হাওর ডেস্ক::
জগন্নাথপুরে পাওনা টাকা না পেয়ে জামিল হোসেন (৩৬) নামের এক অটোরিকসা চালককে টানা ৩ দিন লোহার শিকলে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে অটোরিকসার মালিক। নিহত জামিল হোসেন নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরি থানার আছাদপুর (নোয়াপাড়া) গ্রামের মৃত মফিজ আলীর ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথপুর পৌর এলাকার হাবিবনগর গ্রামের একটি কলোনিতে বসবাস করছিলেন। এ ঘটনায় নির্যাতনকারী অটোরিকসার মালিক শাকিল ওরফে সেকেল মিয়াকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের পাইলগাঁও গ্রামের এখলাছ মিয়ার ছেলে।
এদিকে শনিবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকা- সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার হাবিবনগর গ্রামের ছিলিমপুর স্ট্রেট মার্কেটের গ্যারেজের মালিক শাকিল ওরফে সেকেল মিয়া (৪০) অটোরিকসার মালিক। তার কাছে ২০টি অটোরিকসা রয়েছে। তিনি সেগুলো ভাড়া দিতেন। জামিল হোসেনও আসামি শাকিল মিয়ার একটি অটোরিকসা দিনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়ায় চালাতেন। কিছুদিন আগে জামিল হোসেনের এক বন্ধু তার কাছে অটোরিকসা চালাবে বলে জানালে জামিল তার ওই বন্ধুকে অটোরিকসা মালিক শাকিল মিয়ার কাছে নিয়ে যান। তখন শাকিল মিয়া জামিল হোসেনের কথায় তার বন্ধুকে একটি অটোরিকসা ভাড়া দেন। কিন্তু কয়েকদিন পর জামিল হোসেনের বন্ধু অটোরিকসা নিয়ে পালিয়ে যায়। এতে করে সকল দায়ভার চলে আসে জামিল হোসেনের উপর। সালিশি বৈঠকে নির্ধারণ করা হয় অটোরিকসার দাম ১৮ হাজার টাকা। জামিল হোসেন নিজের অটোরিকসা ভাড়ার পাশাপাশি আরো ২৫০ টাকা মোট ৫৫০ টাকা দিনপ্রতি শাকিল মিয়াকে প্রদান করবেন। এতে জামিল হোসেন রাজি হয়ে অটোরিকসা চালিয়ে টাকা পরিশোধ করতে থাকেন। প্রতিদিন অতিরিক্ত ২৫০ টাকা করে দিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত ১২ আগস্ট ঈদুল আজহা হলে জামিল হোসেনের পরিবার বেড়াতে চলে যায়। ১৩ আগস্ট জামিল হোসেন অটোরিকসা মালিক শাকিল মিয়ার কাছে গিয়ে কয়েকদিনের ছুটি চাইলে তিনি ছুটি দিতে রাজি হননি। এসময় তিনি স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরের সহায়তায় জামিল মিয়াকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। ১৩ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট বিকেল পর্যন্ত শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করায় এক সময় জামিল হোসেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে আসে শাকিল মিয়া। পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং লাশের শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পান।
এদিকে, নিহত জামিল হোসেনের স্ত্রী জামিনা বেগম বাদী হয়ে নির্যাতনকারী সেকেল মিয়া ও আজিদ মিয়াকে আসামি করে শনিবার জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৭।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি নৃশংস। আমরা আসামিকে গ্রেফতার করেছি। থানায় মামলা হয়েছে। আমরা ওই আসামিকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করে এর সাথে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি-না খোঁজ নিব।