হাওর ডেস্ক::
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প থেকে সরে এল সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতেই এ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি ছিল ফ্ল্যাট না দিয়ে নিজস্ব ভিটায় একই টাকা খরচ করে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার। সেজন্য এখন নতুন করে ঘর নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হবে। যাদের ভিটা নেই তাদের পার্শ্ববর্তী খাস জমিতে ঘর করে দেয়া হবে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এর আগে সকালে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
মন্ত্রী জানান, এখন থেকে যেসব সেতু বা অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে সেগুলো স্থানীয় কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা প-িত ব্যক্তির নামে তাদের নামকরণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তা না হলে নদীর নামে নামকরণ করতে হবে।
এ সময় মংলা বন্দরকে সার্বক্ষণিক ড্রেজিংয়ের আওতায় রাখা, সুন্দরবনের জলাশয়সহ পরিবেশ রক্ষা, দেশের সব সড়কের বিষয়ে পরিকল্পনাসহ বেশকিছু প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরেন তিনি।
জমি অধিগ্রহণ স¤পর্কে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ইপিজেড বা এ ধরনের নতুন নতুন আইডিয়া যেগুলো আছে, এসব ক্ষেত্রে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় জমি অধিগ্রহণ নিরুৎসাহিত করতে হবে। মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে আমরা এগুলো করতে চাই না।
সড়কের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চার লেন সড়ক করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একটা নির্দেশ আছে। দেশে যত সড়ক আছে, কতটি সড়ক করবেন, পুরো একটা ম্যাপ করে, ড্রয়িং করে একনেকে জানাবেন। এ নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন সড়ক ও জনপথকে।
তিনি আরও বলেন, আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাস্তার পাশে যখন কাজ করবেন তখন ড্রেন ও জলাধার যেন থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খাল ধ্বংস করবেন না, খাল যেন থাকে।
সড়কের একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে জায়গা রাখতে হবে, যেখানে টয়লেট, প্রসাধন, চা খাওয়া, বিশ্রাম নেয়া- এগুলো করা যায়। এ বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
মংলা সমুদ্র বন্দর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, মংলা বন্দরকে সার্বক্ষণিক ড্রেজিংয়ের আওতায় রাখতে হবে। যেসব নদীতে প্রাণীরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, নিরাপদে খেতে পারে, বাঘ থাকতে পারে, প্রজনন করতে পারে – সেই পরিবেশটা সুরক্ষা করতে হবে। যারা আমাদের সংশ্লিষ্ট, তারা এটা প্রতিপালন করবেন।
তিনি বলেন, হালদায় মাছের পোনা যেখানে ছাড়ে, সুন্দরবনের কিছু খাল আছে যেখানে বাঘ পানি খায়, তারা যেন নিরাপদে পানি খেতে পারে, এসব খাল-নদীতে হাত দেয়া যাবে না।
বিদ্যুতের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, যে এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তারা যেন একটু অগ্রাধিকার পায়। যে এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করলাম, তার আশপাশ অন্ধকার থাকবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ভয়ঙ্কর খিটখিটে একটা ব্যাপার আছে প্রশাসনে। পদ বিন্যাস, পদ সৃষ্টি, নিয়োগ বিধি ইত্যাদি খিটখিটে অনেক বিষয় আছে। এসব বিষয়ে তিনি চান সুসংহত করা হোক। একেবারে শেষ করতে না পারি, কিন্তু এটাকে কমিয়ে আনা। এটা নিয়ে কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী – যোগ করেন এমএ মান্নান।
একনেকে নতুন ১০টি ও সংশোধিত ৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ১৩ প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৪৫৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি (জিওবি) ৯ হাজার ৪৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল ১৫৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ দুই হাজার ৮২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।