1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

রেড স্যালুট! কমরেড জাফর

  • আপডেট টাইম :: বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯, ১০.৫৮ এএম
  • ৩৩২ বার পড়া হয়েছে

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ::
কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ আজ আর আমাদের মাঝে নেই। গত ২৯ মে পার্টির কাস্তে-হাতুড়ি খচিত লাল পতাকায় তাঁর মরদেহ সযত্নে আচ্ছাদিত করে, সমবেত কণ্ঠে ‘আন্তর্জাতিক’ সংগীত গেয়ে, তাঁকে আমরা চিরবিদায় জানিয়েছি। আমাদের মাঝে তিনি আজ সশরীরে নেই। তিনি আর ফিরেও আসবেন না। কিন্তু তাঁর এই চিরবিদায় যেমন সত্য, তেমনই এ কথাও সত্য যে-মৃত্যুতেই নিঃশেষ নয় কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের অস্তিত্ব। তিনি আজও বেঁচে আছেন, অন্যভাবে। তিনি চিরঞ্জীব। তিনি বেঁচে থাকবেন শুধু ‘অতীত’ হিসেবে নয়। বেঁচে থাকবেন প্রতি মুহূর্তের ‘বর্তমানে’র মাঝে। বেঁচে থাকবেন জীবন্ত হয়ে, অস্তিত্বমান থাকবেন সাম্যের সভ্যতা নির্মাণের পথে মানবজাতির অক্ষয় সংগ্রামের মাঝে। বেঁচে থাকবেন এ দেশের মেহনতি মানুষের স্বপ্নে এবং সেজন্য তাঁদের অন্তহীন নিত্যদিনের সাধনার মাঝে। জয়তু কমরেড সৈয়দ জাফর আহমদ!

কমরেড সৈয়দ জাফর আহমদ কমিউনিস্ট পার্টির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন একজন জননেতা, অগণিত জনগণের কাছের বন্ধু, তাঁদের একান্ত আপনজন। নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তাঁর উপস্থিতি দৃষ্টিগোচর করার জন্য ক্যাডারবাহিনী নিয়ে তিনি চলাফেরা করতেন না। চালচলনের চমক দিয়ে তিনি নিজেকে নেতৃত্ব-উপযোগী বলে প্রদর্শনের চেষ্টা করতেন না। ঢং ও চরিত্রে তিনি ছিলেন হালফ্যাশনের নেতাদের থেকে ভিন্নরকম।

একজন ভালো নেতার কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে প্রণিধানযোগ্য একটি কথা হলো-“একজন ‘প্রকৃত নেতার’ লক্ষ্য হওয়া উচিত তাঁর ব্যক্তিগত ‘অনুগামী’ (follower) সৃষ্টি করা নয়। তাঁর লক্ষ্য হওয়া উচিত নতুন ‘নেতা’ (new leader) তৈরিতে সহায়তা করা।” এ ধরনের নেতা আমাদের দেশে আজ বিশেষভাবে প্রয়োজন। চারদিকে আজকাল ‘নেতা’-র ছড়াছড়ি। আগে ‘নেতা’র ছড়াছড়ি থাকলেও, এখন তার আধিক্য এত বেশি যে, তা আজ সমাজের জন্য এক প্রচণ্ড বিপজ্জনক বোঝা হয়ে উঠেছে। এখন টাকা খরচ করতে পারলে অতি সহজেই ‘নেতা’ বনে যাওয়া যায়। ‘হাইব্রিড’ নেতা, ‘ওয়ান টাইম’ নেতা, ‘বাণিজ্যিক’ নেতা-এমন নানা বাহারের নেতায় দেশ আজ গিজগিজ করছে। কিন্তু উল্লিখিত ধরনের ‘প্রকৃত নেতা’ কমতে কমতে আজকাল অনেকটাই ‘বিরল প্রজাতি’তে পরিণত হয়েছে। এ রকম ‘প্রকৃত নেতা’র কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বলে যেসব নেতাকে বিবেচনা করা যায়, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ। এ কারণে তাঁর চলে যাওয়া অতিরিক্ত মাত্রায় শূন্যতা সৃষ্টির একটি কারণে পরিণত হয়েছে।

