হাওর ডেস্ক::
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক হামলায় ৪০ জনের বেশি নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হওয়ার পর ‘লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)’ অতিক্রম করে মঙ্গলবার ভোররাতে পাকিস্তানের সীমানার ভেতরে হামলা করে ভারত। ভারতের দাবি, এ হামলায় পাকিস্তানের ভেতরে বহু মানুষ নিহত হয়েছে।
তবে পাকিস্তানের দাবি, তারা এসব হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে।
পুলওয়ামার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানকে এর সমুচিত জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান বলেছিল যে আক্রান্ত হলে তারাও বসে থাকবে না। চিরবৈরী প্রতিবেশী দেশ দুটির হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু তাদের কার কেমন সামরিক শক্তি রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৬টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান চতুর্থ, অন্যদিকে পাকিস্তানের অবস্থান ১৭তম।
এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে ৫৫টির বেশি উপাদান বিবেচনায় নিয়ে। ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, স্থানীয় শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ, কর্মক্ষমতা এবং প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিশ্বের দেশের মর্যাদার বিষয়গুলো এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত।
পাকিস্তানের জনসংখ্যা যেখানে সাড়ে ২০ কোটি, সেখানে ভারতের জনসংখ্যা ১২৮ কোটির বেশি। পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা ৯ লাখ ১৯ হাজার হলেও ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা কয়েক গুণ বেশি—৪২ লাখ।
প্রতিরক্ষা বাজেট : ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেটে বড় পার্থক্য রয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট চার হাজার ৭০০ কোটি ডলার, অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ রয়েছে ৭০০ কোটি ডলার।
সামরিক বিমান : ভারতের মোট সামরিক বিমান রয়েছে দুই হাজার ১৮৫টি, আর পাকিস্তানের রয়েছে এক হাজার ২৮১টি বিমান। এসবের মধ্যে ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৯০টি আর পাকিস্তানের ৩২০টি। সেই সঙ্গে ভারতের আক্রমণকারী বা অ্যাটাকিং বিমান রয়েছে ৮০৪টি, অন্যদিকে পাকিস্তানের আছে ৪১০টি। পরিবহনের জন্য ভারতের রয়েছে ৭০৮টি বিমান, পাকিস্তানের রয়েছে ৪৮৬টি।
হেলিকপ্টার : পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কাছে সাধারণ হেলিকপ্টার রয়েছে যেখানে ৩২৮টি, ভারতের কাছে রয়েছে ৭২০টি। তবে পাকিস্তানের আক্রমণকারী বা অ্যাটাকিং হেলিকপ্টার রয়েছে ৪৯টি, যেখানে ভারতের আছে মাত্র ১৫টি। কার্যক্ষম বিমানবন্দর রয়েছে ভারতের ৩৪৬টি, আর পাকিস্তানের ১৫১টি।
ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান : পাকিস্তানের মোট ট্যাংকের সংখ্যা দুই হাজার ১৮২টি হলেও ভারতের রয়েছে এর প্রায় দ্বিগুণ—চার হাজার ৪২৬টি। সাঁজোয়া যান ভারতের রয়েছে তিন হাজার ১৪৭টি, আর পাকিস্তানের দুই হাজার ৬০৪টি।
আর্টিলারি : গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তালিকায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের দিক বিবেচনায় ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। ভারতের ১৯০টি এ ধরনের অস্ত্র থাকলেও পাকিস্তানের রয়েছে ৩০৭টি। তবে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়, এমন আর্টিলারি ভারতের আছে চার হাজার ১৫৮টি। তবে পাকিস্তানের আছে এক হাজার ২৪০টি। রকেট প্রজেক্টর ভারতের আছে ২৬৬টি আর পাকিস্তানের আছে ১৪৪টি।
নৌবাহিনীর সরঞ্জাম : ভারতের নৌবাহিনীর কাছে মোট যুদ্ধযান রয়েছে ২৯৫টি আর পাকিস্তানের আছে ১৯৭টি। এসব যুদ্ধযানের মধ্যে ভারতের একটি বিমানবাহী রণতরী থাকলেও পাকিস্তানের সে রকম কিছু নেই। ভারতের কাছে ১৬টি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ থাকলেও পাকিস্তানের আছে পাঁচটি। ফ্রিগেট রয়েছে ভারতের ১৪টি, আর পাকিস্তানের ১০টি। ভারতের ১১টি ডেস্ট্রয়ার থাকলেও পাকিস্তানের এ রকম কোনো যুদ্ধজাহাজ নেই। তেমনি ভারতের ২২টি কর্ভেট থাকলেও পাকিস্তানের এ রকম কোনো নৌযান নেই।
পারমাণবিক অস্ত্র : দুই দেশেরই পরমাণু অস্ত্র থাকলেও গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধের ক্ষেত্রে অনেকটা ডেটেরেন্ট বা নিবৃত্তকরণের উপাদান হিসেবে কাজ করে, কারণ শেষ বিচারে এ ধরনের অস্ত্র কেউ ব্যবহার করতে চাইবে না। সূত্র : বিবিসি।