বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট::
অকালেই নিভে গেলো সুনামগঞ্জের মেয়ে উদীয়মান ডা. প্রিয়াঙ্কা তালুকদার শান্তার জীবনপ্রদীপ। সিলেট নগরীর পাঠানটুলায় অবস্থানকারী শান্তা পার্কভিউ মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ছিলেন। পরিবার ও স্বজনদের দাবি পারিবারিক কলহের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন পিতা ঋষিকেশ তালুকদার। মেয়েকে হারিয়ে শোকের মাতম চলছে পরিবারে। একজন সম্ভাবনাময় ডাক্তারের এমন অকাল মৃত্যুতেও মর্মাহত স্বজন এলাকাবাসী।
নিহতের পরিবারের দাবি স্বামীর বাড়িতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার ছিলেন শান্তা। তিনি পরিবারকেও মাঝে মধ্যে বিষয়টি অবগত করেছেন। শান্তাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো বলে তার পিতার পরিবার জানিয়েছেন। এর জের ধরেই শনিবার রাতে ডা. প্রিয়াঙ্কা তালুকদার শান্তাকে হত্যা করে লাশ স্বামীর বসতঘর ঝুলিয়ে রাখা হয়। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা এসে ডা. প্রিয়াংকাকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। প্রিয়াংকা জামালগঞ্জ উপজেলার গঙ্গাধরপুর গ্রামের হৃষীকেশ তালুকদারের মেয়ে। ঋষিকেশ তালুকদার এখন স্থায়ীভাবে সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়ায় বসবাস করেন। তবে এ ঘটনাটে আতœহত্যা বলে দাবি করেছে প্রিয়াঙ্কার স্বামীর বাড়ির লোকজন। এদিকে প্রিয়াঙ্কাকে হত্যা বা আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে কিনা এ নিয়েও পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। এ নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।
ডা. প্রিয়াংকার বাবা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানায় প্রিয়াংকার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহতের পিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জালালাবাদ থানা পুলিশ তিন আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে আদালতে প্রেরণ করেছে। আদালত প্রিয়াংকার স্বামী স্থপতি দিবাকর দেব কল্লোল, শ্বশুর সুভাষ চন্দ্র দেব ও শাশুড়ি রতœা রানী দেবকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
নিহতের বাবা হৃষীকেশ তালুকদার জানান, শান্তা পাঠানটুলার পনিটুলা এলাকার পল্লবী সি ব্লকের ২৫ নাম্বার বাসায় স্বামী ও তার পরিবারের সঙ্গে থাকত। তার স্বামীর নাম কল্লোল দেব। শান্তা শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এটা পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে দাবি করেন তিনি। বিশেষ করে শাশুড়ি প্রায়ই তাকে নির্যাতন করতেন বলে জানান ঋষিকেশ তালুকদার।
শান্তার সুনামগঞ্জের বাবার বাসার প্রতিবেশি স্বপন কুমার রায় বলেন, খুব ভালো ও মেধাবী মেয়ে ছিল শান্তা। সে মানুষের সেবা করতেই ডাক্তারি পেশা বেছে নিয়েছিল। কিন্তু এই সমাজের মানুষ (তার স্বামীর পরিবার) তাকে বাচতে দিলোনা। এ ঘটনায় জোরালো তদন্ত সাপেক্ষে তিনি দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, আগেই ডা. প্রিয়াংকার স্বামী শাশুড়ি ননদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ডা. প্রিয়াংকার বাবার দায়ের করা হত্যা মামলায় তাদের আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। ডা. প্রিয়াংকার মৃত্যুকে রহস্যজনক মনে হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে ওসি হারুনুর রশিদ বলেন- লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। মামলাও হয়েছে। এখন ময়নাতদন্তের পর ঘটনার আসল রহস্য বলা যাবে।
জানাযায়, প্রিয়াংকার স্বামী দিবাকর দেব কল্লোল পেশায় স্থপতি। তিনি লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন।