স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ-সিলেট রুটে বিআরটিসি বাস চালুর প্রতিবাদে আগামী ২৩ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তাদের এই অনৈতিক ধর্মঘটের ডাক ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন সুনামগঞ্জের সচেতন মানুষ। এরই প্রেক্ষিতে আগামী রোববার (১৬ জুন) দুপুর ২টায় জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে তরুণ আইনজীবীগণের উদ্যোগে পরিবহণ মালিকদের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ও বিআরটিসি বাস চালু রাখার পক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. এনাম আহমেদ।
তিনি বুধবার বিকেলে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই তথ্য জানান। তার এই স্ট্যাটাসের পক্ষে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন। তাদের লাগাম টেনে ধরতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। মন্তব্যকারীরা বিআরটিসি বাস চালু রাখার পক্ষে এবং পরিবহন মালিকদের নৈরাজ্য বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে ওই ধর্মঘট আহ্বানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করেছে। পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সচেতন জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেন নেতৃবৃন্দ।
এদিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী রোকেস লেইস অ্যাডভোকেট এনাম আহমেদের স্ট্যাটাসের মন্তব্যে লিখেছেন, যাত্রী সাধারণকে যুক্তিহীন, অন্যায্য কারণে যাতে জিম্মি করার সুযোগ না পায় সর্ব পর্যায় থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অ্যাড. প্রসেনজিৎ দে তাঁর মন্তব্যে লিখেছেন, এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধ রুখে দাঁড়ানো দরকার। শিক্ষক মশিউর রহমান লিখেছেন, সকল পেশাজীবী সংগঠনের অংশগ্রহণে জোরালো আন্দোলন দরকার। মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও উৎপল খাসনবীশ আইনজীবীদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করেছেন।
সাংবাদিক বিন্দু তালুকদার লিখেছেন, সহমত পোষণ করছি। সড়ক নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করা হোক। সড়ক নৈরাজ্য প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে কঠোর প্রতিবাদ করলেই এরা বুঝতো তাদের প্রতিরোধ করার শক্তি সুনামগঞ্জবাসীর আছে। এভাবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন পরিবহন মালিক শ্রমিকদের এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। পরিবহণ নৈরাজ্যের প্রতিবাদে জনগণকে রাস্তায় নামারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, পরিবহণ শ্রমিকদের এই কর্মসূচি আইনবিরোধী। কারণ পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্সসহ আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র এনে সরকারি নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর কথা। কিন্তু তারা সরকার, রাষ্ট্র ও আইনের তোয়াক্কা না করে চরম নৈরাজ্য করছে। এদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে আগামীতে আরো বেপরোয়া হবে।
সুনামগঞ্জ যাত্রীসংহতির সমন্বয়ক সাংবাদিক শামস শামীম বলেন, সুনামগঞ্জে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অন্যায্য ও আইনবিরোধী কর্মকা- রাষ্ট্র-সরকার-জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। তারা প্রতিনিয়ত ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। আগামীতে হয়তো তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠবে। এদের ঔদ্ধত্যকে ছাড় দিলে জনভোগান্তি আরো দীর্ঘতর হবে। তাই সম্মিলিতভাবেই এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের রুখতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুন সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস চালুর প্রতিবাদে ঘোষণা দিয়ে সুনামগঞ্জ পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ নামের সংগঠন সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। আগের দিন রাতে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে তারা সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের কাছে কৈফিয়ত চায়। ৩ জুন বিআরটিসি বাস উদ্বোধন করে নৈরাজ্য থেকে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সরে আসার আহ্বান জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি সরকারকে দুর্বল ভেবে শক্তি প্রদর্শনে বাধ্য না করারও আহ্বান জানিয়ে ভোগান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দেবার আহ্বানও জানান।