স্টাফ রিপোর্টার::
গত শনিবার ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া মোহনা টিভির সাংবাদিক মুশফিকুর রহমানকে সুনামগঞ্জ সিলেট-সড়কের গোবিন্দপুর মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় ফেলে গেছে দুবৃত্তরা। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় স্থানীয় স্থানীয় মুসল্লিরা নামাজে আসার পথে তাকে দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে নিয়ে যেতে গুলশান থানা পুলিশ ও তার স্বজনরা সুনামগঞ্জ আসার পর স্থানীয় পুলিশ তাকে সন্ধ্যায় স্বজন ও গুলশান পুলিশের কাছে হস্থান্তর করেছে।
পুলিশ ও মুসল্লিরা জানান, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গোবিন্দপুর গ্রামের মুসল্লিরা মসজিদে ফজরের নামাজের জন্য আসছিলেন। এ সময় লক্ষ্য করেন একজন মানুষ হন্তদন্ত হয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। মুসল্লিরা এগিয়ে আসলে তিনি পড়ে যান। তারা তাকে মসজিদে নিয়ে নাকমুখে পানি ছিটা দেন। তার জ্ঞান ফিরলে তিনি পানি খেতে চান এবং জায়গার নাম জানতে চান। পরে তিনি তার পরিচয় দিলে মুসল্লিরা থানায় যোগাযোগ করেন। সদর থানার এসআই জিন্নাতুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে সকাল সাড়ে ৭টায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে তাকে চিকিৎসা দিয়ে শঙ্কামুক্ত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। হাসপাতালের বেডে শুয়েই তিনি তার স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশকেও নানা বিষয়ে তথ্য দেন।
এ সময় সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান বলেন, অপহরণের পর আমাকে চোখ বেধে নানা জায়গায় নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। আমাকে পানি ও খাবারও দেয়নি। সুনামগঞ্জে এসে ফেলে যাবার আগে আমাকে গাড়িতে জিজ্ঞেস করে আমাকে নিয়ে কেন মিডিয়ায় এত তোলপাড়। এসব কথা বলে আমাকে কিলঘুষি ও লাতি দেয়। অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। তিনি আরো বলেন, আমাকে কেন অপহরণ করা হয়েছে জানিনা। তবে সম্প্রতি কুমিল্লায় একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর আমাকে বিরোধীরা হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। তারা কাউকে দিয়ে এটা করিয়েছে কি না সেটা তদন্ত হওয়া উচিত।
এ সময় কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ব্যাথায় তিনি কাতরাচ্ছিলেন। চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক। মাঝে মধ্যে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, পুলিশের প্রশ্নেরও উত্তর দিচ্ছিলেন।
গোবিন্দপুর গ্রামের উদ্ধারকারী যুবক ফুয়াদ বলেন, মুসল্লিরা মসজিদে আসছিলেন। এ সময় দেখি একজন মানুষ রাস্তায় হন্তদন্ত হয়ে বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করছে। এগিয়ে গিয়ে আমরা দেখি তিনি কাপছেন, কথা বলছেন। আমরা তাকে মসজিদে নিয়ে পানি পান করাই। পরে পুলিশকে খবর দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাই। হাসপাতালে এসে তিনি পরিবারের অনেকের সঙ্গেই মোবাইলে কথা বলেন।
সদর থানার উদ্ধারকারী এসআই জিন্নাতুল ইসলাম জানান, সাংবাদিক মুশফিককে উদ্ধারের সময় তারা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পান। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা শুরু হলে কতাবার্তা বলতে শুরু করেন। তিনি তার মা ও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাকে জানিয়েছেন অপহরণকারীরা তার চোখ বেঁধে নিয়েছিল। কিছু দেখতে পারেননি। হাসপাতাল থেকেই তিনি তার স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মঙ্গল বিকেলে মুশফিকের বড় ভাই পাভেল ও মোহনা টিভির ঢাকা অফিসের একজন সাংবাদিকসহ গুলশান থানার পুলিশ এসেছিলেন। আমরা তাকে আইনী প্রক্রিয়ায় হস্থান্তর করেছি।
সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান সুস্থ। তিনি স্বাভাবিক কথা বার্তা বলতে পারছেন। তিনি শঙ্কামুক্ত। তবে তার শরিরে কিলঘুষির চিহ্ন আছে।
উল্লেখ্য গত শনিবার রাতে ঢাকার মহাখালি এলাকা থেকে নিখোজ হন সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান। এ ঘটনায় গুলশান থানায় ওইদিনই সাধারণ ডায়েরি করেন স্বজনরা।