কমরেড জাফর ‘নেতাগিরি’ জাহিরের ‘প্রদর্শনবাদ’ অধুনা ফ্যাশনকে সযতেœ ও সচেতনভাবে পরিহার করে চলতেন। নিজের দল হোক, অথবা অন্যান্য দলের নেতা-কর্মী হোক, কিংবা সাধারণ মানুষ হোক, কমরেড জাফর তাঁদেরকে ‘আবেগপূর্ণ উচ্চারণ’, ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ ইত্যাদি কৃত্রিম কলাকৌশল দ্বারা অভিভূত করে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতেন না। ব্যক্তিগত ‘ক্যারিজমা’ গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি তাঁর চারদিকে ভক্তিবাদের বিমূর্ত ইন্দ্রজাল বিস্তার করে প্রভাব ছড়ানোর চেষ্টা করতেন না। তিনি নাটকীয়তামুক্ত ভঙ্গি ও ভাষায় ধীরস্থির অথচ সুতীক্ষè যুক্তির উপস্থাপন দ্বারা তাঁর সংস্পর্শে আসা সবার মধ্যে অভিজ্ঞতা ও চেতনার আলো ছড়িয়ে দিতেন।

একটি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি যে খুব কঠিন একটি দায়িত্ব, তা সবারই জানা আছে। কমরেড সৈয়দ জাফর আহমদ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ব্যাপক সংখ্যক সদস্যদের আস্থাভাজন হয়ে পরপর দুইবার পার্টির দশম ও একাদশ কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই গুরুদায়িত্ব তিনি দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পালন করে গেছেন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হন। শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে, তাকে এক রকম উড়িয়ে দিয়ে, তিনি তাঁর প্রবল প্রাণশক্তি ও মনের জোর খাটিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদকের সেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন। শরীরের ওপর চাপ পড়ছে এবং শরীরের গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে জেনেও, তিনি তাঁর সে দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটাতে দেননি।

কিন্তু শরীরের কর্মক্ষমতারও একটা সীমা থাকে। কমরেড জাফরের অসুস্থতা ক্রমেই multi-organic হয়ে উঠেছিল। পার্টি নেতৃত্ব তাঁকে শারীরিক চিকিৎসার কাজটিকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছিল। তিনি বিদেশে গিয়েও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। এই সুস্থ এই অসুস্থ-এ রকম একটি দোলাচলের মধ্যে তাঁর শরীর নিপতিত হয়েছিল। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন যে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে তাঁকে পার্টির কাজ কমিয়ে দিয়ে বেশি করে বিশ্রামে থাকতে হবে। পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে তিনি যেন আবার ‘ফুল স্পিডে’ পার্টির কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারেন, সে কথা বিবেচনা করে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। বাস্তব সীমাবদ্ধতার কারণে নির্ধারিত দায়িত্বগুলো তিনি সর্বাংশে পালন করতে পারছেন না-এ কথা জেনেও সাধারণ সম্পাদকের পদ আকড়ে থাকার চেষ্টা তিনি করেননি।

কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ সিপিবির একজন ‘ভেটারেন’ নেতা ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সিপিবির পঞ্চম কংগ্রেসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ১৯৯৫ সালে পার্টির ষষ্ঠ কংগ্রেসে সিপিবির প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পার্টির সেসব কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দায়িত্ব আমৃত্যু পালন করে গেছেন। পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্বটি হলো পার্টি-কেন্দ্রকে ভিত্তি করে পরিচালিত জাতীয় পর্যায়ের একটি দায়িত্ব। এর আগে কমরেড জাফর মৌলভীবাজার জেলায় পার্টি, চা বাগান শ্রমিক সংগঠন, ক্ষেতমজুর সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন প্রভৃতি সংগঠনের জেলা পর্যায়ে মূল দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন গড়ে উঠেছিল একদম তৃণমূল থেকে একজন ‘মফস্বলের নেতা’ হিসেবে। সে অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে তিনি জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব পালনে সক্ষম হয়েছিলেন।

