অনলাইন ডেক্স::
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধু ও একাত্তরে বাংলাদেশের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তোলে ধরার সেই বিশিষ্ট সাংবাদিক শনবার্গ আর নেই। পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাবেক এই প্রতিনিধি শনিবার নিউ ইয়র্কের পগকিপসি শহরে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। মঙ্গলবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন বলে তার এক বন্ধুর বরাত দিয়ে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি ছিলেন। একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার খবর বিশ্ববাসীর কাছে সামনে তুলে ধরেছিলেন শনবার্গ।
এই মার্কিন সাংবাদিক ১৯৭৫ এ কম্বোডিয়ায় গণহত্যার সংবাদ সংগ্রহের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ: নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান’ শিরোনামে একটি বই রয়েছে তার।
কম্বোডিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণ নিয়ে ১৯৭৩ সালের অগাস্টে এক সরকারি সেনা সদস্যের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সিডনি শনবার্গ (মধ্যে), তার পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগী ডিথ প্রাণ (ডানে)। ছবি নিউ ইয়র্ক টাইমসের সৌজন্যে।
কম্বোডিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণ নিয়ে ১৯৭৩ সালের অগাস্টে এক সরকারি সেনা সদস্যের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সিডনি শনবার্গ (মধ্যে),
তার পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগী ডিথ প্রাণ (ডানে)। ছবি নিউ ইয়র্ক টাইমসের সৌজন্যে।
মফিদুল হকের অনুবাদে ওই বই বাংলায় প্রকাশ করেছে সাহিত্য প্রকাশ।
বইয়ের ভূমিকায় লেখা হয়েছে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক সিডনি শনবার্গ ঢাকায় থেকে ২৫ মার্চের গণহত্যা প্রত্যক্ষ করেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশে পাকিস্তান সরকার তাকে বহিষ্কার করে।
তবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহিষ্কৃত হলেও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে সরে যাননি শনবার্গ। নিউ ইয়র্ক টাইমসের দিল্লি ব্যুরো চিফ হিসেবে বারবার ফিরে আসেন সীমান্ত এলাকায়। কখনো মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ঢুকে পড়েন মুক্তাঞ্চলে, প্রত্যক্ষ করেন যুদ্ধ অপারেশন, ঘুরে দেখেন শরণার্থী শিবিরগুলো।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকারের অনুমতি নিয়ে জুন মাসে আবার বাংলাদেশে আসেন শনবার্গ। তবে ঢাকা থেকে তার করা প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ হয়ে ফের তাকে দেশ থেকে বের করে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ।
পরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের সঙ্গী হয়ে যশোর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন শনবার্গ, ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়ের সাক্ষী ছিলেন তিনি।
পরে যুদ্ধের খবর সংগ্রহে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যান শনবার্গ। পঁচাত্তরে কম্বোডিয়ায় খেমার রুজ শাসন আমলে গৃহযুদ্ধ ও গণহত্যার সংবাদ সংগ্রহের সময় সহযোগী ডিথ প্রাণের গেরিলাদের হাতে বন্দি হওয়া ও সেখান থেকে বেঁচে আসা নিয়ে ‘দ্য ডেথ অ্যান্ড লাইফ অফ ডিথ প্রাণ’ শিরোনামে একটি বই লেখেন তিনি।
১৯৮০ সালে প্রকাশিত ওই বই নিয়ে পরে ‘দ্য কিলিং ফিল্ডস’ চলচ্চিত্র হয়।
১৯৫৯ সালে কপি লেখক হিসেবে নিউ ইয়র্ক টাইমসে যোগ দেওয়ার পর ২৬ বছর সেখানে কাজ করেন শনবার্গ।
পুলিৎজার ছাড়াও জর্জ পোল্ক মেমোরিয়াল পুরস্কাসহ সাংবাদিকতার অনেক সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।