স্টাফ রিপোর্টার::
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে যাওয়া হলোনা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সক্রিয় নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট সুরেশ দাশের। সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সক্রিয় ও প্রভাবশালী এই আইনজীবী বৃহষ্পতিবার আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সিলেটে একটি অটোরিক্সাতে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সিলেট ওমেনস মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে সুনামগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকগণ তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোককর্মসূচি পালন করেছে।
অ্যাডভোকেট সুরশে চন্দ্র দাশ। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সংগঠিত গণহত্যাকা-ে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন এই হলের উপস্থিত সকল ছাত্রকে ছাদের উপর নিয়ে লাইন করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে সেই লাইনে তিনিও ছিলেন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ায় তিনি রক্ষা পান। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী চলে যাবার পর আহত সুরেশ দাশ চেতনা ফিরে পেলে রক্তাক্ত অবস্থায় কোনক্রমে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আজীবন প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এই মানুষটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সিনিয়র ও মেধাবী আইনজীবী ছিলেন।
অ্যাডভোকেটর সুরেশ চন্দ্র দাশের পরিবার সুত্রে জানা গেছে আওয়ামী লীগের আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলনে অংশ নিতে তিনি বৃহষ্পতিবার বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট হয়ে রওয়ানা দেন। সিলেট জিন্দাবাজার এলাকায় একটি অটোরিক্সায় তিনি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে তাৎক্ষণিক পার্শবর্তী সিলেট ওমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই খবর সুনামগঞ্জে পৌঁছার পর শোকের ছায়া নেমে আসে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি প্রগতিশীল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নয়াগাও (রহমতপুর) গ্রামের মৃত ঠাকুর চাদ ও মাতা জানকি বালা দাশের সন্তান সুরেশ দাশ ১৯৪৫ সনে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ালেখা করে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা বারে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছাত্র জীবনে তিনি বামপন্থী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকলেও শিক্ষাজীবন শেষে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এক নেতা হিসেবে সবাই তাকে চিনে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রতিটি কর্মসূচিতেই তিনি উপস্থিত থেকে তরুণদের উজ্জীবিত করতেন। রাজনীতিতে ভালো মানুষের স্থান করে দিতে নিরন্তর চেষ্টা করেছেন তিনি।
এদিকে বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, আইন ও সংসদ বিষয়ক কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল, সুনামগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আবু সুফিয়ান, সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপল, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।