হাওর ডেস্ক ::
বিশ্বকাপের বাকি আর ২২ দিন। তার আগে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজকে মোক্ষম উপলক্ষ মানছে বাংলাদেশ, যেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মঙ্গলবার ডাবলিনে তাদের হারিয়েই দারুণ শুরু হয়েছে মাশরাফি মুর্তজাদের। বিশ্বকাপের এই প্রস্তুতি মঞ্চে সব বিভাগে নিজেদের সেরাটা দিয়ে ৮ উইকেটে জিতেছে দুরন্ত বাংলাদেশ। এই জয় নিশ্চিতভাবে সব ভয়কে একেবারে উড়িয়ে দিয়ে তাদের আত্মবিশ্বাসকেও বাড়িয়ে দিলো বহুগুন।
এটি নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সিরিজ বলেই হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল নিয়েই আয়ারল্যান্ডে এসেছে। এই দলে বিশ্বকাপের অর্ধেক খেলোয়াড় না থাকলেও পেস আক্রমণে সেরারাই আছেন- কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, শেলডন কটরেল, জেসন হোল্ডারদের নিয়ে বিধ্বংসী পেস আক্রমণ ক্যারিবিয়ানদের। এই আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেমন করে তার অপেক্ষায় ছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। তারা যে পাত্তা পায়নি ম্যাচ শেষে বলে দেওয়া যায়।
বিস্ময় নয়, সত্যিই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ক্যারিবিয়ান পেসারদের কোনও সুযোগ দেননি। মঙ্গলবার বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি খুব ভালো করেই এই চার পেসারকে মোকাবেলা করেছে। শুধু কি ওপেনাররা! মুশফিক-সাকিব যেভাবে এগিয়ে এসে গ্যাব্রিয়েল-কটরেলদের খেললেন, সেটাও অবিশ্বাস্য। বিশ্বকাপের আগে এমন বিধ্বংসী মনোভাব ড্রেসিংরুমে নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দেবে।
৪৫তম ওভারের শেষ বলে কটরেলকে যখন সোজা ব্যাটে বাউন্ডারি মারলেন সাকিব, তখনই বাংলাদেশ পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। হাতে ৮ উইকেট এবং ৩০ বল রেখে এমন জয়কে অবিশ্বাস্য হিসেবে আখ্যায়িত করাই যায়!
তামিম শুরুতে কিছুটা স্থির থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের গতি বাড়ান। অন্যদিকে সৌম্য পাত্তাই দেননি গ্যাব্রিয়েল-কটরেলদের। ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড ১৭০ হলেও বিদেশের মাটিতে ১৪৪ রানের আজকের ওপেনিং জুটি ছাড়িয়ে গেছে আগের অর্জনকে। বিদেশের মাটিতে আগে ১৩৭ রানের সর্বোচ্চ জুটি ছিল কেনিয়ার বিপক্ষে হায়দরাবাদে। যা গড়েছিলেন ১৯৯৮ সালে আতহার আলী ও মোহাম্মদ রফিক মিলে।
মূলত তামিম-সৌম্যর প্রায় দেড়শ ছোঁয়া জুটিই বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে। এই দুইজনের বিদায়ের পর বাকি দুই ব্যাটসম্যানকে সেই অর্থে তেমন কিছুই করতে হয়নি। ৭৩ রানে বিদায় নেওয়ার আগে অসাধারণ ব্যাটিং করছিলেন সৌম্য। বাউন্ডারির সীমানায় ড্যারেন ব্রাভোর দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরে ফেরার আগে ৯ চার ও ১ ছক্কায় খেলেন ৬৮ বলে সাজানো ইনিংস। ওপেনিং সঙ্গীকে হারিয়ে তামিম তখন সাকিবকে নিয়ে এগোচ্ছেন জয়ের দিকে তখনই তিনি নিচু শট খেলতে গিয়ে গ্যাব্রিয়েলের বলে মিড উইকেটে দাঁড়ানো হোল্ডারকে ক্যাচ দিলেন। ক্যারিয়ারের ৪৫তম হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত ৮০ রানে থামেন এই ওপেনার। ততক্ষণে অবশ্য দলের স্কোর দুইশো ছুঁই ছুঁই। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে সাকিব (৬১) ও মুশফিক (৩২) রানে অপরাজিত থাকেন।
ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিবকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল নানা কারণে। সেই সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান খেললেন নিজের মতো করে। বোলিংয়ে ভালো করার পর ব্যাটিংয়েও ছিলেন দারুণ, ৬১ বলে ৬১ রান করেন তিনি তিন চার ও ২ ছয়ে।
গত কয়েক বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ক্রিকেটার মুশফিক। ক্যারিয়ারের বহু ম্যাচে ফিনিশার হয়ে আসতে পারেননি। আজকে ঠাণ্ডা মাথায় ২৫ বলে ৩২ রানের ইনিংসটি খেলে প্রমাণ দিলেন তিনি পরিণত।
নিউজিল্যান্ডের ব্যর্থতার পর অনেকেই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে প্রত্যাশা করতে ভয় পাচ্ছিলেন। ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা নতুন করে আশা করতেই পারেন।
তবে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার ছিল ঠাণ্ডা আবহাওয়া। টস করতে নামার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা শীতে কাঁপছিলেন। সেখানে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খেলাটা, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য খুব কঠিনই বটে। তবুও এই কন্ডিশনকে জয় করে দেখিয়ে দিলেন মাশরাফিরা। ব্যাটিংয়ে-ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত থাকলেও বোলিংয়ে আপ টু দ্য মার্ক ছিলেন না পেসাররা। বিশেষ করে ইনজুরিতে থেকে ফিরে মোস্তাফিজুর রহমান নিজের ছন্দে ছিলেন না। ১০ ওভার বোলিং করে ৮৪ রান দিয়েছেন এই কাটার মাস্টার। যদিও পেয়েছেন দুটি উইকেট। মোস্তাফিজের বোলিং বাদ দিলে বাকিদের নিয়ে প্রত্যাশার বেলুন উড়ানো যেতেই পারে।