হাওর ডেস্ক::
২০০৪ সাল। তখনকার রাজনীতিতে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ ছিল না। নবম জাতীয় সংসদে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। তবে, ২০০৪ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি সিলেটের পূবালী ব্যাংকের ২২ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় সিলেটে একজোট ছিলেন আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির সিলেটের কতিপয় স্থানীয় নেতা।
অভিযুক্ত দুই মূল আসামী আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই নেতা স্থানীয় জন প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন দক্ষিণ সুরমার তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উসমান আলী ও অন্যজন সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশিক আহমদ।
জনপ্রতিনিধির এই পরিচয় ছাপিয়ে আলোচনায় তাদের রাজনৈতিক পরিচয়। উসমান আলী সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এবং আশিক আহমদ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। তৎকালীন সময়ে রাজনীতির মতাদর্শের দুই মেরুতে থাকা দুই নেতা কীভাবে একত্রে হয়ে ব্যংকের টাকা লূটের পরিকল্পনা ও ডাকাতিতে অংশ নিয়েছেন এই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় চলছে মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) পূবালী ব্যাংকের জুনিয়ার অফিসার (ক্যাশ) জি এম আতাহার হোসেনের ২০০৪ সালের ব্যাংকের টাকা ডাকাতির ঘটনায় করা মামলায় ওসমান আলী এবং আশিক আহমদসহ ১৬ জনকে ৭ বছর করে সাজা প্রদান করে আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর করে সশ্রম কারাদন্ডেরও আদেশ দেয়া হয়। মামলার দীর্ঘ শুনানী ও ২৩ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ রায় দেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মফিজুর রহমান ভূইয়া। এছাড়া মামলার রায়ে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় বেকসুর খালাস পাওয়া আসামি হলেন আনোয়ার হোসেন। মামলার অভিযোগপত্রে তাঁর নাম ছিল।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামীরা হলেন- সিলেট সদর উপজেলার সোনাতলা গ্রামের শহীদুল ইসলাম শহীদ, নগরীর ফাজিলচিশতের জাবেদ, সওদাগরটুলার রুবেল আহমদ, বলকলাপাড়ার কামাল হোসেন, নূরানী সুবিদবাজারের বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা কলিন্স সিংহ, কদমতলীর আবদুল মমিন, ইঙ্গুলাল রোড কুয়ারপাড়ের রহিম আলী, দক্ষিণ সুরমার বানেশ্বরপুরের শফিক মিয়া, একই গ্রামের বাসিন্দা ও চেয়ারম্যান উসমান আলীর ভাই আনহার ও আঙ্গুর, আবদুল হক লিটন, শাহান, লিটন ও সিপন আহমদ। এদের মধ্যে জাবেদ, রহিম আলী, শফিক মিয়া, আবদুল হক লিটন ও লিটন পলাতক রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটের বিভিন্ন শাখা থেকে টাকা নিয়ে নগরীর লালদিঘীরপাড় প্রধান শাখায় মাইক্রোবাসযোগে আসছিলেন পূবালী ব্যাংকের জুনিয়ার অফিসার (ক্যাশ) জি এম আতাহার হোসেন। এসময় তার সাথে ছিলেন গার্ড মোজাম্মেল আলী, আমানত উল্লাহ ও মাইক্রোবাস চালক মজনু মিয়া। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে হুমায়ূন রশীদ চত্ত্বরে আসার পর ১৫-২০ জন লোক মাইক্রোবাসের গতিরোধ করে হামলা চালিয়ে গাড়িতে থাকা ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মধ্যে ২২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা ১৪ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি স্ট্যান্ডগানও ছিনিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় জি এম আতাহার হোসেন বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় ১৭ জনকে আসামি করে ডাকাতির মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ঘটনার প্রায় দেড় দশক পর রায় হলো।
রায়ের পর সিলেট আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ পড়েছেন বিব্রতকর অবস্থায়। অনেকেই বলছেন, যারা এরকম ডাকাতি এবং লূটের কাজ করতে পারে তারা আমাদের কেউ নয়। দলের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। দলীয় পদ পদবীর প্রভাব খাটিয়েই আশিক আহমদ ও উসমান আলী এমন দুঃসাহসিক কাজ করার সাহস পেয়েছেন- এমন মন্তব্যের কোন উত্তর এমনকি এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কারো সাথে কথা বলতে চাননি একাধিক আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় পার্টির নেতা।