স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ শহরের প্রতিভাবান শিল্পী, ও সাংস্কৃতিক কর্মী ডা. প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তা’র অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেছে তার জন্মজেলা সুনামগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন। তারা তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে শহরের আলফাত স্কয়ার এলাকা। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী নির্বিশেষে সব বয়সের লোকজন এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এদিকে আগামী শনিবার সকালেও একই স্থানে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব সুধীজন। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
বৃহস্পতিকার সকালে পৃথক ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জেলা মানবাধিকার কমিশন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাড. অলক ঘোষ চৌধুরী। জেলা উদীচী’র সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ সদস্য ফৌজিআরা বেগম শাম্মী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা নৃপেশ তালুকদার নানু, অ্যাড. দেবদাস চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কল্লোল তালুকদার চপল, অণীশ তালুকদার বাপ্পু, কপিল ঋষি, লোকদল শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি বিধান চন্দ্র বণিক বাঁধন, কলি তালুকদার আরতি, মঞ্জু তালুকদার, সূর্য দাশ, রুবেল খান, তুলিকা ঘোষ চৌধুরী, সন্তেুাষ কুমার চন্দ, বাবুল আচার্য, দেবাশীষ তালুকদার শুভ্র, ডা. কনিক রহিমা রব্বানী, সাদিকুর রহমান, সামির পল্লব প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মী ডা. প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তাকে তার স্বামীর বাড়ির লোকেরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে এবং এই হত্যাকা-কে আত্মহত্যা বলে উড়িয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে তা কখনো হতে দেয়া হবে না। সিলেটের কিছু প্রভাবশালী লোক ডা. শান্তা’র হত্যাকা-কে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা জোরদার করে গোপন তদবীর চালাচ্ছে। এই ঘৃণ্য অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনপূর্বক অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, প্রিয়াংকা তালুকদার চিকিৎসকের পাশাপাশি সংস্কৃতিকর্মী ছিলেন। তিনি সুনামগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত মুখ এবং ভালো গান গাইতেন। একজন সংস্কৃতিকর্মী ও চিকিৎসকের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।
অপরদিকে, ডা. প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তা হত্যার প্রতিবাদে ও প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শান্তার একমাত্র সন্তান কাব্যকে সাথে নিয়ে মানববন্ধন করে জেলা মানবাধিকার কমিশন।
জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান, জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি ফৌজি আরা বেগম শাম্মীর সভাপতিত্বে ও জেলা যুগ্ম স¤পাদক সাইফুল আলম ছদরুলের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহ সভাপতি জসিম উদ্দিন দিলীপ, সহ-সভাপতি কলি তালুকদার আরতি, সদর উপজেলা সভাপতি আব্দুল কাদির শান্তি মিয়া, যুগ্ম স¤পাদক প্রভাষক দুলাল মিয়া, সাংগঠনিক স¤পাদক মহিবুর রহমান মুহিব, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক স¤পাদক আশরাফ হোসেন লিটন, মো. রুহুল আমিন, শওকতুল হক, জনি রায়, অমিত রায়, নজির আহমদ, কৃষক আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সমাজের সনাতনি মানসিকতার তিল তিল শিকার প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তা। সমাজে নারীকে ছোট করে দেখা তার নারী স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার মানসিকতা থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। শ্বশুর বাড়িতে নিজের মেয়েকে যেভাবে দেখতে চান ঘরের বউকে সেভাবে দেখার মানসিকতা সকলের ঘরে ঘরে তৈরি করতে পারলে আর কোন শান্তাকে হারাতে হবে না। নারীকে মানুষ ভাবতে শিখতে হবে।
উল্লেখ্য, গত রোববার সকালে সিলেট নগরীর পশ্চিম পাঠানটুলাস্থ পল্লবী সি ব্লকের ২৫ নম্বর বাসা থেকে জালালাবাদ থানা পুলিশ ডা. প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ঋষিকেশ তালুকদার বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নির্যাতনে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আসামি ডা. প্রিয়াংকার স্বামী দিবাকর দেব কল্লোল, শ্বশুর সুভাষ চন্দ্র দেব ও শাশুড়ি রতœা দেবকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত সোমবার প্রিয়াংকার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।