বিশেষ প্রতিনিধি, তাহিরপুর:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সড়ক দূর্ঘটনার নামে বেপরোয়া গতির পিকআপ-মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের লাশের সংখ্যা বেড়েই চলছে।, সর্বশেষ গত মঙ্গলবার শিউলী রাণী রায় (১২) নামের পঞ্চম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীর পিকআপের ধাক্কায় নিহত হলে বিদ্যালয়ে তার আর প্রথম সাময়িক পরীক্ষাই দেয়া হয়নি। মঙ্গলবার পরীক্ষার শুরুর পুর্বে স্কুলের সামনের সড়কে পিকআপের ধাক্কায় ওই স্কুল ছাত্রী মাথা ও শরীর থেতলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
শিউলী উপজেলার বাদাঘাট উওর ইউনিয়নের গড়কাটি গ্রামের হতদরিদ্র প্রদীপ চন্দ্র রায়ের মেয়ে ও গড়কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। এ নিয়ে মাস ছয়েকের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনার নামে লাশের মিছিলে তাহিরপুরেই যুক্ত হল তিন স্কুল শিক্ষার্থীর জীবন।
সড়ক দুর্ঘটনায়র আশংকায় উদ্ভিগ্ন লোকজন জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসে লাউড়েরগড়-টেকেরঘাট সীমান্ত সড়কে রজনী লাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তানজিমা বেগম(১০) বিদ্যালয়ে যাবার পথে বেপরোয়া মোটর সাইকেলের ধাক্কায় বিদ্যালয়ের সামনেই নিহত হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে পিএসসি পরীক্ষায় যাবার পথে বিন্নাকুলি -লাউড়েরগড় সড়কে দুই অটো রিক্সার মুখোমুখি ধাক্কায় আবদুর রহিম নামের আরো এক পিএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়।,
জানা গেছে, উপজেলার গড়কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম সমাময়িক পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি থেকে বেলা সোয়া ১২টায় শিউলী বেড়িয়ে যায়।
বিদ্যালয় থেকে ফের কলম আনতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হওয়ামাত্র সড়কের অপর পাশ থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা বালু বোঝাই পিকআপ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এসময় সড়কেই রক্ষার্থ হয়ে মাথা ও শরীর থেতলে তার অকাল মুত্যু ঘটে।
দুর্ঘটনার পর চালক উপজেলার বারহাল গ্রামের মনা মিয়া শিকদারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন শিকদার পিকআপ সহ দুই হেলপারকে ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়।,
এদিকে স্কুল ছাত্রী নিহতের ঘটনায় পিকআপে থাকা চালকের দুই হেলপারকে স্কুলের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয় জনতা আটক করে তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশে সোপর্দ করেছে।
বুধবার উপজেলার গড়কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, শিউলী হতদরিদ্র পরিবারের জন্ম নেয়া এক মেধাবী ছাত্রী ছিল, তার এ মৃত্যুতে স্কুলের সহপাঠি সহ গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।,
তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর জানান, এ ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে চালক সাদ্দাম ও তার অপর দুই হেলপার উপজেলার ননাই গ্রামের মগবুল হোসেনের ছেরে নুর মোহাম্মদ একই গ্রামের রহিছ মিয়ার ছেরে হক মিয়া সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতেই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এলাকার লোকজনের অভিযোগ তাহিরপুরের মত গ্রামীণ জনপদে বেপরোয়া মোটরসাইকেল ও পিকআপের ধাক্কায় একের পর এক স্কুল ছাত্রের সড়ক দূর্ঘনার নামে অকাল মৃত্যু হলেও এসব ঘাতক চালকদের রক্ষায চলে আড়ালে টাকার খেলা।
এলাকার লোকজন আরো জানান, ভাড়ায় চালিত গ্রামীণ জনপদ সুনামগঞ্জ জেলা সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ , জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর , দিরাই , শাল্লা, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুর, ছাতক উপজেলা , মদ্যনগর থানা সদর সহ গোটা সুনামগঞ্জ জেলায় চলাচলকারী শতশত মোটর সাইকেল ও পিকআপ নামের যানের নেই কোন ধরণের লাইসেন্স তেমনি অধিকাংশ চালকরাও অপ্রাপ্ত বয়স্ক এমননি তাদেরও যানচালানোর কোন ধরনের লাইন্সে নেই।, যেকারনে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের লাশের সংখ্যা বেড়েই চলছে।