রাজু ভুঁইয়া, ধর্মপাশা ::
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় গরুচুরির ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে মাতব্বরদের দেওয়া ‘গরু চোর’র অপবাদ সইতে না পেরে ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বরই গ্রামে গত সোমবার রাতে আজিজুল খাঁ (৩৬) নামের এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। এ নিয়ে প্রয়াত আজিজুল খাঁ’র পরিবারের স্বজনদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার চামরদানি ইউনিয়নের আমজোড়া গ্রামে বাবুল মিয়া নামের এক কৃষকের বাড়িতে একটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। এ চুরির ঘটনায় জয়শ্রী ইউনিয়নের বরই গ্রামের আজিজুল খাঁ ও আলাল মিয়ার বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ আনা হয়। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার জন্য শনিবার দুপুরে জয়শ্রী ইউনিয়নে গ্রাম্য মাতব্বরদের উপস্থিতিতে স্থানীয় বরই বাজারে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গরু চুরির মূল্য বাবদ আজিজুল খাঁ ও আলাল খাঁকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে সালিশ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও গ্রাম্য মাতব্বর আলী উছমানের কাছে এ জরিমানার টাকা প্রদান করার কথা ছিল।
সোমবার রাত ৯টার দিকে আজিজুল খাঁ রাতের খাবার খেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ওই রাতের কোনো এক সময় আজিজুল নিজ ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির পেছনে একটি গাছের ডালে গলায় রশি বেঁধে আত্মহত্যা করেন বলে জানান পরিবারের লোকজন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ধর্মপাশা থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে ওই ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
নিহত আজিজুল খাঁর স্ত্রী সাহিনা আক্তার (২৬) বলেন, আমার স্বামী গরু চোর নয়। মাতব্বরেরা ঘটনা সাজাইয়া আমার স্বামীরে চোর বানাইছে। আমি এইডার বিছার চাই।
সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকা জয়শ্রী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলেও তিনি কল ধরেননি।
ধর্মপাশা থানার ওসি মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ আত্মহত্যার ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে গ্রাম্য সালিশে গরুচুরির বিচার করার কোনো এখতিয়ার নেই। এই আত্মহত্যার সঙ্গে গ্রাম্য সালিশের কোনো যোগসাজশ রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।