হাওর ডেস্ক::
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের সঙ্গে অন্যান্য সরকারি সংস্থার মাঠপর্যায়ের তথ্যের ব্যাপক পার্থক্য থাকে। ধানের প্রকৃত উৎপাদন ও বাস্তবতার মধ্যে থাকে বড় ফারাক। এ ধরনের ব্যবধান কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। কৃষিশুমারির বিভাগীয় ও জেলা সমন্বয়কারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল রবিবার এমন নির্দেশ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। পরিসংখ্যানসংক্রান্ত কাজে উৎকর্ষ বাড়াতে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানান তিনি। উপযুক্ত জমি নির্বাচন করে এ লক্ষ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব মো. রইছউল আলম মণ্ডল ও কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় কৃষিশুমারি-২০১৯-এর সমন্বয়ক বিবিএসের মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন। অনুষ্ঠানে জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক মো. জাফর আহমেদ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাঠপর্যায়ে কৃষিশুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হবে আগামী মাসে। ৯ জুন শুরু হয়ে দেশব্যাপী এ কার্যক্রম চলবে ২০ জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশের শহর ও পল্লী এলাকায় শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদেও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এর আগে বিভিন্ন পর্যায়ে আঞ্চলিক অপারেশনসহ প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংস্থার তথ্যের পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। সঠিকভাবে কৃষিশুমারি করতে পারলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে এ ধরনের পার্থক্য কমে আসবে বলেও তিনি মনে করেন। গণমাধ্যমের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা ত্রুটি তুলে ধরুন। ত্রুটি কোনো ফৌজদারি অপরাধ নয়। এটা ভুল হলে বা অবহেলা হলে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অধিক কাজ করতে হবে। সমাজে অন্যায় আছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অনেক সময় আইন দিয়ে অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সেগুলো ধীরে ধীরে দূর করতে হবে। সমাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অন্যায় দূর করতে প্রধানমন্ত্রী নিরলসভাবে কাজ করছেন।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাজ নিয়ে আনন্দবোধ করি। সামান্য সংখ্যা নিয়ে মজার মজার বৈশিষ্ট্য বের করে এই সংস্থা। প্রধানমন্ত্রী গবেষণা নিয়ে কাজ করতে বলেছেন। এই বিষয়ে তিনি অনেক উদার। আমাদের আরো গবেষণা করতে হবে। গবেষণার জন্য যা যা দরকার সবই দেওয়া হবে। প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে লড়ব বলে জানান মন্ত্রী।
কৃষির অবদান তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। কৃষি খাত উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষিক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘ধানের উৎপাদন নিয়ে আমরা মধুর বিড়ম্বনায় রয়েছি। ধানের উৎপাদন বেশি হয়েছে। সরবরাহ বেশি হলে দাম একটু কম হবেই। আগামীতে কী পরিমাণে ধান উৎপাদন করা হবে সেই বিষয়ে আমাদের তথ্য দরকার।’ তিনি আরো বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। আশা করছি, আগামী পাঁচ বছরে দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারব। এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, সর্বপ্রথম কৃষিশুমারি পরিচালিত হয় ১৯৬০ সালে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কৃষিশুমারি হয় ১৯৭৭ সালে। এরপর ১৯৮৩-৮৪, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে কৃষিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসাবে এবার ষষ্ঠ কৃষিশুমারির আয়োজন করছে বিবিএস।