বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস চালুর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অনৈতিক পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসনের আহ্বানে বিআরটিসি বাস চলাচল সংক্রান্ত জরুরি মতবিনিময় সভায় পরিবহন ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন শ্রমিক পরিবহন ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক। সভায় বিআরটিসি বাস সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে বাস চলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। জেলা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আয়োজিত জরুরি মতবিনিময় সভায় প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত শ্রেণিপেশার মানুষ পরিবহন মালিক শ্রমিকদের নিজস্ব সেবার উন্নতি করার আহ্বান জানিয়ে বিআরটিসি বাস চলাচলে বাধা না দেওয়ার অনুরোধ জানান। বক্তারা পরিবহন মালিক শ্রমিকদের জনগণের বিরুদ্ধে না যাওয়ার আহ্বান জানান। সভায় যাত্রী সাধারণের পক্ষের আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ক্ষোভের মুখে পড়েন পরিবহন নেতৃবৃন্দ। তাছাড়া পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের বাস সার্ভিস উন্নত ও বাড়িত সংযোজনকৃত সিট প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা দেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান, পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত মো. মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, বিআরটিসি সিলেট বিভাগের ডিপো জুলফিকার আলী, সিনিয়র সাংবাদিক আল আজাদ, যাত্রী সাধারণের পক্ষে আন্দোলনকারী নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, মালেক হুসেন পীর, অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাতি মো. চাঁন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক সাহারুল ইসলাম, শ্রমিক পরিবহন ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক, শ্রমিক মালিক ঐক্য পরিষদ সিলেট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক সজিব আলী, সাংবাদিক এমরানুল হক চৌধুরী, শামস শামীম, বিন্দু তালুকদার, মাহমুুদুর রহমান তারেক, সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মুকুল প্রমুখ।
সভায় অভ্যন্তরীণ সড়কে বিআরটিসি বাস চালুর অধ্যাদেশ ও চুক্তি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। আলোচনায় স্পষ্ট হয় বিআরটিসি বাস চালুর প্রতিবন্ধকতা করার সুযোগ নেই মালিক শ্রমিকদের। কারণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ সড়কে ডিপো ছাড়াই বিআরটিসি বাস চলতে পারে। পরিবহন মালিক শ্রমিকরা এ সংক্রান্ত চুক্তির কাগজ দেখালেও সেখানে লিজের বিষয়টি না থাকায় তাদের যুক্তি ধোপে টিকেনি। ফলে তারা দাবি থেকে সরে আসে। সভায় উপস্থিত সুধীজন জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে পরিবহন ধর্মঘট পালন না করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি মুক্তবাজারের যুগে নিজেদের সেবা বৃদ্ধি ও মান উন্নত করার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, আপনাদের ৫০০ গাড়ির ফিটনেস, রুট পারমিট বা অন্যান্য কাগজপত্র আছে কি না তা দেখার দায়িত্ব আমাদের। তিনি বলেন, বিআরটিসি বাস সরকারি সম্পত্তি। সরকারি সম্পত্তি জনগণের সেবার জন্য দিয়েছে সরকার। সেটার বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই। অনৈতিক কিছু করলে আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি মালিক-শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সার্ভিস উন্নত নয়। যে কারণে গণবিক্ষোভ বেড়েছে। মানববন্ধন, গণঅনাস্থা, বিক্ষোভসহ কর্মসূচি পালন করছেন জনতা। আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।
পৌর মেয়র নাদের বখত মালিক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিআরটিসির মাত্র ৫টি গাড়িকে আপনারা এত ভয় পান কেন? একসময় বিআরটিসির সার্ভিস কম ছিল। এখন দেশের পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের অগ্রগতি বিস্ময়কর। মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে নিজেদের ব্যবসার মানোন্নয়ন না করে জনগণকে জিম্মি করার অধিকার কারো নেই। আপনাদের সেবার মান বৃদ্ধি পেলে জনগণ আপনাদের পক্ষেই চলে যাবে।
সিনিয়র সাংবাদিক আল আজাদ বলেন, জনগণকে আপনারা মুখোমুখি করবেন না। আপনারা আমাদের স্বজন। আপনারা বিআরটিসি চলাচলে অনৈতিক বাধা না দিয়ে নিজেদের সেবার মানোন্নয়ন করুন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট চাঁন মিয়া বলেন, আপনারা জনরোষের মুখে পড়বেন না। হুমকি দিয়ে জিম্মি করে ব্যবসা করা যাবেনা। আপনাদের কর্মসূচি সংবিধান বিরোধী। কর্মসূচি থেকে সরে আসুন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাহারুল ইসলাম বলেন, আমি ননপলিটিক্যাল মানুষ। একটি বিষয় স্বীকার করতেই হয় বাংলাদেশের মানুষ এখন হরতাল-অবরোধ চায়না। এটা উঠে গেছে বলেই দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আপনারা গনবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে মানুষের মুখোমুখি যাবেন না।
এদিকে সভায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন পরিবহন মালিক শ্রমিকদের তাদের অনৈতিক কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানালে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তোপের মুখে পড়েন। তারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে ব্যর্থ হন।
শেষে বিআরটিসি নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি আরটিসির মাধ্যমে সভা করে মালিক শ্রমিকদের সঙ্গেও সমন্বয় সাধনের সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বিআরটিসি বাস আন্তজেলায় চলাচল করতে পারবেনা এই আইন দেখাতে ব্যর্থ হয় পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।