১০ হাজার টাকার চুক্তিতে কৃষক নেতা আজাদকে খুন করে ঘাতক শ্রাবণ
বিশেষ প্রতিনিধি::
মাত্র ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে সুনামগঞ্জের হাওর আন্দোলনের নেতা আজাদ মিয়াকে খুন করিয়েছিল তার গ্রামের প্রতিপক্ষ। পুলিশ ভাড়াটে খুনিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে ভাড়াটে খুনি শহরের আরপিন নগর এলাকার শ্রাবনুজ্জামান শ্রাবণও উপস্থিত ছিল। পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান মূল খুনির স্বীকারোক্তিমূলক কথার সূত্র ধরে সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত ব্রিফ করেন। এলাকা নানা বিষয়ে আধিপত্য বিস্তার, মামলাসহ বিভিন্ন ঘটনার জের ধরে গ্রামের উকিল আলী ও পাবেল মিয়াসহ ভাড়াটে খুনি দিয়ে আজাদকে খুন করানো হয়। গত ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের বড়পাড়াস্থ বাসায় ফেরার পথে শহরের পিটিআই সংলগ্ন সড়কে পিছন দিক দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল আজাদকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনদিন পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। আজাদ মিয়া হাওর বাচাও সুনামগঞ্জ বাচাও আন্দোলনের সদর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়।
পুলিশ সুাপার জানান, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের দক্ষিণ আপরপিননগর এলাকার মুখলেছুর রহমানের ছেলে বখাটে শ্রাবণকে জলালপুর গ্রামের পাবেল ও রিপন তাদের গ্রামের প্রতিপক্ষ আজাদ মিয়াকে খুন করার জন্য ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করে। গত ১৪ মার্চ চুক্তির টাকা পরিশোধ করে ওইদিনই আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত হয়। দিনে আক্রমণের চেষ্টা করা হলেও মানুষের উপস্থিতির কারণে পরিকল্পনা বদল করে রাতে আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ৯টায় সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথের রাস্তার পাশে শ্রাবণকে নিয়ে পাবেল ও রিপন আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। আজাদ মিয়া বাসায় যাবার সময় তাকে পিছন দিক থেকে স্টিলের পাইপ দিয়ে আক্রমণ করে শ্রাবণ। পরে তিনজনই পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আজাদ মিয়াকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তিনদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আজাদ। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই সন্দেহভাজন উকিল আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে মূল ঘাতক শ্রাবণকে শহরতলির ব্রাম্মণগাও গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার শহরের বাসা থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত স্টিলের পাইপ উদ্ধার করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ খান জানান, ‘আজাদ মিয়ার সাথে উকিল আলী, পাবেল, রিপনসহ অন্যান্য কয়েকজনের পূর্ব বিরোধ ছিল। এলাকার বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। পাবেল ইতোপূর্বে একটি নারী নির্যাতন মামলার আসামি হয়েছিল, যেটাতে আজাদ মিয়ার হাত ছিল বলে সে মনে করে। এছাড়া গত উপজেলা নির্বাচনের সময় আজাদ মিয়ার ভাইয়ের সাথে কথা কটাকাটি হয় পাবেলের বন্ধু রিপনের। সেদিন রিপনকে মারধর করে আজাদের লোকজন। এ ঘটনায়ও আজাদ মিয়াকে দায়ি করে তারা। এসব কারণেই আজাদকে মারার পরিকল্পনা করে তারা-স্বীকারোক্তিকে আসামিরা বলেছে বলে জানান পুলিশ সুপার।’
হাওর দুর্নীতির প্রতিবাদ করার কারণে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্তে এ সংক্রান্ত কোন কিছু এখনও পাওয়া যায়নি। তবে গভীরভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই ঘটনায় সম্পৃক্ত আরো কয়েকজন সন্দেহভাজন পুলিশের নজরদারিতে আছে।
পুলিশ সুপার বলে মূল ঘাতক ও দুই পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তারের পর আজাদ হত্যার বিষয়টি প্রমাণের কাছাকাছি চলে গেছে পুলিশ। এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের কেউ রেহাই পাবেনা বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু তারেক, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ, পরিদর্শক তদন্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জুর মুর্শেদ, গোয়েন্দা শাখার ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মার্চ রাতে গুপ্ত ঘাতকের অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত হন হাওর আন্দোলন নেতা আজাদ মিয়া। মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে তিনদিন জীবন-মৃত্যুর সদ্ধিক্ষণে থাকার পর ১৭ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। হত্যার ঘটনায় স্থানীয় মোল্লাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হকসহ ১২ জনকে আসামি করে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের বড়ভাই। মামলার পর পুলিশ উকিল আলী নামের এক আসামি গ্রেফতার করে। গত মঙ্গলবার রাতে মূল ঘাতক শ্রাবণসহ আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।