বিশেষ প্রতিনিধি, শাল্লা::
ভেলা নদী ভাঙ্গনে বিলীন হতে চলেছে দিরাই শাল্লার সীমান্তবর্তী জয়পুর গ্রাম। এবারের বর্ষায় নদীগর্ভে চলে গেছে গ্রামের ৯ টি পরিবারের বসতঘর। অন্য পরিবার গুলোও এখন আতঙ্কে আছে। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও এখন হুমকির মুখে পড়েছে। সর্বনাশা হয়ে ওঠা নদীটি এখন গ্রামবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম। গ্রামবাসী বিশেষ প্রকল্প নিয়ে তাদের গ্রামটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। গ্রামবাসী জানিয়েছেন উদগল হাওরের ফসলরক্ষা বাধ বর্ষায় ভেঙ্গে দেওয়ায় এই চাপ পড়ে গ্রামের উপর। ফলে প্রবল ¯্রােতে ভেঙ্গে যাচ্ছে গ্রামটি।
সরজমিনে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় দিরাই উপজেলার উদগল হাওরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত জয়পুর গ্রামটি। এই গ্রামে ৯০ টি পরিবারের বাস। চারদিকে হাওর বেষ্টিত গ্রামটি রক্ষার জন্য পূর্ব দিকে প্রতিরক্ষা দেয়াল রয়েছে। সেই দেয়ালও ভেঙ্গে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেয়াল না থাকায় ভাঙ্গন আরো প্রবল হয়েছে। গত কয়েক বছরে ভাঙ্গনে এই গ্রামের একাধিক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। এভাবে চললে পুরো গ্রামই ভেঙ্গে নদী ও হাওরে বিলীন হয়ে যাবে বলে জানান গ্রামবাসী।
গ্রামবাসী জানিয়েছেন উদগল হাওরের ফসলরক্ষা বাধ গ্রামের উত্তরের দিকে রয়েছে। এই বাধটি নৌকা চলাচলের জন্য বিভিন্ন স্থানে বর্ষা মওসুমে কেটে দেওয়া হয়। গ্রামের সামনে বাধটি কেটে দেওয়ায় প্রবল ¯্রােত গ্রামে এসে আঘাত করে। ফলে প্রতি বছরই বর্ষায় গ্রামটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে ৯টি পরিবারের বসতঘর ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে।
গ্রামের সঞ্জীব চৌধুরী জানান, যে ভাবে ভাঙ্গন ধরেছে আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে গ্রামের অস্তিত্বই থাকবে না। এ বছর গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভাঙ্গার কারণে খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে। গ্রামটি রক্ষা করতে হলে পানি উন্নয়ন বাঁধের উপর দিয়ে স্থায়ী রাস্তা নির্মাণ না করা হলে গ্রামটি আর টিকানো সম্ভব নয়। গ্রামটি বিলীন হয়ে গেলে শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যও মুছে যাবে। এই বাঁধটির কিছু অংশ স্থায়ী করা হলে গ্রাম রক্ষার পাশাপাশি স্থায়ী চলাচলের ব্যবস্থাও হবে। এখনই উদ্যোগ না নিয়ে গ্রামবাসীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
নদীর পশ্চিম পারের নওয়াগাঁও গ্রামের শংকর চক্রবর্তী বলেন, গত কয়েকদিনে জয়পুর গ্রামের ৮/৯ টি পরিবারের ভিটে নদীতে চলে গেছে। অন্যগুলোও হুমকির মুখে আছে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝূঁকিতে আছে। ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমাদের স্মৃতিচিহ্ন মুছে যাবে।
গ্রামের রূপক দাস বলেন, প্রতি বছর হাওর রক্ষা বাঁধে মাটি দিতে গিয়ে গ্রামের চারপাশে বিশাল বড় বড় গর্ত তৈরি করা হয়েছে। এই কারণে বর্ষায় গ্রাম ভেঙ্গে পড়ে। বাধটি কেটে দিলে ¯্রােতের আঘাত গ্রামের ভিটায় এসে লাগে। এতে ভাংছে গ্রামটি।
শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী বলেন, জয়পুর গ্রামটিকে রক্ষা করতে হলে উদগল হাওর রক্ষা বাঁধটি নিয়ামতপুর থেকে জয়পুর বাঁধটিকে স্থায়ী রাস্তায় পরিণত করতে হবে। নাহলে গ্রামটি ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান।