হাওর ডেস্ক ::
১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১৫- এই চারটি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক ওয়ানডে পরিসংখ্যানে বাংলাদেশকে শক্ত প্রতিপক্ষ ভাবা হলেও বৈশ্বিক এই আসরগুলোতে কিউইদের বিপক্ষে এর ইঙ্গিত রাখতে পারেনি একবারও। ঘুরে ফিরে আরও একটি বিশ্বেকাপে তাদের বিপক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছে মাশরাফির দল। ওভালে দিবা-রাত্রির ম্যাচে বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে।
এমন অবস্থায় এই ম্যাচটাতে নিউজিল্যান্ড বাধা টপকাতে কঠিন পরীক্ষা বাংলাদেশের সামনে। তেমনটি করতে পারলে ২০ বছর পর ওভালের ২২ গজে মহাকাব্য রচনা করবে মাশরাফিরা। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে স্টার স্পোর্টস, মাছরাঙা ও গাজী টেলিভিশন।
একে অন্যের বিপক্ষে ৩৫ টি ওয়ানডে খেলেছে দুই দল। যার দশটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হলেও বাকি ২৪ টি ম্যাচে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। এছাড়া বিশ্বকাপের ময়দানে চার বার মুখোমুখিতে প্রতিবারই পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ৬ উইকেটে হারার পর ২০০৩ সালেও ভাগ্য বদলায়নি। সেবার হারে ৭ উইকেটে। এরপর ২০০৭ সালে ব্যবধানটা হয় আরও বড়। সেবার বাংলাদেশ হারে ৯ উইকেটে। তিনটি বিশ্বকাপের হতাশা গত বিশ্বকাপে দূর করার সুযোগও এসেছিলো। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিততে পারেনি লাল-সবুজরা।
বুধবার ওভালের ২২ গজে মাঠে নামার আগে দুই দলই দারুণ আত্মবিশ্বাসী। বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ১৪ রানের ব্যবধানে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে রেখেছে। তবে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ জিতলেও কিউইদের বিপক্ষে তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে তিন ম্যাচের সবকটিতেই নিউজিল্যান্ডের কাছে ধবলধোলাই হয়েছে বাংলাদেশ।
এত সব নেতিবাচক পরিসংখ্যানের মাঝে বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করতে পারে ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জয়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে যেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততেই হতো বাংলাদেশকে। সেবার নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে ২৬৫ রানে আটকে রেখে বাংলাদেশ দল ৫ উইকেটে ম্যাচটি জিতে বৈশ্বিক কোনও টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে প্রথমবার নাম লেখায়।
এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রথম লক্ষ্য সেমিফাইনাল খেলা। প্রোটিয়াদের প্রথম ম্যাচে হারিয়ে সেই স্বপ্নের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে তারা। আজ নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে সেই পথটায় আরও একধাপ দিয়ে রাখবে।
তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়া এতটা সহজ হবে না। টাইগার কোচ স্টিভ রোডস এটা মানলেও শিষ্যদের প্রতি আত্মবিশ্বাস আছে তার, ‘ওরা ভালো দল। তাদের বিপক্ষে জেতা সহজ নয়। তবে আমাদের সব কিছুই ঠিকমতো হচ্ছে। ছেলেরা সবাই আত্মবিশ্বাসী। আশা করি জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারবো।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতোই দলগত পারফরম্যান্স করতে হবে। ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরুর পাশাপাশি মিডল অর্ডারে রাখতে হবে কার্যকরী ভূমিকা। তবে নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ের বিপক্ষে কাজটা মোটেও সহজ হচ্ছে না। এর মধ্যে ওভালের উইকেটে সত্যিই যদি ঘাসের আস্তরণ থাকে-সেক্ষেত্রে কিউই পেসাররা হয়ে উঠবেন আরও ভয়ঙ্কর, আরও আগ্রাসী। ট্রেন্ট বোল্টের গতিময় সুইংয়ের পাশাপাশি লকি ফার্গুসনের গতি এবং পেস বোলিং অলরাউন্ডার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে পরিকল্পনা করে ব্যাটিং করতে হবে বাংলাদেশকে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার টম ল্যাথামের কণ্ঠেও সেই ইঙ্গিত, ‘গত কয়েক বছর আমরা ওদের বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলেছি। ওদের সম্পর্কে আমাদের বেশ ধারনা আছে। আশা করি আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবো।’
প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও প্রবাসী দর্শকরা অপেক্ষায় আছেন স্টেডিয়ামে গিয়ে ম্যাচটি দেখতে। লন্ডনে মঙ্গলবার ঈদ উদযাপনের আনন্দ না কাটতেই মাঠের উন্মাদনায় মাততে প্রস্তুত ক্রিকেটাররা। মাশরাফিরাও প্রস্তুত নিজেদের সেরা ঢেলে দিতে। লন্ডনে মঙ্গলবার ঈদ হয়ে গেলেও বুধবার বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন হচ্ছে। তাই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রতিটি বাংলাদেশিকে ঈদ উপহার দেওয়ার দারুণ সুযোগ মাশরাফিদের সামনে। অবশ্য এতসব কিছু ভেস্তে যেতে পারে যদি লন্ডনের হুট করে আসা বৃষ্টি বাগড়া বসায়!