বিশেষ প্রতিনিধি, যুক্তরাজ্য
ব্রিটেনে বাঙালি কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী। সংগঠনের সেক্রেটারি ও ট্রেজারার পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে চ্যানেল এস-এর চীফ রিপোর্টার মুহাম্মদ জুবায়ের ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো চীফ আ স ম মাসুম। আ স ম মাসুম সর্বোচ্চ ২০০ ভোট পেয়ে রেকর্ড করেছেন ।
গত ২৭ মার্চ রোববার ইস্ট ল-নের ইম্প্রেশন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত ক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন ও বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রাণজ উপস্থিতি ছিলো ল-নসহ পুরো ইউকে’র বিভিন্ন শহরের প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক তথা ক্লাব সদস্যদের। এছাড়া সন্ধ্যায় পরিবেশিত সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভোজসভায় ক্লাবের জীবনসদস্য, দাতা সদস্য এবং শুভাকাক্সক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এতে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দও অংশ নেন।
নির্বাচনে দুটি শক্তিশালী প্যানেলের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর এমাদ-জুবায়ের-মুরাদ টিম ১৫টি পদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, ভাইস প্রেসিডেন্টসহ ১০টি পদ পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী টিম-নাহাস লাভ করে ট্রেজারারসহ ৫টি পদ। ক্লাবের নির্বাচনী ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি দুজনই এক টিম থেকে নির্বাচিত হলেন।
নির্বাচন পরিচালনা করেন তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন বজলুর রশিদ এমবিই। কমিশনার হিসেবে তাকে সহযোগিতা করেন এসএসবিএ-এর চেয়ারম্যান আজিজ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া।
বেলা আড়াইটা থেকে ৬টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। রাত ১১টার দিকে ঘোষিত হয় ফলাফল।
ক্লাবের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সকলকে সাথে নিয়েই তিনি ক্লাবের কার্যক্রম এগিয়ে নেবেন। এতে তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্টের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সাহায্য প্রত্যাশা করেন।
বিদায়ী সৈয়দ নাহাস পাশা বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় স্বাভাবিক ব্যাপার। যখন যিনি নেতৃত্বে আসবেন তাঁর নেতৃত্বে ক্লাবকে এগিয়ে নিতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
ফলাফল ঘোষণার পর লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের বিজয়ী প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারী ও ট্রেজারারসহ নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। নতুন কমিটি প্রেস ক্লাবকে আরো গতিশীল করে সংগঠনকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে তারা আশাবাদ প্রকাশ করেন। ফলাফল ঘোষণাপর্ব শেষে অনুষ্ঠানস্থলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিজয়ীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া অনেকেই পরদিন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুুল হক চৌধুরীর সাপ্তাহিক পত্রিকার অফিসে এসে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে যান।
এছাড়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ল-নে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের পক্ষে প্রেস মিনিস্টার আশেকুন্নবী চৌধুরী, টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ), ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, সিলেট প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ সেন্টার ও গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নির্বাচনের বিস্তারিত ফলাফল
সভাপতি পদে ১২ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১৬৩ ভোট। এর বিপরীতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিদায়ী সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা ভোট পেয়েছেন ১৫১।
সহ-সভাপতি পদে বাংলা পোস্ট সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী ৫৯ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তারেক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ১৮৪ আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার লাভ করেন ১২৫ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে চ্যানেল এস-এর চীফ রিপোর্টার মুহাম্মদ জুবায়ের ৭৯ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। মুহাম্মদ জুবায়ের পেয়েছেন ১৯২ ভোট আর প্রতিদ্বন্দ্বী বেতার বাংলার আনিসুর রহমান আনিছ পেয়েছেন ১১৩ ভোট।
