স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার উজানগাঁও গ্রামের শহিদ পরিবারের সন্তান বীরাঙ্গনা পিয়ারা বেগমকে খুঁজে বের করে একটি নলকুপ প্রদান করেছেন সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার। দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক সুনামকণ্ঠে গত ২৬ মার্চ বীরাঙ্গনা পরিবারের সংবাদটি পড়ে তিনি বৃহষ্পতিবার ওই গ্রামে গিয়ে পিয়ারা বেগমের বাড়িতে নলকুপ বসানোর ব্যবস্থা করে আসেন। খুপড়িঘরে মানবেতর জীবনযাপনকারী বীরাঙ্গনা পিয়ারা বেগমকে বসবাসের জন্য উন্নত ঘরেরও প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন।
এদিকে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে বীরাঙ্গনাকে খুজে বের করে নলকুপ দিয়ে আসায় শামীমা শাহরিয়ার এমপিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের সুধীজন।
সদ্য বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পাওয়া সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার উজানগাঁও গ্রামের শহিদকন্যা হতদরিদ্র বীরাঙ্গনা পিয়ারা বেগম (৭২) গ্রামে একটি খুপড়িঘরে অসুস্থ স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। তার স্বামী বাছন আলীও একাত্তরের মুক্তিমাঝি। দুই ছেলের দিনমজুরির আয়েই তার সংসার চলে। ১৯৭১ সনে গ্রামের রাজাকারদের হাতে পিয়ারা নিজের তিন বোনের সম্ভ্রম হারানোসহ তার বাবা, ভাই, চাচা, মামাসহ সাতজন স্বজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাবার পর তিনি চরম আতœগ্লানিতে ভোগছেন। পরিবারের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মিটাতে হচ্ছে গ্রামেরই এক রাজাকারের নলকূপ থেকে। স্বীকৃতির পর রাজাকার পরিবারের উপহাস বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অপমানে তিনি প্রায়ই মন খারাপ করে চুপসে থাকতেন। এ নিয়ে গত ২৬ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার এই প্রতিবেদককে ফোন করে বীরাঙ্গনার বাড়ি যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৃহষ্পতিবার ভোর ৬টায় তিনি সুনামগঞ্জ থেকে জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা শাল্লার উজানগাঁও গ্রামের দিকে রওয়ানা দেন। সকাল ৮টায় গিয়ে তিনি সেখানে উপস্থিত হন বীরাঙ্গনার খুপড়ি ঘরে। তাকে কাছে পেয়ে আপ্লুত হন বীরাঙ্গনা পিয়ারা ও তার পরিবার। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার খোঁজ খবর নিয়ে কোন স্থানে নলকূপ বসালে তার উপকার হয় সেই জায়গা দেখানোর অনুরোধ করলে বীরাঙ্গনা পিয়ারা জায়গা চিহ্নিত করে দেন। পরে সেখানে শ্রমিক লাগিয়ে গর্ত খুড়ে নলকূপ বসানোর প্রস্তুতি শুরু হয়।
জানা গেছে বুধবার রাতে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শামীমা শাহরিয়ার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। এ সময় শামীমা শাহরিয়ার জেলা প্রশাসককে সংসদ সদস্যের বরাদ্দ থেকে একটি নলকূপ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ তার বক্তব্যে বীরাঙ্গনার নলকূপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কালের কণ্ঠে সংবাদ করায় প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানান। তিনি বক্তব্যেই সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার আজ বৃহষ্পতিবার বীরাঙ্গনার বাড়িতে গিয়ে নলকূপ বসিয়ে আসবেন বলে সুধীজনের সামনে উল্লেখ করেন। জেলা প্রশাসক বলেন, শহিদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা পিয়ারা বেগমের বাড়িতে আমি একাধিকবার গিয়েছি। তিনি মানবতের জীবনযাপন করেন। কিন্তু তিনি যে রাজাকারের বাড়ি থেকে এনে নলকূপের পানি পান করেন সেটা জানা ছিলনা।
সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার বলেন, কালের কণ্ঠ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শুরু থেকেই তার অবস্থান ষ্পষ্ট করে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছে। কালের কণ্ঠ এই সংবাদটি প্রকাশ না করলে আমরা বীরাঙ্গনার দূরাবস্থা ও রাজাকারের বাড়ি থেকে অপমান সয়ে নলকূপের পানি পানের বিষয়টি জানতামনা। আমি আমার বরাদ্দ থেকে জেলা প্রশাসককে একটি নলকূপ আগাম বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনিও সাড়া দেন। বৃহষ্পতিবার সকালে গিয়ে আমি স্থান চিহ্নিত করে নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছি। খুপড়িঘরে থাকা এই বীরাঙ্গনাকে বসবাসের জন্য শিগ্রই নতুন ঘরও দেব আমরা।
বীরাঙ্গনার বাড়ি থেকে ঘুরে এসে শামীমা শাহরিয়ার এমপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আবেগঘন স্টেটাস দেন। তিনি লিখেন ‘আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস তোমাদের কাছে ঋণী। এ ঋণ কি করে শোধ করি? শাল্লা উপজেলার উজানগাঁওয়ের পিয়ারা বেগম। মুক্তিযোদ্ধা। চরম আত্মত্যাগী। আশা করি জলের তৃষ্ণা নিবারনে আর কষ্টের ঢেকুর গিলতে হবে না। আজ ভোরেই পৌঁছতে পেরেছি বীরাঙ্গনার বাড়িতে। কৃতজ্ঞতা জানাই জেলা প্রশাসক জনাব আব্দুল আহাদ সাহেব ও প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সাহেবকে। যারা আমাকে তাৎক্ষণিক সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ কালের কণ্ঠ ও শামস শামীম’ উল্লেখ করে তিনি তার স্টেটাস শেষ করেন।