তাহিরপুর সীমান্তে অবস্থিত লাকমাছড়াটি এখন জেলার পর্যটনের নতুন এক সম্ভাবনার নাম। স্থানীয়ভাবে পাহাড়ি ছোট ছোট নালাকে ছড়া বলা হয়ে থাকে। এমন অসংখ্য ছড়া আছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার সীমান্তে। তবে সবগুলো ভ্রমণপিয়াসী মানুষকে টানতে পারেনি। ব্যতিক্রম লাকমাছড়া। কিছুদিনের ব্যবধানে লাকমাছড়া শুধু পর্যটকদের আকর্ষণই করেনি সীমানা ছাড়িয়েছে তার নভোনীল পাহাড় আর নীলনোয়া ছড়ার মুগ্ধতা।
বাংলার এপার আর ভারতের ওপারেই লাকমা নামে গ্রাম আছে। টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্পের পশ্চিমের মাথার শেষপ্রান্তে কয়েকশ গজ দূরেই দৃষ্টিনন্দন লাকমাছড়াটি ইতোমধ্যে পর্যটকদের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্পট হিসেবে দৃষ্টি কেড়েছে। এই ছড়ার পানি লাকমা গ্রাম ছুয়ে পাঠলাই নদী ও টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে নামে। টাঙ্গুয়ার হাওর ও শহিদ সিরাজ লেকে যারা ঘুরতে যান এখন লাকমাছড়াটিও ঘুরার তালিকায় রাখেন। দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। পাহাড়ি ঘননীল ও সবুজে বুনো গন্ধে মাতোয়ারা হন তারা। নজরকাড়া পাহাড়ি পাথুরে খ-ে বসে জল ছিটিয়ে মনের সুখে সময়ও কাটিয়ে আসেন।
দেখতে সিলেটের বিছনাকান্দির মতো প্রকৃতিসুন্দর অনন্য এই ছড়াটি। বুনো পাহাড় ও শাদামেঘ ছুঁয়ে ছড়াটি ভাটিতে নামছে ধিরে ধিরে। এক নীরব শব্দহীন সঙ্গীতের মতো মুগ্ধতা বিরাজ করে সর্বক্ষণ। এখনো এখানে তেমন কোন অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় অনেকটা প্রাকৃতিক আবহেই নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে আন্তসীমান্ত লাকমাছড়াটি। তাই প্রকৃতিপ্রমি পর্যটকরা প্রাকৃতিক এই স্থানটিতে এসে মুগ্ধ হন। সপরিবারে, সবান্ধবে অথবা একা একাই সময় কাটিয়ে দেহমনচোখের আরাম নিয়ে ফিরেন।
তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা গ্রামের উত্তরেই ভারতের বড়ছড়া বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন ওপারে লাকমা নামে গ্রাম রয়েছে। এ গ্রাম থেকে ভাটিতে (বাংলাদেশে) অবস্থিত লাকমা গ্রামে নেমে এসেছে খাসিয়া পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ছড়াটি। সারা বছরই কমবেশি পানি থাকে এখানে। তবে বর্ষায় পানি একটু বেশিই থাকে। এক সময় ছড়াটিতে প্রচুর দৃষ্টিনন্দন মোটা পাথরখ- থাকলেও পাথর খেকো মানুষের দল সেগুলো উত্তোলন করে বিক্রি করে দিয়েছে। যার ফলে কমে গেছে পাথরের উপস্থিতি। পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাময় এই স্থানটি সুরক্ষা বা এর সৌন্দর্য্য বর্ধনেও এখন পর্যন্ত তেমন উদ্যোগ লক্ষ্যণীয় নয়।
লাকমড়া ছড়া পারাপারের জন্য এর উপরে ভারতীয়রা যোগাযোগের জন্য বেইলি সেতু নির্মাণ করেছে। লাকমা গ্রামের উত্তরে বাংলাদেশ সীমান্তে একটি সীমান্ত সড়ক রয়েছে। এই সড়কের উত্তরেই লাকমাছড়াটি। সড়কের দক্ষিণে বাংলাদেশের লাকমা গ্রাম। ছায়াময় এই পাহাড়ি গ্রামটির মানুষ এখন ভ্রমণ পিয়াসী মানুষের উপস্থিতি দেখে বেশ পুলকিত। বর্ষা হেমন্তে যে কোন মওসুমেই সহজে দেখা যায় এই ছড়াটি।
তাহিরপুরের পর্যটক ও লেখক বাবরুল হাসান বাবলু বলেন, লাকমছড়াটি অনেক পুরনো। কিন্তু পর্যটকদের কাছে এই স্পটটি একেবারে নয়া। নীলসবুজ পাহাড় বেয়ে নামা ছড়াটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখনো তার প্রাকৃতক সৌন্দর্য্য ধরে রেখেছে। পাথরগুলো রক্ষা করা গেলে লাকমাছড়ার রূপে আরো মুগ্ধ হবে মানুষ।
তাহিরপুর উপজেলা করুণা সিন্দু চেšধুরী বাবুল বলেন, লাকমাছড়া আমাদের নতুন পর্যটন এলাকা। এটা দেখতে দলে দলে মানুষজন আসছেন। আমরা এর প্রাকৃতিক বিন্যাস ঠিক রেখে কিছু অবকাঠামো তৈরির চিন্তা করছি।