1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

শৈশব স্মৃতি।। মো. তারিকুল ইসলাম

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯, ৫.১২ এএম
  • ৩৩৫ বার পড়া হয়েছে

সেই যখন সিক্স কিংবা সেভেনে পড়ি তখন আজকালকার মত এতো বেশী দৈনিক পত্রিকা ছিল না । যদ্দুর মনে পড়ে দৈনিক ইত্তেফাক কিংবা দৈনিক বাংলার মত খবরের কাগজগুলো পাঠকরা বেশী পড়তেন । সুনামগঞ্জ তখনও জেলা হয়নি । ভাটিবাংলার এ মহকুমা শহরটিতে খবরের কাগজ বিকেল পাঁচটার আগে কখনই পৌছত না । দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রায়ই বাসী খবর পড়তে হতো । গোটা শহরে হাতে গুনা কয়েক বাসায় হকার নিয়মিত খবরের কাগজ নিয়ে যেত । আর খবরের কাগজ পড়ার আরেকটা নিশ্চিত স্থান ছিল আমাদের স্কুল -সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় । নাইন এবং টেনের ক্লাসরুমের বিভাজনকারী যে প্রবেশপথ সেখানে বুক সমান উচু দুটি টেবিলের একটিতে দৈনিক ইত্তেফাক আর অপরটিতে The Observer পিন দিয়ে সাটা থাকত । দৈনিক সমাবেশের আগে কিংবা মধ্যাহ্ন বিরতিতে চলত খবর পড়া কিন্তু অন্যভাবে বলা যায় খবর গেলা । আমরা খবরসহ অন্যান্য প্রবন্ধ নিবন্ধ পড়ছি কিনা সেদিকেও নজর ছিল আমাদের পিতৃসম শিক্ষকদের । তাই খবর পড়া কেবলমাত্র হেড লাইন পড়া ছিল না । যে খবর আমরা পড়তাম তা ভালভাবেই পড়তাম । খবর পড়ার সাথে খবর শুনারও একটা ব্যাপার ছিল । খবর শুনা হতো রেডিওতে । সকাল সাতটায় পাঁচ মিনিটের বাংলা খবর এবং পরবর্তী পাঁচ মিনিট একই খবর ইংরেজিতে । মনোযোগ দিয়ে শুনতাম । কারণ খবর শুনে আমাদের ইংরেজি শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ হতো, উচ্চারণ সচেতনতা বাড়ত এবং নিজেরা ভুলভাল হলেও ইংরেজি বলার চেষ্ঠা করতাম । সিনিয়ররা ভুল ধরিয়ে দিতেন । এতে কিছুটা হলেও ইংরেজি শেখা হতো । সেইসাথে বিবিসি কিংবা ভয়েস অব এ্যামেরিকার খবর প্রায় সবার কাছে প্রিয় ছিল । এবং খবর পাঠকরা রীতিমত নায়কোচিত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন । সরকার কবির উদ্দিন, রোকেয়া হায়দার , সিরাজুল মজিদ মামুন , আফজাল এইচ চৌধুরী এবং ফারাহ কবিররা ছিলেন আইকন নিউজ কাস্টার ।
ইংরেজি খবর নিয়ে আমাদের এক বন্ধুর বলা মজার গল্পটি এরকম-
ইংল্যান্ডগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি প্নেনে ভ্রমন করছিলেন দুই বন্ধু । এয়ার হোস্টেস তাদের একজনকে ইংরেজি খবরের কাগজ দিলে সে ইংরেজি জানেনা এটা মহিলাকে বুঝতে দিতে তার অহমে বাঁধল । তাই খবরের কাগজটি হাতে নিয়ে পড়ার ভান করলো । কিন্তু কাগজটি যে সে উল্টো করে ধরেছে সেটা খেয়াল করল না । ফলে সবকিছু উল্টে গেল-অক্ষর, শব্দ, ছবি….কাগজে যা আছে সব ।
