তার নেতৃত্বে আমাকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি ধন্য।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আরো বলেন, ২০০৪ সালে আমাদের মহান নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুহালে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আসনে উপনির্বাচন আসে। আমি তখন নেত্রীর সঙ্গে দেখা করি। আমি তাকে পুরনো কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলি নেত্রী, আপনি বলেছিলেন চাকুরি শেষে আপনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দিবেন। আমি এখন উপনির্বাচন করতে চাই। তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘আমরা এ সরকারের অধীনে উপ-নির্বাচনে যাবনা। আমরা এ নির্বাচন বয়কট করেছি। তবে আপনি যেতে পারেন, পানি মেপে দেখতে পারেন। আমি আমার দলের নেতাদের আপনাকে সহযোগিতার জন্য বলে দেব’।
আমি তাঁর কাছ থেকে দোয়া নিয়ে উপনির্বাচন করলাম। আমাকে পরাজিত করা হলো। পরে আবার নেত্রীর সঙ্গে গণভবনে দেখা করি। তিনি বললেন ‘আমি জানি আপনি কেন পরাজিত হলেন। যান, দ্রুত আওয়ামী লীগে যোগদান করুন’। ২০০৮ সালের ২২ জুলাই আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। তারপর থেকেই নেত্রীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। নেত্রী পরে আমাকে কোন তদবির ছাড়াই নিজেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্য্যনির্বাহী কমিটিতে দুইবার সদস্য করেছিলেন। এটাও আমার পরম পাওয়া।
সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিজের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য নেত্রীর উপর অনেক চাপ ছিল। তারপরও নেত্রী আমার প্রতি সদয় হয়ে তিনি মনোনয়ন দিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছেন। কারণ তিনি কথা দিয়েছিলেন আমাকে মন্ত্রী করবেন। সেই কথা এবার বিজয়ী করে প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরষ্কার দিয়েছেন মন্ত্রী বানিয়ে। তাঁর নেতৃত্বের এই মন্ত্রীসভায় সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য। এখন পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে আমি আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন ও মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
এভাবে তিনি তার বক্তব্যে স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।