কোষাধ্যক্ষ পদে বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর আবু সালেহ মোহাম্মদ মাসুম তার অবস্থান ধরে রেখেছেন। তিনি ৯৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। আবু সালেহ মোহাম্মদ মাসুম পেয়েছেন ২০০ ভোট আর প্রতিদ্বন্দ্বী বেতার বাংলার আব্দুল কাদির চৌধুরী মুরাদের প্রাপ্ত ভোট ১০৭। এই নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন সর্বোচ্চ ভোট।
এসিসট্যান্ট সেক্রেটারি পদে মতিউর রহমান চৌধুরী ৫৯ ভোটে জয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১৭৮ আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ সুবহান পেয়েছেন ১২৫ ভোট।
এছাড়া কমিউনিকেশন সেক্রেটারি হিসেবে ইউকে বিডি টাইমস-এর সম্পাদক এম এ কাইয়ুম দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১৬৪ আর প্রতিদ্বন্দ্বী টিভি ওয়ানের সিনিয়র রিপোর্টার জাকির হোসেন কয়েছ পেয়েছেন ১৩৯।
চার ভোটের ব্যবধানে আবারো ট্রেনিং এ- রিসার্চ সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছেন চ্যানেল এস-এর সিনিয়র রিপোর্টার ইব্রাহিম খলিল। ইব্রাহিম খলিলের প্রাপ্ত ভোট ১৫৫ আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিট বাংলার নির্বাহী সম্পাদক আহাদ চৌধুরী বাবু পেয়েছেন ১৫১ ভোট।
ইনফরমেশন এ- টেকনোলজি সেক্রেটারি হিসেবে ১৮০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়েছেন সাপ্তাহিক বাংলা পোস্টের প্রডাকশন এডিটর সালেহ আহমদ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আমাদের প্রতিদিন-এর আনোয়ার শাহজাহানের মোট প্রাপ্ত ভোট ১২৮।
ইভেন্টস এ- ফ্যাসিলিটিস সেক্রেটারি পদে নির্বাচিত হয়েছেন চ্যানেল এস-এর নিউজ ক্যামেরাপার্সন রেজাউল করিম মৃধা। প্রতিদ্বন্দ্বী টিভি ওয়ান নিউজের প্রডিউসার আজহার ভূঁইয়ার মোট প্রাপ্ত ভোট ১৩৫ আর রেজাউল করিম মৃধা পেয়েছেন ১৭১।
নির্বাহী সদস্য পদে মোট ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত ছয়জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এবারই প্রথমবারের মতো ক্লাবের নির্বাহী কমিটিতে সর্বোচ্চসংখ্যক নারী জায়গা করে নিয়েছেন। এদিকে, সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাপ্তাহিক সুরমার বার্তা সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
নির্বাহী সদস্যপদে বিজয়ীরা হলেন- সাপ্তাহিক সুরমার বার্তা সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম (১৯১ ভোট), চ্যানেল-এস এর সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার রুপী আমিন (১৬৫ ভোট), সাপ্তাহিক জনমত-এর মোঃ এমরান আহমদ (১৫৭ ভোট), নতুন দিন অনলাইনের পলি রহমান (১৫৭ ভোট), এনটিভির নিউজ প্রেজেন্টার নাজমুল হোসেইন (১৫৬ ভোট), নারী এশিয়ান ম্যাগাজিনের শাহনাজ সুলতানা (১৪৭ ভোট)।
উল্লেখ্য, গোটা ল-ন তথা ইউকে জুড়ে সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের চোখ ছিলো এই নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনী প্রচারে গত কয়েক সপ্তাহ সরগরম ছিল ল-নসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর। লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে এ বছর মোট ভোটার হচ্ছেন ৩১৮ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৩১৬টি।
দ্বিবার্ষিক সভার প্রথম পর্বে দুপুর ১টা থেকে শুরু হয় সাধারণ সভার আনুষ্ঠানিকতা। বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশার বক্তব্যের পর সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়ের বার্ষিক রিপোর্ট ও ট্রেজারার আ স ম মাসুম আর্থিক রিপোর্ট উত্থাপন করলে তা অনুমোদিত হয়। এ সময় সদস্যদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ক্লাবের বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য, প্রশ্ন ও সমালোচনা কমিটির পক্ষ থেকে লিপিবদ্ধ ও রেকর্ড করা হয়। সকল সদস্যই নতুন ও নিজস্ব অফিস স্থাপনসহ বিভিন্ন সফল কর্মসূচীর কারণে বিদায়ী নির্বাহী কমিটির প্রশংসা করেন।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ল-নস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) আশেকুন্নবী চৌধুরী। এ সময় নির্বাচন না করে ক্লাব কমিটি থেকে বিদায় নেয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব রহমান ও নির্বাহী সদস্য আমিরুল চৌধুরীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ সময় ক্লাবে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করা হয়। এছাড়া সাপ্তাহিক জনমতে ২৫ বছর ক্লাবের অফিস করার সুযোগ দেয়ার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে জনমতের চেয়ারম্যান আতিক চৌধুরী, সম্পাদক নবাব উদ্দিন ও ডিরেক্টর জুনায়েদ চৌধুরীর হাতে একটি ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। মিনিস্টার (প্রেস) ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়ের এসব ক্রেস্ট তুলে দেন।