স্টাফ রিপোর্টার::
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তনদী জাদুকাঁটা ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদ পেলেও আজো এলজিইডি দরপত্র প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করেনি। ফলে থমকে আছে এই গণগুরুত্বপূর্ণ সেতুর নির্মাণ কাজ। জাদুকাঁটা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প গত ১৬ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন দেয়ার পর পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেতু নির্মাণ কাজ বিলম্ব হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ৫ লাখ মানুষকে। জেলা সদরে যাতায়াত করতে গিয়ে এক নদীতে ৬ খেয়াঘাট হয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় প্রতিনিয়ত কয়েক হাজার মানুষকে।
সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা যায়, জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তনদী জাদুকাঁটা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় গত ৪৫ বছরের অধিক সময় ধরে তাহিরপুর উপজেলা সহ পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা মধ্যনগরের প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষকে সীমান্তসড়ক হয়ে জেলা সদর সুনামগঞ্জে যাতায়াত করতে গিয়ে জাদুকাঁটা নদীর লাউড়েরগড়-বড়গোপটিলা, ঘাগটিয়া-লাউড়েরগড়, গড়কাটি-বিন্নাকুলি, ঘাগড়া-মোদেরগাঁও, পাঠানপাড়া-মিয়ারচর, সোহালা-আমরিয়া এই ৬টি খেয়াঘাট ব্যবহার করে খেয়া নৌকার ওপর ভরসা করে প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে পারাপাড় হতে হচ্ছে। জাদুকাঁটা নদীর ওপর যে কোন সুবিধাজনক খেয়াঘাট বারাবর একটি সেতু নির্মাণ করা হলে তাহিরপুরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট, উওরাঞ্চলখ্যাত সীমান্তবর্তী বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলী শুল্ক ষ্টেশনে চার চাকার যানবাহন যাতায়াত করেতে পারবে। পার্শবর্তী ধর্মপাশার মধ্যনগর সহ নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার লোকজনও সীমান্তসড়ক ব্যবহার করে জেলা সদর হয়ে সিলেট ও রাজধানী ঢাকায় অনায়াসেই যাতায়াত করতে পারবেন।
সেতু নির্মিত হলে তাহিরপুরের রামসার প্রকল্প টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের পতিত ভুমি, বড়গোপটিলাসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি হাওর অঞ্চলকে পর্যটন সুবিধায় আনতে একটি বড়বাঁধাই দূর হবে এই সেতু নির্মাণ করা হলে। বদলে যাবে এলাকার আর্থ সামাজিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সাংস্কৃতিক, অবস্থার পিছিয়ে পড়ার চিত্র।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, সাবেক উপজেলা পরিষদ আনিসুল হক , বড়দল উওর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন, শ্রীপুর উওর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খসরুল আলম, বাগলী চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক খালেদ মোশারফ সহ উপজেলা বিশিষ্ট জনেরা জানান, জাদুকাঁটা নদীর ওপর যে কোন একটি সুবিধাজনক স্থানে সেতু নিমার্ণ করা হলে উপজেলার বাগলী সহ তিনটি শুল্ক ষ্টেশনের কয়লা চুনাপাথর ব্যবসায়ী পরিবহন শ্রমিক ও তাহিরপুর সহ আশে পাশের উপজেলা গুলোর কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষের দুর্ভোগ কমবে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হবে।
পরিবেশ ও মানবাধিকার উন্নয়ন সোসাইটর প্রধান উপদেষ্টা মজিবুর রহমান বলেন, জাদুকাঁটা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য জেলার বাণিজ্যেক কেন্দ্র বাদাঘাট এলাকাকে সেতু সুবিধার আওতায় আনতে পাঠানপাড়া-মিয়ারচর খেয়াঘাট বরাবর সেতু নির্মাণের দাবিতে ইতিমধ্যে এলাকাবাসী কয়েকদফা মানববন্ধন কর্মসুচী ও প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ , জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদেও প্রশাসক ব্যারিষ্টার এম এনামুল কবীর ইমনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্বারকলিপিও প্রদান করেছেন।
ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতালেব খাঁন বলেন, জাদুকাঁটা নদীর ওপর পাঠানপাড়া-মিয়ারচর খেয়াঘাটে সেতু না হওয়ায় সীমান্তসড়ক সড়ক ব্যবহার কারী তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও ধর্মপাশার মধ্যনগরের গড়ে ৫ লক্ষাধিক লোকজনের জেলা সদরে পণ্য আনা নেয়া ও যাতায়াত করতে গিয়ে ৬টি খেয়া নৌকা পাড় হতে গিয়ে গণভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, জাদুকাঁটা নদীর ওপর ব্রীজ না হওয়ায় বাস, ট্রাক, লেগুনা, সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহন বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাটে আসতে পারছেনা এমনকি প্রতিনিয়ত মোটর সাইকেলে করে জেলা সদরে যাতায়াত করতে অতিরিক্ত ভাড়া ও বিরম্ভনা পোহাতে হচ্ছে কয়েক হাজার লোকজনকে।
২০১০ সালে ১০ নভেম্বর তাহিরপুরের জনসভায় লাখো মানুষের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাদুকাঁটা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এই সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট প্রদান করে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমদ বলেন, জাদুকাঁটা নদীর ওপর সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত, সেতুর দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার, এই সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং পরে মন্ত্রণালয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট প্রদান করেছেন।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং এলজিইডির গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বলেন, ইতিমধ্যে একনেকের সভায় প্রধামন্ত্রীও জাদুকাঁটা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন এখন এলজিইডি টেন্ডার প্রক্তিয়া সম্পন্ন করলে খুব দ্রুতই এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।