বিশেষ প্রতিনিধি::
সুুনামগঞ্জের ছাতকের বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনায় চিকিৎসাধীন ছাতক থানার ওসি সহ আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার। ,
এদিকে সংঘর্ষ ও বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভ্যান চালক শাহাবউদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনায় বুধবার রাতে নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বাদী হয়ে ১২ জনের নামেল্ল্যেখ করে অজ্ঞাত নামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
বিভিন্ন সুত্র জানায়, ছাতকে মঙ্গলবার রাতের আলোচিত বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত উভয় গ্রুপের কৌশলীরাই নানাভাবে বাদীর পরিবারকে প্রভাবিত করে মেয়র কালাম চৌধুরী ও তার সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরীর সমর্থক যারা সরাসরি ঘটনার রাতে সংঘর্ষ ও বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এমন কয়েকজন হাই প্রোপাইল দাঙ্গাবাজ এমনকি মেয়র পরিবারের লোকজনের নাম হত্যা মামলার এজাহারেই না রাখার জন্য নিহত নিরীহ হতদরিদ্রে ভ্যান চালকের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে পর্দার আড়ালে মুলত বুধবার মধ্যরাত পর্য্যন্ত হত্যা মামলার নামে সাপ -লুডু খেলেছেন।,
বুধবার থানা পুলিশের দায়ের করা এ্যাসল্ট মামলায় মেয়রের ভাই শামীম আহমদ চৌধুরী, মেয়রের বড় ভাই, চাচা ভাতিজা ও মেয়রের অনুসারী কাউন্সিলর তাপস চৌধুরীর নাম থাকলেও হত্যা মামলায় তাদের নাম না থাকার বিষয়টি নিয়ে সিলেট সুনামগঞ্জ ও ছাতকে নানামুখী সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত দু’গ্রুপ ও বাদীকে নিয়ে এ মামলা ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার হত্যা মামলা হিসাবেই অনেকেই আখ্যায়িত করে বলেন, এ মামলার এজাহারে প্রকৃত হত্যাকান্ডে জড়িত অনেকেই আড়াল কওে রাখা হয়েছে , যে কারনে প্রকৃত খুনীরা থেকে যাবে অধরা এমনকি অবৈধ অস্ত্র উদ্যার কাজ গায়েব হয়ে হয়ে যাবার পথ তৈরী করা ফাঁদ পাতা হয়েছে। ,
বৃহস্পতিবার ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম হত্যা মামলা দায়েরের বিষযটি নিশ্চিত করে জানান, হত্যা মামলায় উপজেলার গহরপুরের মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে বরখাস্তকৃত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন সাহেলেকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
এছাড়াও এ হত্যা মামলায় অন্য আসামীরা হলেন,উপজেলার খারগাঁও’র মৃত আকল আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন, গোয়াল গাঁও’র কবির মিয়ার ছেলে গৌছ মিয়া, পৌর শহরের রহমত বাগের হাজি মোশারফ আলীর আলীর ছেলে ছবিরুল ইসলাম সাজু,বাগবাড়ির মৃত রেনু মিয়ার ছেলে এমদাদ হোসেন খোকন,মন্ডলী ভোগের তাজ উদ্দিনের ছেলে শিপলু মিয়া, উপজেলার লক্ষীপাশার ছালিক মিয়ার ছেলে লিটন, পৌর শহরের মন্ডলী ভোগের তরু দাশ তালুকদারের ছেলে রুবেল তালুকদার জনি,উপজেলার মুক্তিরগাঁও’র মৃত আবদুল মালিকের ছেলে আবদুল কাদির, রাজারগাঁওর মৃতইদন আলীর ছেলে আফিক আলী, মোগলা পাড়ার কবিরের ছেলে সুজন, পৌর শহরের মন্ডলী ভোগের বাবুল দাসের ছেলে আকাশ দাস।,
এরপুর্বে বুধবার রাতে ওসমানীতে চিকিসাধীন পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান গণমাধ্যমকে বললেন, ছাতকের সংঘর্ষ , পুলিশের উপর হামলা ও ভ্যান চালক হত্যাকান্ডের ঘটনায় নেপথ্যে কিংবা প্রকাশ্যে যে বা যারাই জড়িত থাকুক এমনকি তারা যতবড় প্রভাশালী হউক না কেন তাদের কাউকেই উপর মহলের তদবিরে ছাড় না দিতে জেলা পুলিশের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন ‘জনগণের শান্তি ভঙ্গকারিরা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর, তারা যত বড় ক্ষমতাবানই হউক না কেন আইন ভঙ্গ করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর জন্য তাদের আইনি শান্তি পেতেই হবে’।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে শিল্পনগরী ছাতকের সুরমা নদীতে নৌ পথে টোল আদায়ের আড়ালে চাঁদাবাজির দ্বন্ধে ছাতক পৌর মেয়র জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী ওরফে কালাম চৌধুরী ও তার সহোদর জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরীর সমর্থকদের বন্ধুকযুদ্ধে শাহাবউদ্দিন নামের এক নিরীহ ভ্যান চালক নিহত হন। এছাড়াও পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বন্দুকের গুলি ইট পাটকেলের আঘাতে ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল ও আরো ৮ পুলিশ সদস্য সহ ৫০ ব্যাক্তি রক্তার্থ জখম হন।
পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ আনতে ২ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালায় পুলিশের কয়েকটি টিম। ১৬৩ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ৫২ রাউন্ড গ্যাস গানের গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। ,
এরপর রাতভর পুলিশের এই অভিযানে কোনঠাসা হয়ে পড়লে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া ক্ষমতাসীন দলের দুই সহোদর গ্রুপের ২৮জনকে গ্রেফতার করা হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের উপর হামলার ঘটনার পরদিন বুধবার থানায় ৯৫ জনের নাম উল্ল্যেখ করে পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে।,
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মেয়রের বড়ভাই জামাল আহমদ চৌধুরী, কামাল চৌধুরী, চাচা ইলিয়াছ মিয়া চৌধুরী রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, ছাতকের ঘটনায় জড়িতদের বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহার করার দায়ে সকল লাইসেন্স বাতিল করা হবে, অবৈধ কোন অস্ত্র থাকলেও সেগুলো উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলবে।
অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাতকে কোন পক্ষের গুলিতে ভ্যান চালক হত্যার শিকার হলেন সেই রহস্যরও উদঘাটন করা হবে।,