হাওর ডেস্ক ::
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলটির সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নেতাদের একটি অংশ ক্ষমতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ অর্থবিত্তের মালিক বনে যাওয়ায় চলছে তাদের ধরপাকড়।সম্প্রতি যুবলীগের ঢাকা মহানগর নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবজি, ক্যাসিনোর ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর ওই কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমান্ড। পরবর্তীতে ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলার যুবলীগ নেতাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের নানা অভিযোগ আসায় বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে ত্যাগি ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের নেতৃত্বে আনতে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলনের পাশাপাশি যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে এরই মধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা পৌছে গেছে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়মিত হলেও দলটির সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সম্মেলন নিয়মিত হচ্ছে না। সর্বশেষ সম্মেলনের পর কেটে গেছে ৭ বছর।গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ৩ বছর অন্তর যুবলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা, তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ ৯ বছর পর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেই কমিটিরও মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই।
চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। ঘোষিত সংগঠনগুলোর সম্মেলন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পাশাপাশি এ সময় তিনি যুবলীগসহ আরও দুই সহযোগী সংগঠন- স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের সম্মেলনের তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করার কথা বলেছিলেন; কিন্তু সেই তারিখ আর ঘোষণা হয়নি।
দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, যুবলীগ সব সময় আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছে, রাজপথে সক্রিয় থেকেছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রতিদিনই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল। মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও হারুনুর রশিদ নেতৃত্বে আসার পর এবং দল ক্ষমতাসীন হওয়ায় রাজপথে সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে না হলেও হরতাল-অবরোধ ইত্যাদির বিরুদ্ধে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় ছিল যুবলীগ। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুপস্থিতিতে নিজেদের আখের গোছাতে তৎপর হয়েছেন সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা । ক্ষমতার দাপটকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই কামাই করছেন অবৈধ অর্থ।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষনেতাদের অনেকেই এখন যুবলীগ নিয়ে চিন্তিত। আলোচিত হচ্ছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি আরমান হোসেন, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া কি করে ফ্রিডম পার্টি থেকে যুবলীগে এলো, গ্রেফতার হওয়া অপর যুবলীগ নেতা জি কে শামীম কোন পথে যুবদল থেকে যুবলীগে পদ পেলো এসব নিয়ে চলছে নানা কানাঘুষা।যুবলীগের অফিস স্টাফ ও কম্পিউটার অপারেটর কাজী আনিসুর রহমান কিভাবে দফতর সম্পাদক পদ পেলেন এবং কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন এসব নিয়েও চলছে সরস আলোচনা। সবমিলিয়ে বড় ধরনে বিতর্কের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বসহ পুরো যুবলীগ।
এই পরিস্থিতিতে যুগলীগে নতুন নেতৃত্ব আনা প্রয়োজন করছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক। আর এ জন্যই দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই যুবলীগকে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনাগ্রহী আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বলেন, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মূল দলের জেলা, মহানগর, উপজেলার সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনও দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফিরলে আনুষ্ঠানিকভাবে সে নির্দেশনা দেওয়া হবে। সূত্র : পূর্বপশ্চিমবিডি