শহীদনুর আহমেদ:
২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে চারুশিল্প, থিয়েটার ইত্যাদি খাত থেকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন সুনামগঞ্জের ১৯ টি সংগঠনকে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ও সর্বনি¤œ ১০ হাজার করে মোট ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা অনুদান দিচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। অনুদানের আওতায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ১৪ টি, ছাতক উপজেলার ৪টি ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ১টি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে এই সংগঠন গুলোর বেশির ভাগই নিষ্ক্রীয় ও নামমাত্র সংগঠন। নাটক, গান, নৃত্য, আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সোচ্চার ও সক্রিয় সংগঠনকে এই অনুদানের বাইরে রাখা হয়েছে কৌশলে। স্বজনপ্রীতি আর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিষ্ক্রয় সংগঠনগুলোকে সরকারি অনুদান প্রদান পাইয়ে দিচ্ছে একটি চক্র। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শহরের মূলধারার সংস্কৃতিসংগঠনের কর্মীরা। এভাবে চলতে থাকলে সরব সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সংস্কৃতিচর্চায় নিরুৎসাহী হবে বলে সংঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের স্বরবিতান সংগীত নিকেতনকে ২৫ হাজার, স্পন্দন সাংস্কৃতিক সংস্থাকে ৩৫ হাজার, বুলবুল সংগীত নিকেতন ২৫ হাজার, ধানেশ্রী সংগীত নিকেতন ৩০ হাজার, শুদ্ধ সংগীত পরিষদকে ৩০ হাজার, সুরালোক সাংস্কৃতিক সংস্থাকে ৩০ হাজার, সুন্দরম শিল্পীগোষ্ঠীকে ২০ হাজার, লোকদল শিল্পীগোষ্ঠীকে ২০ হাজার, বন্ধন থিয়েটারকে ১৫ হাজার, বাউল কামালপাশা সংস্কৃতি সংসদকে ১৫ হাজার, নৃত্যাঙ্গনকে ১৫ হাজার, সৃষ্টি আবৃত্তি অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ১৫ হাজার, সারেগামা শিশু সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ১০ হাজার , কল্পতরু সংগীতালয়কে ১০ হাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলার জ্ঞানের সাগর বাউল ফকির দুর্বিন শাহ পরিষদকে ২৫ হাজার, মেঠোসুর সাংস্কৃতিক বিদ্যাপীঠকে ২০ হাজার, রমিজি শিল্পী গোষ্ঠীকে ১৫ হাজার, সুর নিকেতন একাডেমিকে ১৫ হাজার এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সুর ঝংকার শিল্পী সংস্থাকে ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দের অনুদান মঞ্জুর করা হয়। অভিযোগ উঠেছে এই সংগঠনগুলোর মধ্যে অর্ধেকের বেশিভাগ নিষ্ক্রীয়। এদের একাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একটি সিন্ডিকেট। শিল্পকলা একাডেমি কেন্দ্রিক একটি চক্র পছন্দের তালিকা তৈরি করে বিভিন্ন সময়ে নানা সুযোগ সুবিদা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারের বরাদ্দে এক সংগঠনে তিনটি শাখাকে পৃথক পৃথক অনুদানের আওতায় আনার অভিযোগও পাওয়া গেছে। তাছাড়া অনুদানের আবেদন ফরম ছাড়ার সময়ে মূলধারার সংগঠনকে জানানো হয়নি এমন অভিযোগও আছে।
জানা গেছে এমন কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে যারা বছরের বেশিরভাগ সময় নাটক, গান, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে মাতিয়ে রাখেন সুনামগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গনকে। তাদের প্রায় সব কয়টিকে এই অনুদানের বাইরে রাখা হয়েছে। অনুদানের বাইরে রাখা হয়েছে সুনামগঞ্জ প্রসেনিয়াম নাট্য সংগঠন, থিয়েটার সুনামগঞ্জ, উদীচী, রঙ্গালয়, রংধনু, খেলাঘর, কালচারাল ফোরাম, স্বপ্নদার্শ, শতদল শিল্পীগোষ্ঠীসহ কয়েকটি সক্রিয় সংঠনকে। সক্রিয় সংগঠনগুলোর পরিবর্তে নিষ্ক্রীয় সংগঠনকে সরকারকর্তৃক অনুদান দেওয়াতে সংস্কৃতি চর্চায় নিরুৎসাহী করা হচ্ছে বলে মনে করছেন একাধিক সংস্কৃতিকর্মী।
সুনামগঞ্জ প্রসেনিয়াম থিয়েটারের সাবেক দলনেতা দেবাশীষ তালুকদার শুভ্র বলেন, সুনামগঞ্জের যে কয়েকটি সক্রিয় সংগঠন রয়েছে তাদের মধ্যে প্রসেনিয়াম থিয়েটার অন্যতম। বছরের নাট্য নাট্য উৎসব, ধারাবাহিকভাবে মঞ্চ নাটক মঞ্চায়ন, আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে প্রসেনিয়াম সোচ্চার আছে। থিয়েটারের সদস্যরা নিজেদের টাকা ব্যয় করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। আমরা চেতনার জায়গা থেকেও প্রগতির পক্ষেও কর্মসূচি পালন করি। সরকার কর্তৃক অনুদান সক্রিয় সংগঠনরা পেলে সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ পাবে ।
রঙ্গালয় সুমাগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, গত দুইতিন বছর ধরে আমার সংগঠন নাট্যঙ্গনে সংক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে । সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা শিল্পকলার মাধ্যমে অনুদান প্রাপ্তির জন্যে আবেদন চাওয়া হলো অথচ আমাদেরকে জানানোই হল না। হঠাৎ শুনি ১৯টি সংগঠনকে এই অনুদান দেয়া হচ্ছে। এই সংগঠনগুলোর মধ্যে ১টি সংগঠনের একাধিক শাখাও রয়েছে।
থিয়েটার সুনামগঞ্জের দলপ্রধান দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে সুনামগঞ্জের ১৯টি সংগঠনকে অনুদান মঞ্জুর করা হলো। অথচ যারা সারা বছর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সক্রিয় থাকেন তাদেরকে এই তালিকার বাহিরে রাখা হলো। এমন অবস্থায় সাংস্কৃতিক চর্চায় নিরুৎসাহী হবে সক্রিয় সংগঠনগুলোর কর্মীরা।
সুনামগঞ্জ ফিল্ম সোসাইটির পরিচালক শামস শামীম বলেন, সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি একটি চক্রের হাতে দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি। এরা কৌশলে মূলধারার সংস্কৃতিকর্মীদের বাইরে রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কার্যক্রমই পরিচালনা করছেনা মূলধারার সংগঠনগুলোকেও নানাভাবে বঞ্চিত করছে তারা।
অনুদানের ব্যাপারে জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল বলেন, অনুদান প্রাপ্তির জন্যে নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। যা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাচাই করা হয়েছে। যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্য থেকে অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। এখানে কোনো স্বজনপ্রীতি করা হয়নি।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শামছুল আবেদীন বলেন, এ ব্যাপারে একাটি কমিটি রয়েছে। যারা সংঠন বাচাই করছেন। স্বীকার করছি কয়েকটি সক্রিয় সংগঠন অনুদানের বাহিরে রয়েছে। তাদেরকে আগামীতে সম্পৃক্ত করা হবে।
(সৌজন্য: দৈনিক সুনামকণ্ঠ)