অনলাইন ডেক্স::
‘জম্মু-কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয় বাহিনীর পরিচালিত হামলা’য় অন্তত ৯ জন পাকিস্তানি সেনার প্রাণহানি হয়েছে বলে নিজস্ব সূত্রের বরাতে খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম টাইমস নাউ। এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে জম্মু-কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত-পাকিস্তান ‘গোপন যুদ্ধ’ শুরুর আভাস দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কাশ্মির ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।
টাইমস নাউ নিজস্ব সূত্রের বরাতে তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে পরিচালিত হামলায় ৯ সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। অন্তত ৩৫ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। আর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন বলছে, হামলা চালানো হয়েছে অন্তত ৭টি জঙ্গি ঘাঁটিতে। বুধবার দিনগত রাত আড়াইটা থেকে ৮টা পর্যন্ত ওই অভিযান পরিচালিত হয়।
ভারত বলছে, তারা ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই অভিযান চালিয়েছে। অভিযানকে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে পরিচালিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দাবি করে ভারত এই হামলার বৈধতা আদায়ের চেষ্টা করছে। কেবল তাই নয়। শীর্ষ ভারতীয় সামরিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারত যা বলছে, সেই ভাষ্যে নিহত দুই পাকিস্তানি সেনাকে প্রকারন্তরে সন্ত্রাসীদের সহযোগী বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সামরিক অভিযানবিষয়ক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং এমন ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি দাবি করেন, ‘কিছু সন্ত্রাসী দল লাইন অব কন্ট্রোলে আস্তানা গড়ে সেখানে অবস্থান করছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী গতরাতে সেখানে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা হতাহত হয়েছে।’
ভারত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকস’ চালানোর কথা বলে হামলার বৈধতা আদায়ের চেষ্টা করলেও তা মানছে না পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে নয়, আন্তঃ সীমান্ত গোলাগুলিতে তাদের দুই সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে ইসলামাবাদ। তাছাড়া পাকিস্তানি ভূখ-ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হলে একই ধরনের জবাব দেওয়া হবে বলে ভারতকে হুঁশিয়ার করেছে পাকিস্তান। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকস’এর দাবিকে ভিত্তিহীন দাবি করেছে তারা।
তবে লাইভ লিকের এই ভিডিও ভিন্ন কথা বলছে। এতে ভারতীয় বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে অভিযানে নিয়োজিত থাকতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরেও ‘ছায়া যুদ্ধ’ শুরুর আভাস দেওয়া হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং-এর এক বিবৃতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ভারত লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলন্দাজ বাহিনী ও অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। এলওসি-এর কেল ও লিপা অঞ্চল দুটি লস্কর-ই-তৈয়বা ও অন্যান্য সশস্ত্রগোষ্ঠীর ঘাঁটি রয়েছে বলে ভারত দাবি করেছে। কাশ্মিরের উত্তরাঞ্চলে ভীমবার এলাকায়ও এলওসি বরাবর ভারত হামলা চালাতে পারে, যা রাজৌরি ও পুঞ্জ যাওয়ার একটি পথ।
কাশ্মিরে ১৯৮৯ সালের আন্দোলনের সময় থেকে উভয় পক্ষের সেনাসদস্যরাই এক গোপন যুদ্ধে লিপ্ত হতেন, যা প্রায় সময়েই হতো হিংস্র। বৃহস্পতিবারের এই হামলা যে এখানেই শেষ হচ্ছে না, তার প্রমাণও ইতিহাসের মধ্যেই রয়েছে। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে সশস্ত্র হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা শুরু হয়। ওই হামলার জন্য ভারত জয়েশ-ই-মোহাম্মদ-কে দায়ী করে আসছে। পরে ২০০৩ সালে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশ এলওসি-তে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে। ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
২০১২ সালের অক্টোবরে উরিতে ভারতের সামরিক কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান আপত্তি জানায়। এর ফলশ্রুতিতে আবারও উত্তেজনা শুরু হয় দুই পক্ষে, শুরু হয় গোলাগুলি। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের ল্যান্স নায়েক হেম রাজ এবং ল্যান্স নায়েক সুধাকর নায়েক জঙ্গি হামলায় নিহত হন। জুলাইয়ে পাকিস্তান অভিযোগ করে, বিনা উস্কানিতে ভারতের সেনাবাহিনী গুলি চালায়, এতে রাওলাকোট শহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সিপাহী অসীম ইকবাল নিহত হন। পরে পাকিস্তানও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এবারের ২০১৬ সালটি অবশ্য এ পর্যন্ত ছিল সীমান্তে তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, টাইমস নাউ, ইন্ডিয়া টুডে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডন, এক্সেপ্রেস ট্রিবিউন।