যারা হাওর অঞ্চলের মানুষ তারা জানেন হাঁটার দূরত্ব। ৪০ কিলোমিটার না হলেও প্রতিদিন ১০ কিলোমিটার হেঁটে আমরাই স্কুল করেছি। আসা যাওয়ায় ২০ কিলোমিটার। বর্ষায় বিশাল হাওর পাড়ি দিয়ে উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে স্কুলে যেতে হয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে কতোবার বেঁচে এসেছি। শুকনোয় হাঁটা আর বর্ষায় নৌকার সঙ্গে সখ্যতা, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করে হাওর জনপদের মানুষ বড় হয়। এই লড়াকুরাই দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন,সরকারের নীতিনির্ধারক হয়েছেন। অন্তত ত্রিশ বছর আগে হাওর বিচ্ছিন্ন জনপদই ছিলো। এখন রাস্তা হয়েছে গাড়ী চলছে (তাও অনেক জায়গায় নয়) বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ত্রিশ বছর আগের হাওর জনপদ আর এখনকার অবস্থা এক নয়। রাজধানী ঢাকায় বসে বোঝা যাবে না সেই দুর্গম জনপদের সুখ দু:খের কথা। এ কারণেই হয়তো মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার যখন বলেন ৪০ কিলোমিটার হেঁটে তিনি স্কুলে গেছেন (যদিও তিনি জানিয়েছেন তাকে ভুলভাবে উদৃত করা হয়েছে) তখন তাকে নিয়ে ট্রল করা হয়,মজা করা হয়,প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু এটা সত্যিই মোস্তফা জব্বার নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ির যে গ্রাম থেকে ওঠে এসেছেন তা বিশাল হাওরের মাঝখানেই অবস্থান। সেখান থেকে অনেক দূরের স্কুলে হেঁটেই যেতে হয়। কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সেই মিঠামইনও হাওর বিধৌত জনপদ। রাষ্ট্রপতিও তার শৈশবে মাইলের পর মাইল হেঁটে অতিক্রান্ত করে এসেছেন ।বর্ষায় নৌকা বেয়ে আসতে হয়েছে। বর্ষার সুবিশাল জলরাশির স্নাত হয়ে আর হেমন্তে আদিগন্ত সবুজ মাঠের প্রকৃতির দুষনহীন পরিবেশে বড় হয়ে এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয় ও মনেও থাকে বিশালত্ব। দেখবেন হাওর জনপদের মানুষের মধ্যে জটিলতা কুটিলতা অন্য এলাকার চেয়ে কম। উন্মুক্ত প্রকৃতিই হয়তো এর কারণ। দেশের অনেক জনপদ ঘুরেছি, দেখেছি প্রকৃতির রুক্ষতা। কিন্তু হাওর জনপদের মতো এতো উদার স্নিগ্ধ, প্রকৃতি আর কোথাও দেখিনি। হাওর কোলের সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত।
(লেখকের টাইমলাইন থেকে)