স্টাফ রিপোর্টার ::
স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ তিন কর্মকর্তাকে সুনামগঞ্জে বদলির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। নাগরিকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। শাস্তিস্বরূপ সুনামগঞ্জের মতো স্থানে তাদের বদলির আদেশে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা এই দুর্নীতিবাজদের সুনামগঞ্জের বদলে অন্যত্র বদলিসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির সাম্রাজ্য বিস্তার করে ‘টাকার কুমির’ হয়েছেন ২৩ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক তাদেরকে বদলির পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্যবিভাগকে জানিয়েছে। দুদকের নির্দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের এই সিন্ডিকেটের বলয় ভাঙতে তাৎক্ষণিকভাবে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব (পার-২) একেএম ফজলুল হক খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের আলোচিত দুর্নীতিবাজ ২৩ কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রংপুর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে, চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের প্রধান সহকারি ফয়জুর রহমানকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী তৈয়বুর রহমানকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এই তিন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সুনামগঞ্জে বদলি করার আদেশের পরই স্থানীয় সুধীজন, স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট লোকজন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী দলের সচেতন লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অনেকেই এই বদলি আদেশের পর ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন। সুনামগঞ্জে চিকিৎসকদের সংগঠন মেডিকেল এসোসিয়েশন সুনামগঞ্জ এর নেতারাও এ ঘটনাকে সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন।
এদিকে এই দুই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পাশাপাশি সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন সুধীজন। দীর্ঘদিন ধরে তারা একই স্থানে থেকে পুরো স্বাস্থ্যখাত কুক্ষিগত করে ওপেন দুর্নীতি করে টাকার কুমির সেজেছেন বলে মনে করেন সুধীজন। সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেট ভাঙার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ বিএমএর সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাস বলেন, এই খবর সুনামগঞ্জবাসীর জন্য একটি দুঃসংবাদ। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সুনামগঞ্জে বদলি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই নেতা।
সুনামগঞ্জের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পরীক্ষিত নেতা মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, সুনামগঞ্জ কোন পরীক্ষিত দুর্নীতিবাজের বদলি স্থান হতে পারেনা। এই দুর্নীতিবাজ আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ওদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস বলেন, বদলির খবর শুনেছি। তবে এখনো কোন কাগজপত্র পাইনি আমরা।