“দাও ফিরে সে অরণ্য লও হে নগর।” রবীন্দ্রনাথ বৃক্ষের বন্দনা করে বলেছিলেন ” অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহবান…… বন্দনায় তুমি বৃক্ষ আদিপ্রাণ।”
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ঐদিন আমরা সবাই পরিবেশবাদী হয়ে যাই। চলি বৃক্ষ রোপণ অভিযানে। যে গাড়ি করে যাই সে গাড়ির ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হয়। গাছ লাগাই ১০ টি কিন্ত ছবি আপলোড করি ২০ টি। অনেকে আবার মঞ্চে দাড়িয়ে বলেন পরিবেশের কথা কিন্তু দেখা যায় তিনিই হয়তো কটা ইটভাটার মালিক। তাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন,আপনি তো পরিবেশ দূষণ করছেন? উত্তর পাবেন ছাড়পত্রের। অধিদপ্তরের ছাড়পত্র তো আর দূষণ রোধ করতে পারে না!
আগুন জ্বালাতে অক্সিজেন লাগে। অক্সিজেন ধ্বংস করে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন না করলে আমরা অভুক্ত থাকবো। আমি যে লিখছি তাতেও হয়তো পরিবেশ দূষণ হতে পারে। তাই বলে যখন তখন পরিবেশ দূষণ করতে পারি না।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো পরিবেশ দূষণের জন্য বেশি দায়ী। কিন্তু এর বোঝা গরীব দেশগুলোও বহন করছে। তা না হলে জলবায়ু এভাবে পরিবর্তন হত না। শীতের সময় শীত নাই,গরমের সময় গরম নাই, বসন্তেও কেমন জানি হাওয়া বয়। বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের ২০১৭ সালের অকাল বন্যা ও ফসলহানি আমাদের ভাবিয়ে তুলে। বজ্রপাতে এত মানুষের প্রাণহানী মানা যায় না। পাহাড় কাটার ফলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধ্বস। অসাধুরা বেপরোয়াভাবে বালু, পাথর উত্তোলন করছে , পাহাড় কাটছে আর মারা যাচ্ছে নিরীহ শ্রমিক। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারাও পাহাড়ের ক্ষতি করছে, বন কাটছে।
আর পলিথিন সেতো বড়ো নির্দয়।নদী দূষণ করছে,খাল ড্রেন ভরাট করছে।
আমাদের প্রয়োজন মেটাতে কলকারখানার বর্জ্য, মোবাইল বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, ইত্যাদি সব মিলিয়ে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে টেলে দিচ্ছে।
এই বর্জ্যগুলোকে রিসাইকেল করে সার তৈরি করে দূষণ রোধ করা যেতে পারে। আমরা “চ্যাম্পিয়ান অব দি আর্থ” অর্জন করেছি । আমরা পরিবেশ দূষণ করতে পারি না।আমাদের উচিত বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন,রাতারগুল, লাউয়াছড়া, পার্বত্য অঞ্চলের বন রক্ষা করা এবং নতুন নতুন বনায়ন করা। ৭ টি জেলায় হাওর বেশি। হাকালুকি হাওর, টাঙুয়ার হাওর ইত্যাদি হাওরে হতে পারে বনায়ন।
বিজ্ঞানীদের ধারণা পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চল এক সময় তলিয়ে যেতে পারে তাই বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে যেন আর বরফ না গলে এদিকে খেয়াল দিতেই হবে।কারণ পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চল তলিয়ে গেলে বাংলাদেশ রক্ষা পাওয়ার কথা নয়। কোন দেশের আয়তনের তুলনায় বনভূমি থাকা প্রয়োজন ২৫%। কিন্ত আমাদের ১৭% এর চেয়েও কম তাই বলি নদীর ধারে,পুকুর পারে,রাস্তার পাশে,হাওরপারে,বাসার ছাদে,বাড়ির পাশে বিশেষ করে বর্ষাকালে গাছ লাগানো উচিত। আমরা যদি ১৬ কোটি মানুষ হই আর জনে ২ টি করে গাছ লাগালে, বাংলাদেশর নতুন ৩২ কোটি গাছ হয়। তাই আসুন লাগাই বৃক্ষ তাড়াই পৃথিবীর দুঃখ।