স্টাফ রিপোর্টার::
দিরাই ও জগন্নাথপুরে কাল বৈখাশী ঝড়ে কয়েক শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঝড়ের পর দুটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অন্তত ৩০টি খুটি ঝড়ে উফরে পড়েছে। তাছাড়া ঝড়ের সময় শিলাবৃষ্টিতে দিরাই, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও সদর উপজেলায় সরকারি হিসেবে অন্তত ১০৩০ হেক্টর জমির পাকা বোরো ফসল নষ্ট হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় গাছ-গাছালিও ঝড়ে পড়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে দিরাই উপজেলায়ই কালিয়াকোটা ও উদগল হাওরে অন্তত আড়াই হাজার হেক্টর জমির পাকা বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জেও কাল বৈশাখি ঝড়ে কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার ওপর দিয়ে কাল বৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। এতেই ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আধাঘন্টাব্যাপি কাল বৈশাখী ঝড়ে জগন্নাথপুর পৌরশহরের ইকড়ছই, হবিবনগর, ভবানীপুর, যাত্রাপাশা, জগন্নাথপুর, হবিবপুর, কেশবপুর, লুদরপুর, ইসহাকপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক কাঁচাঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্যক কাঁচা বসতঘর। উড়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ির টিনের চাল। পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্টানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জগন্নাথপুরের আনাচে-কানাছে হাজারো গাছ গাছালি উপড়ে পড়ে আছে। জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কে শতাধিক গাছ ভেঙে সিলেট থেকে আসা জগন্নাথপুরের বিদ্যুতের ৩৩ হাজার কেভি সংযোগ লাইনে পড়ে তার ছিড়ে পড়ে আছে অসংখ্য স্থানে। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ঝড়ের সঙ্গে সামান্য শিলাবৃষ্টি বয়ে যাওয়ায় পাকা বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
এদিকে একই সময়ে দিরাই উপজেলায় কালবৈশাখি ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। ঝড়ে টিনশেড ঘর গাছপালা সহ বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উপজেলায় অন্তত ২০টি বিদ্যুতের খুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সকাল থেকেই বন্ধ আছে। শিলাবৃষ্টিতে এ উপজেলায়র উদগল ও কালিয়াকোটা হাওরে অন্তত আড়াই হাজার হেক্টর জমির পাকা বোরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রফিনগর, ভাটিপাড়া, জগদল, সুজানগর, করিমপুর, চরনারচরনসহ কয়েকটি ইউনিয়নে কালবৈশাখি ঝড়ে অন্তত শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে। ঝড়ের সময় গাছ ভেঙ্গে বিদ্যুতের অন্তত ২০টি খুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যে কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ সকাল থেকেই বন্ধ আছে। দিরাই বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায় সুনামগঞ্জ থেকে আসা ৩৩ হাজার কেবি লাইনের খুটিসহ বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৩৩ হাজার কেবি লাইন সহ সবগুলো লাইন মেরামত করতে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরপাড়ের কৃষক নেতা হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কাল বৈশাখী ঝড়ের থান্ডবে নলুয়া হাওরপাড়ের ভুরাখালি, দাসনাগাঁও, চিলাউড়া, সমদলসহ বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্যা বসতবাড়ির বিধ্বস্ত হয়েছে। ওড়ে গেছে ঘরের টিনের চাল। ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বোরো ফসলের। পাকাধান জমিনেই পড়ে গেছে। তিনি বলেন, এমনতিতেই এবার ব্রি-২৮ জাতের ধানের চিটা মড়ক থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে শিলাবৃষ্টিতে আরোও ক্ষতির সম্মুখিন হলেন কৃষকরা।
জগন্নাথপুর উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম বলেন, কাল বৈশাখী ঝড়ে জগন্নাথপুরের বিদ্যুৎ খুটি ও তার ছিড়ে গেছে। অসংখ্যা গাছ গাছালি বিদ্যুতের তারে পড়ে আছে। জগন্নাথপুর-সিলেট সংযোগ লাইনে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি স্থানে বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ে রয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখতে কাজ করছি। তবে আজকে (গতকাল) বিদ্যুৎ সংযোগ হয়তো পাওয়া যাবে না।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, কাল বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে।
দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ঝড়ে আমার উপজেলায় কয়েকশ কাচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি হাওরে পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বীরগাও এলাকায়ও ঝড়ে কয়েকটি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ উপজেলায়ও পাকা বোরো ধান শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. বশির আহমেদ সরকার বলেন, শিলা বৃষ্টিতে দিরাই উপজেলায় ১০০০ হেক্টর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অন্য উপজেলায় ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি।