হাওর ডেস্ক::
লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার ১৫ বছর পার হলেও এখনো মেলেনি রায়। তবে আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ মামলার একটি ধারায় রায় ঘোষণা করা হতে পারে। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
জানা গেছে, মামলাটিতে ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। বর্তমানে এ হত্যা মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের পর হবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। আর এটা শেষ হলেই রায়ের জন্য দিন ধার্য করবে আদালত।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় দণ্ডবিধির ধারায় যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে সেটি শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। এছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেটাও অন্য আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে মামলাটির রায় প্রকাশ করা হবে। আর বিস্ফোরক দ্রব্যের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। এই দুই মামলায় পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আগামী ২১ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে।’
ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুল্লাহ আবু সারাবাংলাকে বলেন, “হুমায়ুন আজাদ হত্যার মামলাটি পৃথক দু’টি ধারায় দায়ের করা হয়। দণ্ডবিধির যে ধারায় মামলাটি রয়েছে সেটা প্রায় শেষের দিকে। আশা করি আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ মামলার রায় ঘোষণা করা যাবে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পৃথক দুই ধারায় আসামির সর্ব্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অপর বিস্ফোরক আইনের মামলাটিও যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিজানুর রহমান ও আনোয়ার আলম নামে দু’জন আসামি এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। একটি মামলা শেষের দিকে রয়েছে, অন্য আরেকটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আশা করি এ দুই মামলার রায়ে আসামিরা বেকসুর খালাস পাবে।’
তবে মামলার বিষয়ে বাদী মঞ্জুর কবিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
মামলার দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তৎকালীন সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. শহিদুল ইসলাম ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) তৎকালীন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ ডা. মেজর শওকত হাসানের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সময় দেওয়ার পরও তারা দীর্ঘদিন আদালতে উপস্থিত হননি। এজন্য ২০১৬ সালের ৫ জুন ওই দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর একই বছরে পুলিশ ওই দুই চিকিৎসক বর্তমানে কর্মরত নেই বলে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন ড. হুমায়ুন আজাদ। হামলার সময় তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ওই হামলার পর হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান।
ওই ঘটনায় পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। এছাড়া একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও অপর একটি মামলা হয়।
২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর এই মামলার বাদী মো. মঞ্জুর কবির মামলাটির বর্ধিত তদন্তের আবেদন করলে ওই বছরের ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। বিভিন্ন সময় মামলাটি তদন্ত করেছেন রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান, সিআইডির পুলিশ ইন্সপেক্টর কাজী আব্দুল মালেক, মোস্তাফিজুর রহমান ও লুৎফর রহমান।
২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর আসামি আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ৫ দফায় বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত এ মামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল ওই মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ওই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
এর আগে, ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে আবুল আব্বাস ভূইয়া ও গোলাম মোস্তফা নামের দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদের অব্যহতি দেওয়া হয়। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলো- জেএমবির সুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাউন, আনোয়ার আলম, হাফিজ মাহমুদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।
আসামিদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু (পলাতক) এবং হাফিজ মাহমুদ মারা গেছেন।
(সৌজন্যে সারাবাংলা।)