হাওর ডেস্ক::
২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে দায়েরকৃত দুদকের মামলায় ৩৪ জনকে বাদ দিয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।রবিবার দুদক থেকে নতুন ছয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন। এই মামলা থেকে দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা না থাকায় বাদ দেওয়া হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে সদ্য আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী খায়রুল হুদা চপল। শুরু থেকেই খায়রুল হুদা চপলের সমর্থকরা এ ঘটনায় তিনি জড়িত নন দাবি জানিয়ে আসছিলেন। খায়রুল হুদা চপলের রাজনৈতিক উত্থানে ভীত হয়ে একটি পক্ষ তাকে মামলায় জড়িয়েছিল বলে মনে করেন তারা। খায়রুল হুদা চপল দুই বছর মেয়াদী হাওররক্ষা বাঁধের কাজ পেলেও ওই বছর মাত্র ৭ লাখ টাকা বিল তুলেছিলেন বলে জানা গেছে। যে কারণে দুদক তাকেসহ অন্যদের মামলার চার্জশীট থেকে বাদ দিয়েছে।
অভিযোগপত্র থেকে বাদ যাওয়া অন্যরা হলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট অঞ্চলের প্রাক্তন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই (পিএলআর), প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম (বর্তমানে পূর্বাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী), স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইব্রাহিম অ্যান্ড শামিম আহসান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. বাচ্চু মিয়া।
২০১৭ সালের ২ জুলাই হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা এবং ৪৬ ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলা দায়েরের দিনেই আসামিদের মধ্যে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীন ও মো. বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল তদন্তকারীরা। মোট ৩৩ জন আসামির মধ্যে ২৭ জন হলেন- বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দপ্তর) মো. আফছার উদ্দীন, সহকারী প্রকৌশলী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মো. খলিলুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ঢাকা) মো. শহিদুল্লা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নেত্রকোনা) ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ( কক্সবাজার) খন্দকার আলী রেজা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ঢাকা) মো. শাহ আলম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সাতক্ষীরা) মোহাম্মদ মাহমুদুল করিম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ঢাকা) মো. মোছাদ্দেক ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ঝালকাঠি) সজিব পাল।
অন্যদিকে দুদকের চার্জশীটে অভিযুক্ত ঠিকাদাররা হলেন- মো. আফজালুর রহমান, পার্থ সারথী পুরকায়স্থ, শেখ মো. মিজানুর রহমান, আবুল মহসীন মাহবুব, নিয়াজ আহমেদ খান, মিলন কান্তি দে, খান মো. ওয়াহিদ রনি, মো. সোয়েব আহমেদ, মো. ইউনুস, মো. আব্দুল কাইয়ুম, মো. আতিকুর রহমান, মো. গোলাম সরোয়ার, মো. নুরুল হক, মো. শাহরিন হক মালিক, মোকসুদ আহমেদ, মো. সাইদুল হক, কাজি হাসিনা আফরোজ ও শেখ আশরাফ উদ্দিন।
তদন্তে নতুন করে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী লিংকন সরকার, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) রঞ্জন কুমার দাস, সহকারী প্রকৌশলী (সুনামগঞ্জ) অনিক সাহা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান হোসেন, নীহার রঞ্জন দাস ও ঠিকাদার মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স (প্রাইভেট) লিমিটেডের পরিচালক (কন্সট্রাকশন) মো. শরিফুল ইসলাম।
চার্জশিট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ৩৪ জন হলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম সরকার, প্রাক্তন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর)/শাখা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, মো. বরকত উল্লাহ ভূঁইয়া, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, ঠিকাদার খন্দকার শাহিন আহমেদ, মো. জিল্লুর রহমান, সজীব রঞ্জন দাস, এম এ হান্নান, খাইরুল হুদা চপল, কামাল হোসেন, কাজি নাছিমুদ্দিন লালা, খন্দকার আলী হায়দার, মো. আকবর আলী, মো. রবিউল আলম, মো. আবুল হোসেন, শিবব্রত বসু, মোজাম্মেল হক মুনিম, মো. বাচ্চু মিয়া, বিপ্রেশ তালুকদার বাপ্পি, মো. জামিল ইকবাল, চিন্ময় কান্তি দাস, মো. খাইরুজ্জামান, ম. মফিজুল হক, মো. মোখলেছুর রহমান, মো. রেনু মিয়া, মো. শামসুর রহমান, আব্দুল মান্নান, মো. মাহতাব চৌধুরী, লুৎফুল করিম, হাজি মো. কেফায়েতুল্লা, হুমায়ন কবির ও ঠিকাদার মো. ইকবাল মাহমুদ।
২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল দুদকের পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে টিম কাজ শুরু করে। এই টিমের সদস্যরা হলেন উপ-পরিচালক আবদুর রহিম, সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি, সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ এবং উপ-সহকারী পরিচালক নেয়ামুল কাজী।
মামলার চার্জশীট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সজীব রঞ্জন দাশ বলেন, আমাদের নামে একাধিক প্রকল্পের কাজ থাকলেও পানি আসার সময় ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া দুই বছর মেয়াদী কাজে আমরা মাত্র ৭ লাখ টাকা তুলেছিলাম। টাকা না তুলে সময় মতো ওয়ার্ক অর্ডার না পেয়ে আমরা কাজই শুরু করতে পারিনি। তাহলে আমরা দুর্নীতি করলাম কোথায়। দুদকের নিরপেক্ষ তদন্তের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।