অপর বন্ধু খবর পড়ুয়া বন্ধুর মিথ্যা বাহাদুরিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে চিচিংফাঁক করতে বলল-তা কেমন খবর পড়লি বলনা বন্ধু ।
খবর পড়ুয়া কি বলবে তা ভেবে একটু ভড়কে গেল । তারপর ভাবল ও যেমন ইংরেজি জানেনা ওর বন্ধু তোও তেমনি ইংরেজি জানেনা । তাই একটা কিছু বললেই হবে । ও কাগজটির দিকে তাকাল এবং প্রথম পৃষ্ঠার এক জাহাজের উল্টানো ছবি দেখে বলল- খবর তেমন ভাল নয় । একটা জাহাজ উল্টে গেছে ।
প্রশ্নকারী বন্ধুটি ইংরেজি না জানলেও এটা বুঝেছিল তার বন্ধুটি খবরের কাগজ উল্টো করে ধরেছে । তাই ঝট করে বলল-কাগজটি ঠিক করে ধর । জাহাজটি আবার ভেসে উঠবে ।
আমাদের বাসায় আমার মেজচাচা এডভোকেট আব্দুল আউয়াল এবং আমার বড় ভাইয়েরা বাংলা ও ইংরেজি উভয় ধরণের খবরের কাগজ পড়তে আমাকে উৎসাহিত করতেন । রাতে খাবার টেবিলে বসে চলত ঐদিন দেশে বিদেশে কি ঘটেছে তা নিয়ে আলোচনা ।
সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিচিত্রা এবং রোববার । আমার প্রয়াত মেঝভাই নজরুল ইসলামের হাত ধরে শুরু হয় আমার ম্যাগাজিন পড়া । মেজভাই তখন কলেজে পড়তেন । বাম রাজনীতি করতেন । স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন । সেই সাথে প্রচ্ণ্ড বাস্তববাদী মানুষও ছিলেন । প্রথম প্রথম বিচিত্রা পড়ার অনুমতি পেতাম না । তবে লুকিয়ে আলাউদ্দিনের মিস্টির স্পন্সরশিপে রনবীর কার্টুন টোকাই দেখতাম । টোকাইয়ের কার্টুনে রফিকুন্নবী সমাজ বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতেন নানাভাবে । একটা কার্টুনের কথা এখনও মনে পড়ে । স্যুটেট বুটেড এক ভদ্রলোক টোকাইকেই জিজ্ঞেস করছেন -রোজা রাখা খুব কষ্টের , নারে টোকাই?
-আমাগো আবার কষ্ট কি ? আপনারা রোজা রাখেন তিরিশটা আর আমরা রাখি তিন শ পয়ষষ্টিটা ।
বিচিত্রার আর একটা অংশ ছিল জীবন যেখানে যেমন । নামে বেনামে বিভিন্ন জন তাঁদের হৃদয়স্পর্ষী জীবনাভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেন । তন্ময় আপ্লুত হয়ে সে কাহিনীগুলো পড়তাম।
ভ্রমন কাহিনী কিংবা প্রতিবেদনও থাকত বিচিত্রায় । সার্ক সামিট উপলক্ষে মালদ্বীপ ভ্রমনকারী তখনকার এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মালদ্বীপের সমুদ্র সৈকতে এক কিশোরীকে একা ঘুরতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন-তুমি একা এত রাতে সৈকতে ঘুরছ , তোমার কি ভয় করছে না?
-কিসের ভয় ? -পাল্টা প্রশ্ন ছিল মেয়েটির
যে মেয়ে জানেনা ভয়টা কিসের , লেখক মেয়েটির কাছে সে ভয়টি আর ব্যাখ্যা করতে যাননি। সে মুহু্র্তে আমার কিশোর মনে এক আশা যেন দোলা দিচ্ছিল । সেটা হচ্ছে আমাদের সমাজও যেন হয় নারীর এমনই অভয়াবাস ।
লেখক: উপাধ্যক্ষ, বিয়ানীবাজার, সরকারি কলেজ।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!