এটি খুব সহজ-সরল বিষয় ছিল না। জাতীয় পর্যায়ে পার্টি নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি ‘মফস্বল নেতৃত্বে’র কাজের সরল গুণফল নয়। এ দুটি কাজের বিষয়বস্তু, চরিত্র ও ধারার ক্ষেত্রে গুণগত ও মাত্রাগত পার্থক্য আছে। এমনকি, গণসংগঠনসমূহের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের কাজের বিষয়বস্তু, চরিত্র ও ধারার সরল যোগফল দ্বারা একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে কমিউনিস্ট পার্টির মতো দলের, জাতীয় নেতৃত্বের কর্তব্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাধিত হয়ে যায় না। সেজন্য দায়িত্বের উপলব্ধি, প্রেক্ষিত বিবেচনা, দৃশ্যপটের বিস্তৃতি, অভিজ্ঞতার সংশ্লেষণ, কাজের ধরন ইত্যাদি ক্ষেত্রে একটি গুণগত উত্তরণের প্রয়োজন হয়। কমরেড জাফরের মতো একজন ‘মফস্বলের নেতা’র পক্ষে জাতীয় পর্যায়ে পার্টিকে নেতৃত্ব দেয়ার কাজে দক্ষ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সে উত্তরণ ঘটেছিল অভাবনীয় দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে। এ বিষয়ে তাঁর উপলব্ধি, অধ্যবসায় ও আত্মপ্রচেষ্টা ছিল অসাধারণ।

সিলেট-মৌলভীবাজরের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এই জেলাগুলোর প্রায় সব শিক্ষিত পরিবারের সদস্যরা একটু বয়স হলেই ‘লন্ডনে’ গিয়ে বসবাস শুরু করেন। ব্রিটিশ আমল থেকেই এ রকম ঘটে চলেছে। কমরেড জাফরের ৪ ভাই-ই একে একে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। একই ধারাবাহিকতায় জাফরেরও হয়ত বিদেশ চলে যাওয়াটিই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিনি সে পথে না গিয়ে, দেশের অভ্যন্তরেই রাজনৈতিক জীবন পরিচালনায় অটল থেকেছিলেন। স্ত্রীর চাকরির বেতনে ও ভাইদের অকৃত্রিম সহায়তায় তাঁর সংসারের ব্যয়ভার চলত। কমরেড জাফর ‘পার্টি সার্বক্ষণিকে’র কঠিন জীবন বেছে নিয়েছিলেন। সার্বক্ষণিকের অভাবের জীবন সত্ত্বেও স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্রের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও স্নেহ-যত্নের কোনো কমতি কখনই ছিল না।
সৈয়দ আবু জাফর যখন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা, সেসময়ই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটেছিল। পরবর্তীতে, আশির দশকে একসঙ্গে ক্ষেতমজুর সমিতির কাজ করার মধ্য দিয়ে আমাদের পরিচয় ঘনিষ্ঠ ‘কমরেডশিপে’ উন্নীত হয়েছিল। ৯০-এর দশকের শুরুতে পার্টিতে ‘বিলোপবাদী’ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। তখন কেন্দ্রীয় কমিটির যে ১৩ জন সদস্য বিলোপবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পার্টির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কঠিন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, কমরেড জাফর ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার ‘কমরেডশিপ’ আরও নিবিড় হয়ে উঠেছিল। নীতি-দর্শন-আদর্শ-রাজনীতি-সংগঠন প্রভৃতি বিষয়ে পরবর্তী সিকি শতাব্দীরও বেশি সময় আমরা প্রায় সব বিষয়ে একই চিন্তার ধারায় একসঙ্গে পথ চলেছি। তিনি ছিলেন আমার ‘কমরেড-ইন-আর্মস’।

আইউব আমলে কমরেড জাফর ছিলেন কলেজের ছাত্র। তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই কমরেড জাফর ছিলেন আন্দোলন-সংগ্রাম-রাজনীতিতে সক্রিয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সাধারণ ছাত্রদের মধ্যেও তাঁর ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তিনি ১৯৭০ সালে মৌলভীবাজারে সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধের পর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্র থাকা অবস্থাতেই তিনি চা বাগানের শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তিনি ১৯৭২ সালে একবার কারাবরণ করেন এবং ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় গ্রেপ্তার হন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি তাঁর জেলায় স্থানীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং সে কারণে ফের গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর বিনা বিচারে জেলে বন্দী থাকেন। এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অগ্রভাগে থেকে লড়াই করার কারণেও তাঁকে নানাভাবে নিগৃহীত ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

