বিশেষ প্রতিনিধি ::
ধান পাকতে শুরু করেছে হাওরে। আগাম চাষ হয়েছে এমন কয়েকটি হাওরে সবুজের খোলস ছেড়ে হলুদাভ রঙ ধারণ করেছে সোনালী ধান। শ্রম ঘামে ফলানো সোনার ধানে সোনা রোদের ঝিলিক দেখে হাসছে কৃষক। এবারও গত বারের মতো বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা। কয়েকটি হাওরে দেশি বোরোধানের আদিজাত ধানও কাটা শুরু হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ২০১৮-২০১৯ বোরো মওসুমে হাওরে প্রায় ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ধানের শীষ আসার সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কয়েকটি প্রজাতির ধানের ফলনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে সার্বিকভাবে সব হাওরেই এবার ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবারও প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন তদারকিতে আছেন প্রশাসন ও পাউবো’র কর্মকর্তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন জেলার সব উপজেলারই বিভিন্ন হাওরে ধান পাকতে শুরু করেছে। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহেই ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। তবে বৈশাখের শুরু থেকেই এবার ধান কাটার ধুম পড়বে বলে জানান তারা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এক অনিশ্চয়তার মুখে বরাবরের মতো এবারও ধান চাষ করেছেন কৃষক। বিআর ২৮/২৯ প্রজাতির ধানই হাওরে চাষ হয়েছে বেশি। অল্প আদিজাতের বোরো ধান এবং প্রায় ৪০ হাজার হেক্টরের মতো হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে হাওরে। সব প্রজাতির ধানের রঙেই এখন হলুদবরণ লক্ষ করা গেছে। সময় মতো শ্রমিক পাওয়া গেলে হাওরের সম্পূর্ণ সোনালী ধান কৃষকরা গোলায় তোলতে সক্ষম হবেন বলে জানান তারা।
জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের গ্রাম বুরাখালির কৃষক আব্দুস সনর মিয়া বলেন, আমাদের হাওরের বিভিন্ন কান্দায় ধান পাকতে শুরু করেছে। সবুজ ধান এখন হলুদ রূপ নিচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই অনেকেই ধান কাটতে পারবেন। তবে শ্রমিক সংকটের কথা ভেবে কৃষকরা উদ্বিগ্ন বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বশির উদ্দিন সরকার বলেন, আমি শুক্রবার দিরাই-দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরেছি। ধান পাকতে শুরু করেছে। আশা করি এক সপ্তাহ পরেই অনেক হাওরে আগাম জাতের ধান কাটতে পারবেন কৃষকরা। এবার বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুরের বৃহত্তম নলুয়া ও মইয়ার হাওর ঘুরেছি। কান্দা লাগোয়া হাওরের জমির ধান সবুজের খোলস ছেড়ে হলুদ রূপ নিচ্ছে। অনেকে আদিজাতের ধান কাটতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, এবারও চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাতদিন হাওরে অবস্থান করে আমরা বাঁধের কাজ শেষ করেছি। কৃষকের ফসল গোলায় তোলা না পর্যন্ত আমরা থামবো না।