বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ডাকুয়ার হাওরের ভেঙ্গে যাওয়া ফসলরক্ষা বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি ভরাট করেছে সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের যুবকেরা। মোহনপুর যুব কল্যাণ পরিষদের তরুণেরা উদ্বিগ্ন কৃষকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে শনিবার সকাল থেকে দিনব্যাপী ডাকুয়ার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ দুটি মাটি ভরাট করে কৃষকদের উদ্বেগ দূর করে। এখন এই হাওরের প্রায় ১০০ হেক্টর জমির ধান সুরক্ষিত বলে জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা।
জানা গেছে ২০১৮ সনে ডাকুয়ার হাওরকে দুই ভাগ করে মোহনপুর-কান্দাগাও পর্যন্ত পোনে এক কোটি টাকা ব্যয় করে একটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রাক্কলণ অনুযায়ী কাজ না করে তৎকালীন পিআইসির সদস্যরা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বরাদ্দের অর্থ নয়ছয় করেন। এবার এই বাঁধটিতে কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। গতবারের বাধের দুটি অংশের বেশ কিছু অংশ ভাঙ্গা ছিল। এই অংশ দিয়ে পানি ডুকে ফসলহানির আশঙ্কায় ছিলেন কৃষক। কৃষি বিভাগের মতে এই হাওরে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে।
কৃষকরা জানান, বাধের দুটি ভাঙ্গা অংশ মেরামত করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার ধর্ণা দিয়েছেন কৃষকেরা। কিন্তু তিনি কৃষকদের কোন সহযোগিতা করেননি। শেষ পর্যন্ত মোহনপুর গ্রামের যুবকল্যাণ পরিষদের সদস্যরা উদ্বিগ্ন কৃষকের দুশ্চিন্তা দূর করতে নিজেরাই উড়া কোদাল নিয়ে শনিবার দিনভর বাধে কাজ করেছেন।
জানা গেছে বাধের ভাঙ্গা দুটি অংশ নিয়ে মোহনপুর, নোয়াগাও, কান্দাগাও, পৈন্দাসহ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। কৃষকদের এই উদ্বেগের খবর পেয়ে মোহনপুর যুব কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাধের সংস্কার কাজ শুরু করে শনিবার। শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ১০-১২ জন যুবক স্বেচ্ছাশ্রমে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের দুটি ভাঙ্গা অংশে মাটি ভরাট করে বাঁধকে সুরক্ষিত করেন। কৃষকরা যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমের কাজে প্রশংসা করেছেন।
মোহনুপর যুবকল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি তানভির আহমদ জনিক বলেন, এবছর ডাকুয়ার হাওরের ফসলরক্ষায় কোন প্রকল্প নেওয়া হয়নি। গত বছর নেওয়া প্রকল্পের বাধে দুটি অংশে বড় ভাঙ্গন রয়েছে। এই ভাঙ্গন দিয়ে বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন কৃষক। আমরা মোহনপুর যুব কল্যাণ পরিষদের সদস্যবৃন্দ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধের ভাঙ্গা অংশে মাটি ভরাট করে দিয়েছি। তিনি বলেন, অতীতেও আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্বিগ্নে যাতায়াতের জন্য গ্রামের ভাঙ্গা সড়কও সংস্কার করে দিয়েছি। তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানকে বারবার বলার পরও তিনি বাধ মেরামতে কোন উদ্যোগ নেননি।
মোহনপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য শামসুন্নুর বলেন, মোহনপুর গ্রামের যুবকেরা অতীতেও মানুষের উপকারে কাজ করেছে। স্বেচ্ছায় রাস্তায় মাটি ভরাটসহ এলাকায় মাদকবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে তারা প্রশংসা অর্জন করেছে। শনিবার তারা হাওরের ফসলরক্ষায় বাঁধের দুটি অংশে স্বেচ্ছায় মাটি ভরাটের কাজ করেছে।
স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধের কাজে অংশ নেন মোহনপুর যুব কল্যাণ পরিষদ এর সিনিয়র সহ সভাপতি তানভীর আহমদ জনিক, সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম সেলিম প্রবাসী তাজ উদ্দিন স্বাধীন মিয়া, আফিজ মিয়া,আমিনুল ইসলাম পাঠান,নুর আহমদ,সামীম আহমদ শাফিজ,মমিন আলী, শাহজাহান, শামির, জামিল ছাইফুল, স্বাধীন মিয়াসহ কমিটির অনেক সদস্য বৃন্দ।