এরশাদি শাসনের অবসানের কিছুদিন পর থেকে, বিশেষত পার্টির মধ্যে থাকা বিলোপবাদীরা পার্টি ত্যাগ করার পর, পরিবারসহ মৌলভীবাজারে থাকা সত্ত্বেও তাঁকে পার্টির হেডকোয়ার্টার কেন্দ্রীক জাতীয় কাজকর্মে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়তে হয়। ২০১২ সালে পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি তাঁর পরিবারকে মৌলভীবাজারে রেখে ঢাকায় চলে আসেন। পুরানা পল্টনের পার্টি অফিসের একটি ছোট রুমকে তাঁর থাকার জায়গা করে নিয়ে তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডকে পরিপূর্ণভাবে রাজধানীকেন্দ্রীক ও জাতীয়ভিত্তিক করে ফেলেন।

কমরেড জাফরের অনন্য গুণাবলির মধ্যে তাঁর তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ক্ষমতা, তত্ত্ব ও তথ্যকে আত্মস্থ করার সক্ষমতা, বহুমাত্রিক বিষয়গুলোকে একসঙ্গে মিলিয়ে ‘হোলিস্টিক’ভাবে দেখার সামর্থ্য ইত্যাদির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। তিনি সাধারণত কণ্ঠ উঁচু করে কথা বলতেন না। প্রকৃতিগতভাবে তিনি শান্ত স্বভাবের ছিলেন। সিদ্ধান্ত নেয়া বা মতামত স্থির করার ক্ষেত্রে তাঁর এই শান্তভাব ‘মেরুদণ্ডহীনতা’র প্রকাশ ছিল না। ভিন্ন চিন্তাকে বিবেচনায় নেয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে উন্মুক্ত রাখলেও, তাঁর নিজের মতামতের বিষয়ে তিনি খুবই দৃঢ় ও অটল থাকতেন। কখনও কখনও তা হয়তো একটু বেশিই থাকতেন। পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে পড়লে অসীম সাহসী ও লড়াকু অন্য এক সৈয়দ জাফরের স্বরূপ প্রকাশ হয়ে পড়ত। প্রয়োজনে তিনি তাঁর রুদ্র রূপ নিয়ে মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশি বাধা মোকাবিলা করতেন।

প্রত্যক্ষ রাজনীতির নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী আন্দোলন-সংগ্রাম-সংগঠনের কাজে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র থাকাকালেই তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি মৌলভীবাজারের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ‘মনুবার্তা’র সম্পাদক-প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাপ্তাহিক ‘একতা’-য় নিয়মিত লিখতেন। লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, স্বৈরতন্ত্র-গণতন্ত্রহীনতা, অপরাজনীতি, অপরাধ-সিন্ডিকেট, সামাজিক অনাচার ইত্যাদির বিরুদ্ধে এবং ‘মানুষ ও প্রকৃতির মুক্তি’র সপক্ষে তাঁর কলম ছিল সদা সক্রিয়। কমরেড জাফর ছিলেন মাঠে-ময়দানে একজন সাহসী সৈনিক, তৃণমূলের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত জাতীয় পর্যায়ের সংগ্রামের একজন সেনাপতি, একজন দক্ষ সংগঠক, মার্কসবাদ ও রাজনীতির বিষয়ে একজন সৃজনশীল তাত্ত্বিক, খেটে খাওয়া মানুষের একান্ত একজন আপনজন ও সর্বোপরি একজন অনন্য ‘ভালো মানুষ’।

একজন ভালো নেতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পরিশেষে আরেকটি উদ্ধৃতির আশ্রয় নিয়ে বলছি যে-“সেই নেতাই সর্বোত্তম, যাঁর অস্তিত্ব মানুষ মোটেই টের পায় না। যখন তাঁর কাজ সম্পাদিত হয়, লক্ষ্য অর্জিত হয়, তখন জনগণ বলে- ‘আমরা নিজেরাই কাজটি করেছি’।” অজ্ঞাত সূত্রের এই উদ্ধৃতিটি কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের ক্ষেত্রে বহুলাংশে প্রযোজ্য। তিনি শুধু ‘নেতা’ ছিলেন না, তিনি ছিলেন সে রকম ‘সর্বোত্তম’ প্রকৃতির ‘নেতা’।
রেড স্যালুট, কমরেড জাফর!
[ফেসবুক থেকে]

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!