রাজন চন্দ, তাহিরপুর
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তঘেষা মাহারাম নদীর উৎস মুখ থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। আর এই বালু উত্তোলনের ফলে এ উপজেলার বেশক,টি হাওরের বোর ফসল ঘরে তুলতে শংকায় দিন কাটাচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষক অপরিদেকে বেশক,টি গ্রাম রয়েছে নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি বালু উত্তোলনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলেও প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করেনি।
উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নে মাহারাম নদীর উৎস মুখটির অবস্থান। ভারত থেকে আসা সীমান্ত নদী যাদুকাটার প্রশাখা মাহারাম নদীতে এসে মিশেছে। মাহারাম নদীতে এক সময় পাহাড়ি ঢল প্রবল ¯্রােতে প্রবাহিত হত। ফলে অকাল বন্যায় উপজেলার মাটিয়ান, সমসা,বলদা,লোবা হাওর সহ ভাটি এলাকার প্রায় সবগুলো ছোট বড় হাওর পানিতে তলিয়ে যেতো। তখন অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য মাহারাম নদীতে বেড়িবাঁধ তৈরিতে উদ্যোগ নেয় উপজেলাবাসী।
প্রতি বর্ষকালে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও নুড়িপাথরের স্তুপে একপর্য়ায়ে মাহারাম নদীটি প্রাকৃতিকভাবে ভরাট হওয়ায় উজান থেকে পানি এসে হাওর তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্যপট পাল্টে যায়। প্রাকৃতিকভাবে বালু বাঁধ সৃষ্টি হওয়ায় বিগত ২৯ বছর ধরে মাহারাম নদীতে সরকারি খরচে আর বেড়িবাঁধ দিতে হচ্ছে না। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা মাহারাম নদীর উৎসমুখ থেকে বালু উত্তোলন করায় প্রাকৃতিক বাধঁটি ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। আর মাহারাম নদীর উৎস মুখের বাধঁটি ভেঙ্গে গেলে এ অঞ্চলের কৃষকদের দূর্ভোগের সীমা থাকবে না বলে আশংকা করেছেন উপজেলাবাসীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বৃহৎ জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানের সামনে দিন দুপুরেই মাহারাম নদী ও বড়গোপের মাঝখানে চিলা বাজারের সামনের স্থানে বালু উত্তোলনে মহোৎসবে ব্যাস্ত রয়েছে এলাকার একটি প্রভাবশালী বালুখেকো চক্র। চক্রটি নদীর মুখ থেকে অর্ধশতাধিক মাহিন্দ্রা ট্রাক(লরি) দিয়ে বালু ভর্তি করে অন্যত্র বালির বড় বড় স্টক করা হচ্ছে। যা আসছে বর্ষাকালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩০টাকা ফুট হারে বিক্রয় করবে।
নদীতে বালু উত্তোলনকারী কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিদিন স্থানীয় ১০-১২টি গ্রুপ দলবদ্ধ হয়ে শত শত নারী পুরুষ মিলে নদীর তীরে বালু উত্তোলন করছে। আর এসব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উত্তর বড়দল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নোয়াজ আলী মেম্বার, উত্তর বড়দল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম,সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ,একই এলাকার তাজু মিয়া, শাহ আলম মিয়া, অয়েজ উদ্দিন, কালা মিয়া সহ স্থানীয় প্রভাবশালী আরো কয়েকজন নেতা।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, মাহারাম নদীতে বালু উত্তোলনের বিষয়টি শুনেছি। তাদের কে নিষেধ করার পরও তারা বালু উত্তোলন করা বন্ধ করছে না।
মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক সাঞ্জব উস্তার জানান, এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে মাটিয়ান হাওরসহ উপজেলার সকল হাওরগুলোর ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তর বড়দল আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম বলেন,আমি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার একটি প্রদিপক্ষ দল আমার বিরুদ্ধে বালু উত্তোলনের বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উত্তর বড়দল ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য নোয়াজ আলী বলেন, বালু উত্তোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। মাহারাম গ্রামের কিছু মানুষ তাদের রেকর্ডের জমি থেকে বালু উত্তোলন করছিল, এখন বন্ধ রয়েছে।
বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আমির উদ্দিন জানান, মাহারাম নদীতে কিছু অসাধু ব্যাক্তি বালু উত্তোলন করছিলো। সংবাদ পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে আজ সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক সভায় কথা হয়েছে। আমি সহ তাহিরপুর থানার ওসি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেয়া হবে।