হাওর ডেস্ক ::
সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৫৭টি উপজেলা নিয়ে হাওর এলাকা গঠিত। এ ছাড়াও বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ চর। আর এসব হাওর ও চরে সীমাহীন দুঃখে কষ্টে কাটে মানুষের জীবন। তাদের এ কষ্ট লাঘবের জন্য হাওর ভূমিপুত্র প্রয়াত ড. নিয়াজ পাশা ২০১৩ সালে হাওর এলাকা উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে একটি প্রস্তাব দেন। আর রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়িও হাওর অঞ্চলে। বিষয়টি আমলে নিয়ে গত বছরের ২২ জুলাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু প্রায় ৯ মাস অতিবাহিত হলেও ইনিস্টিউটটের অবকাঠামোগত কাজ কেবল ফলকেই আটকে আছে। তবে কি হবে না রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের ইনস্টিউটিউট, প্রশ্নটি এখন সবার? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওর ও চরাঞ্চল বাদ দিলে কৃষির আধুনিকায়নে দেশের অধিকাংশ জমিই তিন ফসলে পরিণত হয়েছে। আর আলাদাভাবে এ অঞ্চলের মানুষের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে জীবনমান উন্নত করার প্রয়াসেই রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্সসংলগ্ন জায়গায় এ ইনস্টিউটটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। মূলত হাওরের গতিপ্রকৃতি, পরিবেশ ঠিক রেখে এবং ধ্বংস না করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোই এ ইনস্টিটিউটের কাজ হবে। শুধু বাকৃবিতেই নয়, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়াতেও বহিরাঙ্গণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। গত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনের জন্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. রকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি ডেলিগেশন টিম কিশোরগঞ্জের মিঠামাইনসহ হাওর ও চরের জেলাগুলো পরিদর্শন করেন। কারণ মাঠ পর্যায়ের কাজ মূলত বাইরে হবে। তবে কেবল জায়গা নির্ধারণ করা ছাড়া অবকাঠামোগত কাজ কোথাও শুরুই হয়নি।আবার এদিকে রাষ্ট্রপতি যেখানে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, সেখানে না করে ইনস্টিউটটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মূলত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে হাতে রেখেই এমনটি করা হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে আলাদাভাবে পুনরায় প্রস্তাবনা দিতে হয়েছে। আগের প্রস্তাবনায় টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ কোটি তবে বর্তমান প্রস্তাবনায় এটি ৯০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের পেছনে এর মূলভবনের কাজ করার পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়। মূলত আগের ১ একর জায়গায় ইনস্টিটিউটের স্থাপনা ও গবেষণাগার তৈরি করতে পারা সম্ভব নয় বলেই ৬ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মূল কেন্দ্রের জন্য। আর এখানে একটি পুকুরে ফিশ জিন ব্যাংক করারও পরিকল্পনা আছে নতুন প্রস্তাবনায়। কিন্তু যেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে হাওর ও চরের মানুষের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও গবেষণার কাজ, তার জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট ভবন। আর সে ভবনটি রাষ্ট্রপতি ভিত্তি প্রস্তরের স্থাপনের উদ্বোধন করার পরও কেন আটকে আছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইনিস্টিউটটের পরিচালক অধ্যাপক ড. রকিবুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের জায়গাটি সুবিধাজনক ছিল না এমনকি এটির পরিমাণও ছিল অনেক কম। আমি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথমদিকে এটি শুরু করার পেছনে কিছুটা জটিলতা ছিল তবে আমি দায়িত্ব নিয়ে সবগুলো সমস্যা উত্তোরণের চেষ্টা করেছি। এমনকি সম্প্রতি আমরা রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেছি। হাওর সম্ভাবনা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সকলকে নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করারও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আশা করি আগামী বাজেটে ইনস্টিউটের জন্য টাকার বিষয়টির সুরাহা হবে এবং অবকাঠামোগত কাজ শুরু করতে পারব। সূত্র : কালের কণ্ঠ