মৃতভেবে সাংবাদিককে ফেলে যায় নির্জন স্থানে: প্রধান হামলাকারী গোপাল আটক
বিশেষ পতিনিধি::
দৈনিক সুনামকণ্ঠের শাল্লা উপজেলা প্রতিনিধি ও হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সেনের উপর নৃশংস হামলা করেছে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ফেরার পথে জয়পুর ও নিয়ামতপুর গ্রামের মধ্যবর্তী নির্জন স্থানে বেধড়ক মার ধর করে মৃত মনে করে পালিয়ে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা তার ব্যবহৃত লেপটপ ও দুটি মোবাইল ফোনসহ নগদ ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে এলাকার কয়েকজন লোক তাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সদর হাসপাতালের ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে রেফার্ড করার নির্দেশ দিলে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে সদর হাসপাতালেই রাখার অনুরোধ জানান। কয়েক মাস আগে আনন্দপুর স্কুলের দফতরি কর্তৃক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই তার উপর হামলা হয়েছে বলে জানান স্বজনরা। এদিকে রাতেই হামলাকারী গোপাল রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে আনন্দপুর গ্রামের গোপাল রায় আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণি পড়–য়া এক এক হতদরিদ্র শিশু কন্যাকে কয়েক মাস আগে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সাংবাদিক জয়ন্ত সেন এ নিয়ে একটি রিপোর্ট করেন। গোপালের ভয়ে পরে ওই মেয়েকে অন্যস্কুলে ভর্তি করান তার বাবা। অসহায় পিতা সংশ্লিষ্ট দফতরে দফতরে আবেদন করার পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় সাংবাদিক জয়ন্ত অসহায় ওই ছাত্রীর পক্ষে সংবাদ করায় এবং তার পিতাকে সহযোগিতা করায় ক্ষুব্দ হয় গোপাল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। উল্লেখ্য গোপালকে গত ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন স্কুলের ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট দিলে প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। এছাড়াও গোপাল গ্রামের স্কুলের জায়গা দখল করেও স্থায়ী বসতঘর নির্মাণ করায় সাংবাদিক জয়ন্ত প্রতিবাদ করেছিলেন। এর জের ধরে একই গ্রামের রিংকু রায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে কিছুদিন আগে সংঘর্ষে জড়ালে সাংবাদিক জয়ন্ত শাল্লা থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে ফোনে অনুরোধ করেন। ওই ঘটনায় গোপাল রায়ের নির্দেশে রিংকু রায় সাংবাদিক জয়ন্ত সেনের উপর হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে।
সাংবাদিক জয়ন্ত সেনের পরিবার জানায়, মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ থেকে বাড়িতে যান জয়ন্ত। বাড়িতে তার যাবার খবর পেয়ে গোপাল রায়, রিংকু রায়, ইন্দ্ররায়সহ কয়েকজ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাংবাদিক জয়ন্ত সেনকে গিয়ে তার বাড়িতে ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সুনামগঞ্জে আসার পথে আগেই ওৎ পেতে থাকা এই লোকজন নিয়ামতপুর ও জয়পুর নামক স্থানে তাকে বেধড়ক মারধর করে। তার ডান পা ভেঙ্গে দেয়। মাথা, গলা, কাদ ও বুকে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তিনি লুটিয়ে পড়েন। নির্জন স্থানে হামলা করে সন্ত্রাসীরা তাকে মৃত ভেবে চলে যায়। এলাকার লোকজন বাড়ি আসার পথে তাকে সংজ্ঞাহীন দেখতে পেয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করিয়ে তার ভাতিজা সাগর সেনকে খবর দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিশ্বজিৎ গোলদার তাকে প্রথমে সিলেটে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করতে চাইলে জেলার কর্তব্যরত সাংবাদিকরা সুনামগঞ্জে রেখেই তাকে চিকিৎসার অনুরোধ জানালে সুনামগঞ্জেই তার চিকিৎসা চলছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সাংবাদিক জয়ন্ত সেন সঙ্কামুক্ত নন।
জানা গেছে মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি যাবার পরই তার পিছু নেয় গোপাল রায়ের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। এসময় সাংবাদিক জয়ন্ত সেন পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ, ওসি আশরাফুল ইসলাম, দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক বিজন সেন রায়, কালের কণ্ঠ ও একাত্তর টিভির সাংবাদিক শামস শামীমকে ফোনে তার উপর আক্রমণের আশঙ্কার কথা জানান। সাংবাদিক শামস শামীম সাথে সাথে শাল্লা থানার ওসিকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করে তাকে নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খানও স্থানীয় ওসিকে বিষয়টি দেখার নির্দেশন দেন।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিশ্বজিৎ গোলদার বলেন, ডান পা ভেঙ্গে গেছে। মাথা, গলা, কাদ ও বুকেও আঘাত আছে। তাকে নিবীরভাবে দেখছি আমরা।
শাল্লা থানার ওসি মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক জয়ন্ত আমাকে মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি ফোনে অবগত করেছিলেন। আমি দুষ্কৃতিকারীদের আমার অফিসার দিয়ে তাকে বিরক্ত না করার জন্য জানিয়ে দিয়েছিলাম। এরপরও তার বিরুদ্ধে এই আক্রমণ মেনে নেওয়া যায়না। আমরা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেব। তবে রাতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযান পরিচালনা ও একজনকে আটকের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, সাংবাদিক জয়ন্ত সেনের উপর হামলার ঘটনাটি দুঃখনজক। আমরা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেব।