হাওর ডেস্ক::
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালকদের হাওরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার জন্য লাখ লাখ টাকার গাড়ি দেওয়া। কিন্তু তারা যদি সেই গাড়িতে চড়ে গুলশান-বনানীতে ঘুরে বেড়ান তাহলে কেমন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন বৃদ্ধি পাবে?’ বলে তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সিলেট সার্কিট হাউজে এই বিভাগে বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এই প্রশ্ন রাখেন।
এসময় ‘সিলেট বিভাগীয় গ্রামীণ অ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প পর্যালোচনা করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রকল্প পরিচালকদের অবশ্যই প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন। এটা কেন মানছেন না? সেই সঙ্গে যারা একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের একটির বেশি প্রকল্পের থাকা উচিত নয়।’
বিজ্ঞাপন
এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘জনগণের টাকায় গাড়ি কেনা হচ্ছে। সেই গাড়ী সব থাকছে ঢাকায়। কিন্তু কাজ থাকছে গ্রামে। এটা অদ্ভুদ বিষয়। হাওরে প্রকল্প হচ্ছে কিন্তু আমি জানি না। জনগণ আমাদের কাছে জানতে চায়, আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। তাই পারাস্পারিক দোষারোপ না করে আসুন সবাই মিলে প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোযোগ দিই।’
সিলেট বিভাগী কমিশনার মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ।
আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ জানান, সিলেট বিভাগে মোট ৫৮টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়নে রয়েছে ধীর গতি। পাঁচটি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য। বাকি ২৩টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন সঠিক পথেই রয়েছে। প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে যাতে বাস্তবায়ন হয় সেজন্য এই প্রথমবারের মতো বিভাগীয় পর্যায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকি করা হচ্ছে। এ উদ্যোগের মূল কারণ হচ্ছে প্রকল্পের গতি বাড়ানো।
সিলেট বিভাগীয় গ্রামীণ অ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জানান, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এর অর্থায়নে ২০১৬ সালের মে থেকে চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৮৭ কোটি টাকার মধ্যে চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। কিন্তু জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকার কিছু বেশি। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র দুই দশমিক ২৮ শতাংশ। এর পেছনে আইডিবির কাছে বারবার যেতে হয়েছে বিভিন্ন ধাপে ধাপে। বিশেষ করে পরামর্শক নিয়েগে তাদের অনুমতি পেতে অনেক সময় লেগেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হলেও আগে আইডিবির স্থানীয় অফিস না থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা ছিল সময় সাপেক্ষ।
এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সভা থেকে জানানো হয়, একই অবস্থা বিরাজ করছে সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পেও। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫৪৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি শূণ্য দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ চলতি অর্থবছর শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রকল্পের অনুকূলে এক টাকাও ব্যয় হয়নি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের দুইজন প্রকল্প পরিচালক রয়েছেন। একজন কাজ করেন ঢাকায় অন্যজন প্রকল্প ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন সিলেটে। এ প্রকল্পটির অগ্রগতি বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বিষয়টি নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
(তথ্যসূত্র সারাবাংলা ডটনেট)