1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সাম্প্রতিক রাজনীতি ও একজন সুলতান মনসুর।। মুক্তাদীর আহমদ

  • আপডেট টাইম :: শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৯, ৪.৩৮ পিএম
  • ৩৪০ বার পড়া হয়েছে

জেনারেল জিয়াউর রহমান রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই জেনারেলের দল বিএনপিকে এখন একটি কঠিন অবস্থায় ফেলেছেন একজন অাপাদমস্তক রাজনীতিক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে নির্বাচিত হয়ে জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যোগ দিয়েছেন।
তাঁর এ যোগদানকে বিএনপি নেতৃত্বসহ বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করছেন। অনেকে বিরূপ মন্তব্য করছেন। করাটাই স্বাভাবিক,কারণ অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যেকোনো কাজ সম্পাদন হলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু সকল তর্ক বিতর্ক হওয়া উচিত যুক্তিপূর্ণ ও সুরুচিসম্পন্ন।
সুলতান মনসুরের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে যোগদানকে বিএনপি নেতারা অনৈতিক ও ছলনা বলে অাখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা কি ভুলে গেছেন নিকট অতীতে বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে এমন ঘটনা নতুন নয়। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অাওয়ামী লীগ জোট থেকে নৌকা প্রতীকে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী নজির হোসেন নির্বাচিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন।পরবর্তীতে তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী ধারণ করেছিলেন। তখন কি নৈতিকতার কোন প্রশ্ন ছিলো না।সুলতান মনসুর তো সরকারি দলে যোগ দেননি,জাতীয় সংসদে যোগ দিয়েছেন। সংসদ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বিরোধী জোটের সদস্য হিসেবে স্পীকার ও সংসদ নেতার সহযোগিতা চেয়েছেন। একজন দায়বদ্ধ পার্লামেন্টারিয়ানের এমন অাচরণইতো হওয়া উচিত।
অনেকে বলছেন সরকারের কারসাজিতে তিনি এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সংসদীয় রেওয়াজ ও রীতি,নীতির যারা খোঁজ খবর রাখেন তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন একজন সংসদ সদস্যকে ভাগিয়ে নেওয়ার পর্যায়ে এখন সরকারি দল নেই। সরকার পরিচালনার জন্য অাওয়ামী লীগের কোনো এমপি সংকট নেই। অাসলে এসব মন্তব্য করে সুলতান মনসুরকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। অামি মনে করি, তিনি সংসদীয় রীতিনীতি মেনে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।জনগণ তাঁকে যে দায়িত্ব পালনের জন্য রায় দিয়েছেন তিনি সে রায়কে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁর জোট বা যে দল থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন তারা যদি সংসদে যেতেন তাহলে হয়তো এমন অালোচনা হতো না। কিন্তু একজন তিলে তিলে বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক কর্মী যিনি তার পূর্বতন দলের সঙ্গে মত পার্থক্যে জড়িয়ে প্রায় এক যুগ থেকে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় তিনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে যোগ দিচ্ছেন এটা তো একটি ইতিবাচক দিক। জাতীয় সংসদে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের সংখ্যা যখন দিন দিন কমছে তখন সুলতান মনসুরদের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের জাতীয় সংসদে সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। তাঁর এ সময়োপযোগী পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। হয়তো এর জন্য তাঁকে অারো কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে। যে দল থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সেই দল যদি সংসদে যায়,অার দলের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নেন তখন অাবার নানা সংকট তাঁকে মোকাবিলা করতে হবে।সব কিছু জেনে বুঝেই তিনি সংসদে যোগ দিয়েছেন।রাজনীতিতে নিজের অবস্থান ধরে রাখা এবং জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার মোক্ষম সুযোগটি হাতছাড়া করা কি তাঁর একেবারে অযৌক্তিক? তিনি তো প্রথমবার সংসদে যাচ্ছেন না যে তাঁকে এমপি নামটি লাগাতে হবে।সমালোচনা দোষের নয় কিন্তু সমালোচনাটাও নির্মোহ ও যুক্তিপূর্ণ হওয়া উচিত। সুলতান মনসুর সংসদে বলেছেন তাঁর সরকারি দলের সংসদ সদস্য হওয়ার কথা ছিল কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভিন্ন পরিচয়ে তিনি সংসদে যোগ দিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টভঙ্গি,চিন্তা চেতনা নির্বাচনের অাগে ও পরে তিনি বারবার ঘোষণা দিয়েছেন তারপরও তাঁকে নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বের সমালোচনা কতটুকু গ্রহণযোগ্য।
দল ও জোটের শৃঙ্খলার প্রসঙ্গ এনে গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্ট তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা তারা করতেই পারেন। এটাই সাংগঠনিক প্রক্রিয়া।নিজেদের সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী নিজেরা পদক্ষেপ নেবেন এটা অন্যায় নয়। তবে নিজেদের দলের সীমাবদ্ধতা অার ক্ষুদ্রতার জন্য জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। সংসদীয় রাজনীতির বিকাশ অার গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতার স্বার্থে এখনই রাজনৈতিক দলগুলোকে সংকীর্ণতা পরিহার করে উদার দৃষ্টভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। কৌশল,অপকৌশল অার ভুলের বৃত্তে ঘুরপাক খেলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি অারো সংকটাপন্ন হবে।
এমনিতেই রাজনীতির প্রতি সাধারণের অনীহা দিন দিন বাড়ছে। মেধাবী নতুন প্রজন্ম রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সমাজ ও রাজনীতির প্রতি নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বড় হচ্ছে। যারা রাজনীতিতে অাসছে তারা রাজনীতির মৌল ধ্যান ধারণার ধারে কাছে না গিয়ে ত্যাগের পরিবর্তে ভোগের রাজনীতির প্রতি বেশী অাকৃষ্ট হচ্ছে।রাজনৈতিক বাস্তবতা, সমাজ,দেশ অার রাষ্ট্রকে খন্ডিত চিন্তায় না ভেবে সামগ্রিক টেকসই চিন্তার সময় এখন।রাজনীতিবিদরা যদি সময়ের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হন তখন অরাজনৈতিক শক্তি মাথাচারা দিয়ে ওঠে।দেশে একটি কার্যকর সরকারের পাশাপাশি একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দল থাকা জরুরি। একটি দলের নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা, মাঠ পর্যায়ে সুসংহত অবস্থান অার নেতৃত্বের বিশৃঙ্খলার জন্য জাতির অগ্রযাত্রা থেমে থাকতে পারে না। বাংলাদেশ যে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দূরদর্শী উন্নয়ন কৌশল নিয়ে গভীর অাত্মবিশ্বাসে ছুটে চলছে তাতে অচিরেই একটি উন্নত দেশ হিসেবে অাত্মপ্রকাশ করবে। সংসদীয় রাজনীতির ভুল ত্রুটি শুধরে, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এখন টেকসই ভাবনা জরুরি।
বিক্ষিপ্ত প্রথাগত ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতির যাতাকলে পিষ্ট না করে মানুষকে এখন অাত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে। গতানুগতিক রাজনৈতিক খিস্তিখেউড়ে অতিষ্ঠ হয়ে নতুন প্রজন্ম এখন একটি কর্মসংস্থান বান্ধব মানবিক রাষ্ট্র দেখতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের কর্মী,কার্যক্রম ও কর্মসূচিকে প্রশিক্ষিত,পরিশীলিত ও যুগোপযোগী করে জনপ্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে অাসতে হবে।
(লেখকের ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!