হাওর ডেস্ক::
বোরো চাষীদের বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশকসহ যাবতীয় কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও বিনাসুদে কৃষিঋণ প্রদান, সঠিকভাবে কাজ সম্পাদনকারী পিআইসিদের চূড়ান্ত বিল পরিশোধ এবং প্রকৃত বোরো চাষীদের তালিকা প্রনয়ণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় ২০১৭ সালের অকাল বন্যায় হাওরের বাঁধ ভেঙে শতভাগ কৃষকের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। এতে দুর্বিপাকে পড়েন লাখো কৃষক। পরবর্তীতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কৃষকরা পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন করতে পারলেও ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। ফলে আগামী বোরো মৌসুমে জেলার প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর বোরো জমি আবাদ করার সামর্থ্য নেই বোরোপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জের বোরোচাষীদের। তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান অত্যন্ত প্রয়োজন।
বক্তব্যে আরো বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জে আগামী বোরো মৌসুমে ধান চাষের জন্য সার, বীজ, কীটনাশকসহ যাবতীয় কৃষি উপকরণ বোরোচাষীদের বিনামূল্যে সরবরাহ ও বিনাসুদে কৃষিঋণ প্রদানের জন্য কৃষকদের পক্ষে আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, গত মৌসুমে বোরো ফসলের সুরক্ষার জন্য জেলায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৭২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তাদের মধ্যে অনেক পিআইসি সরকারি নীতিমালার মধ্যে থেকে সুষ্ঠুভাবে কাজ স¤পন্ন করেছে।কিন্তু কাজ স¤পন্ন করার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও তাদেরকে শেষ কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হয়নি। টাকা পরিশোধ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। ফলে আগামীতে বাঁধ নির্মাণে পিআইসিতে যোগ দিতে অনেকই অনীহা প্রকাশ করবে। এতে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমিন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদনকারী পিআইসিগুলোকে তাদের শেষ কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ১৫ হাজার কৃষকের অনুকূলে কৃষি সহায়তা কার্ড প্রদান করেছে সরকার। এই কার্ডধারীদের বড় অংশ অকৃষক ও ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। সরকার কর্তৃক কৃষকদের প্রদত্ত প্রণোদনামূলক কর্মসূচির সুফলভোগী তালিকাভুক্ত অকৃষকরা। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে আবার, বোরো ধান কাটার পর এইসব অকৃষক ও ভিন্ন পেশার লোকজন তাদের কার্ড প্রদর্শন করে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করেন। এতে বঞ্চিত হন প্রকৃত বোরো চাষীরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত বোরো চাষী ও বর্গাচাষীদের আলাদা কার্ড প্রদান করে বোরো মৌসুমে কেবলমাত্র তাদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে সরকারিভাবে জেলাওয়ারি ধান ও চাল ক্রয়ের যে চাহিদাপত্র করা হয় সেখানে বোরো উৎপাদন হয় না এমন জেলাও যুক্ত থাকে। সরকারের কাছ ধান বিক্রি করতে গিয়ে সুনামগঞ্জের মতো বোরোপ্রধান জেলার কৃষকরা বঞ্চিত হন। বোরোধান সংগ্রহ মৌসুমে কেবলমাত্র বোরোপ্রধান জেলা থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করার নীতিমালা তৈরি করা হলে সুনামগঞ্জের মতো জেলা থেকে ১০ গুণ বেশি ধান-চাল সংগ্রহ করা সম্ভব। এতে বোরো চাষীরা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। বোরো মৌসুমে কেবলমাত্র বোরো ধান উৎপাদন হয় এমন জেলা থেকে ধান ক্রয়ের দাবি জানাই।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, উপদেষ্ঠা রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, চিত্তরঞ্জন তালুকদার, ডা. ম্রুশেদ আলম, ইয়াকুব বখত বাহলুল, বিকাশ চৌধুরী, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু প্রমুখ।