অনলাইন ডেক্স::
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করবেন। সেই সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক সমাধান আসবে বলে আশা করছি।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ভারতীয় হাইকমিশনার আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পার্টি টু পার্টি, পিপল টু পিপল এর মধ্যে কানেক্টিভিটি জোরদার করবো। এ জন্য আমরা আগে থেকেই কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিজস্ব বিষয়। এক্ষেত্রে ভারতের কোনও পরামর্শ নেই। এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত ইতিবাচক।’
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত কিছু বলেছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক তা আমরা চাই। এ বিষয়ে ভারতের কিছুই বলার নেই। আমার কথা হচ্ছে, নির্বাচন সময় মতো হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সংবিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে। আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। আমাদের সম্মেলনে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সীমান্ত চুক্তি ও সিটমহল হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে অবিশ্বাস, সন্দেহের দেয়াল ভেঙে গেছে। দুই দেশের মধ্যে গঠনমূলক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করছি। বিমসটেক ও ব্রিকসের মাধ্যমে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মধুরতর হচ্ছে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আমি আশাবাদী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মাইন্ডসেট ঠিক আছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের কোনও আপত্তি আছে বলে আমি জানি না। পশ্চিমবঙ্গের সরকারের সঙ্গে যেটুকু সমস্যা আছে তা সমাধান হবে।’
মন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদকের কাজ কিভাবে সমন্বয় করবেন? জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন কোনও ফাইল পড়ে আছে কিনা? এখন আমি রাস্তা ও ব্রিজ দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগ দেখবো। আবার আওয়ামী লীগ দেখতে গিয়ে রাস্তা ও ব্রিজ দেখবো। কাজেই কোনও সমস্যা হবে না।’
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রধান চ্যালেঞ্জ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলকে গতিশীল করা। নেতাকর্মীদের মধ্যে নিয়ম শৃঙ্খলা করা। দলকে সুসংগঠিত করে একটি সুন্দর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দলকে প্রস্তুত করাই আমার বড় চ্যালেঞ্জ।’
আপনি আগে থেকেই দলের হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এখন সাধারণ সম্পাদক হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি দলে সব ধরনের লোক থাকে। দল ক্ষমতায় আসলে কিছু নতুন লোকও আসেন। তবে বসন্তের কোকিলদের ভিড়ে দুঃসময়ের বন্ধুরা যেন কোনঠাসা হয়ে না পড়েন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুঃসময়ের বন্ধুরা কোণঠাসা হলে দল দুর্বল হয়ে পড়ে। আমাদের সরকার খুব শক্তিশালী। পাশাপাশি দলকেও শক্তিশালী করবো। নির্বাচন প্রসঙ্গে সংবিধানে দিক নির্দেশনা আছে। এটিকে কেন্দ্র করে কোনও কনফিউশন তৈরি করা ঠিক হবে না। বিএনপি যদি এটিকে কেন্দ্র করে কোনও কনফিউশন তৈরি করে, তাহলে তারা নিজেদের তৈরি করা ফাঁদে পা দেবে। সংবিধানে যা আছে আমরা তাই করবো।’
নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি নিয়ে কোনও দলের সঙ্গে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কি সেই পথ খোলা রেখেছে? কোকোর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শোক জানাতে গিয়েছিলেন। তখন সেই সুযোগটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়নি। ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঘরের দরজা বন্ধ করার মধ্য দিয়ে মনের দরজা, সংলাপের দরজা, আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া, গণভবনে বিএনপি চেয়ারপারসনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি যদি সেদিন আসতেন, তবে আজকের রাজনীতি অন্যরকম হতো। এখন বিএনপি জনাকয়েক লোক নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলে। কোনও প্রটেকশন করতে পারে না। পাঁচশ লোক জমায়েত করতে পারে না। বিদেশি বন্ধুরা আসলে শুধু নালিশ আর নালিশ, আভিযোগ আর অভিযোগ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, আমাদের উচিত হবে নির্বাচন কমিশনকে সেই সুযোগ দেওয়া।’
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একজন পরিশ্রমী, ত্যাগী, বীর মক্তিযোদ্ধা ও একজন সাবেক ছাত্রনেতা। তিনি সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ভারত খুবই খুশি হয়েছে। তাই আমরা তাকে অভিনন্দন জানাতে এসেছি।’