সিলেট প্রতিনিধি::
তাহিরপুরের বাদাঘাট পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়য়ের পরীক্ষার হলে নকলে বাধা দানের কারনে এক বখাটে কর্তৃক শিক্ষককে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে সিলেটে মানব্বন্ধন করেছে উক্ত বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার বিকাল ৪ টায় উক্ত মানববন্ধনে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ যোগ দেন। মানববন্ধন চলাকালে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তারা এই বখাটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তারা জানান, এই বখাটে তোফাজ্জল ইতোপূর্বেও আরও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। বখাটেপনাই তোফাজ্জলের কাজ। প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হিসেবে এসব করে পার পেয়ে দিনে দিনে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নির্যাতিত মানুষজন বিচার না পাওয়ায় এবং তার পরিবারের ভয়েও আইনী আশ্রয় নিতে ভয় পান বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। দীর্ঘদিন ধরে তোফাজ্জল বাদাঘাট সরকারি কলেজ ও পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে অবাধে প্রবেশ করে ক্যাম্পাসেই বখাটেপনা করে। তাছাড়া স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের রাস্তাঘাটেও উত্ত্যক্ত করে সে। গাছে বেঁধে একজন বয়স্ক লোককে মারপিট করে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে মারপিট করে। এমন অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। এরা সমাজের কলঙ্ক। এদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে সমাজকে কলঙ্কমমুক্ত করতে হবে।
বাদাঘাট পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও তাহিরপুর সমিতি, সিলেটের সভাপতি এডভোকেট মোঃ আলী হায়দারের সভাপতিত্বে ও কাসমির রেজা’র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সিলেট জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম, সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি বাহার উদ্দিন আখন্দ, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদ, সিলেট জেলার সভাপতি জ্যোতিষ মজুমদার, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, সিলেট বিভাগীয় শাখার সভানেত্রী নাদিরা সুলতানা, কবি আবিদ ফায়সাল, তাহিরপুর সমিতি, সিলেটের সাবেক সভাপতি শওকত হাসান নবাব, উপদেষ্টা তারা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রজত সরকার, সহসভাপতি সালাউদ্দিন আহমদ, জগন্নাথপুর সমিতি, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খসরু, সাংবাদিক এনামুল হাসান টিটু, সুজন সিলেট জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, স্বোচ্চার শাল্লার সাধারণ সম্পাদক অর্জুন কুমার, ব্যাংকার সলিল রায়, আবুল বাশার, আতিকুর রশীদ, জামিল আহমদ, জীবন কৃষ্ণ সরকার, মোশারফ হোসেন শান্ত, ইঞ্জিনিয়ার সশফিকুল ইইসলাম, নুরজামাল, নারী উদ্যোক্তা ফারমিস আক্তার, শিরিন আক্তার, মার্জিয়া আক্তার রুমা, আরসিএ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সজিব আহমদ সজল, সহসভাপতি ফখরুদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান, নারজেল, এহসান,এনামূল, হাসান শাহরিয়ার,সাব্বির আহমেদ,আবু বক্কর, রিফাতুল হাসান,আমিনূল হক,মাইনূদ্দিন হাসান,নৌশিন,ফারহানাসহ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
পরীক্ষার্থীকে নকলে বাধা দেয়ায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষককে পেটানো মামলার প্রধান আসামি তোফাজ্জলকে অবশেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।তোফজ্জল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। এরই মধ্যে তোফাজ্জলের বাবা এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আবু তাহের মিয়ার সদস্য পদ বাতিল করা হয়।
উল্লেখ্য, ১ জুন রোববার সকালে বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে নকলে বাঁধা দেন বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক। তারপর ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীকে হলে উত্যক্ত করছিল। এ সময় বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন ওই শিক্ষক।
এদিকে ওই শিক্ষার্থী পরিবারের কাছে তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা জানায়। পরে ওই শিক্ষার্থীর নানা বিদ্যালয় পরিচালানা কমিটির সদস্য আবু তাহের বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই শিক্ষককে ছাত্র-ছাত্রী, অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের সামনে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন।
এদিকে ঘটনাটি তাহেরের ছেলে তোফাজ্জলের কানে এলে তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে ফের বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষক মাজেদুল ইসলামকে মারধর করে পরীক্ষায় অংশ নেয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।
ঘটনাটি দেখে প্রধান শিক্ষক দৌঁড়ে এসে তোফাজ্জলকে বাঁধা দেয়। এ সময় তোফাজ্জল প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দানুকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং এক পর্যায়ে গুলি করে হত্যার হুমকিও প্রদান করেন।
এ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তোফাজ্জল তার সহযোগীদের নিয়ে পালিয়ে যায়।