1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা পেল বিশ্বস্বীকৃতি

  • আপডেট টাইম :: বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৭.৫৮ এএম
  • ৬৪৩ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেক্স::
অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে, জরা-গ্লানি মুছে দিয়ে প্রাণে প্রাণে মঙ্গল বারতা আবাহনের অন্যতম প্রতীক মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতি মিলেছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে বাংলা নববর্ষ বরণে বাঙালির প্রাণের উৎসবের বর্ণিল এ শোভাযাত্রা। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় গতকাল বুধবার ইউনেসকোর ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ বিষয়ক আন্তসরকার কমিটির ১১তম অধিবেশনে এ সিদ্ধান্ত হয়। বিশিষ্টজনরা বলছেন, এ স্বীকৃতির মাধ্যমে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার ঐতিহ্য বিশ্ব দরবারে আরো প্রতিষ্ঠিত হলো।

গতকাল রাতে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইউনেসকোর রিপ্রেজেনটেটিভ লিস্ট অব ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটির (অনুভবযোগ্য মানবীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য) তালিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ইউনেসকোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহিদুল ইসলাম ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানিয়েছেন।

শাহরিয়ার আলম লিখেছেন, ‘আমরা বেশ কিছুদিন যাবৎ এটা নিয়ে কাজ করছিলাম এবং আজকে (বুধবার) সকালে দুই ঘণ্টাব্যাপী  বিতর্কের পর এটা নিশ্চিত করা গেছে। সবাইকে অভিনন্দন!!!’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ স্বীকৃতি বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত সক্রিয় সাংস্কৃতিক কূটনীতির ফসল। এতে ধর্মনিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো জোরালো হবে।

ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল দুই বছর আগে। বাংলা একাডেমি এ বিষয়ে একটি মনোনয়ন নথি তৈরি করেছিল। এরপর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেটিকে অনুমোদন করে ইউনেসকোতে উপস্থাপন করে। পরে কয়েক দফা সংশোধনের পর ইউনেসকোর সংশ্লিষ্ট কমিটি সেটি অনুমোদন করে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেসকোর সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার স্বীকৃতির জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। গত ২৮ নভেম্বর থেকে আদ্দিস আবাবায় ইন্টার গভর্নমেন্টাল কমিটি অন ইনট্যানজিবল কালচার বিষয়ক সভা শুরু হয়েছে। আজ (বুধবার) সেখানেই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্যারিস থেকে ফোনে আমাকে এ খবর জানানো হয়েছে। এ স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছি।’

ইউনেসকো গতকাল তার ওয়েবসাইটে মানবীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রার তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি এর ইতিহাস ও ছবি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা উৎসব বাংলাদেশের জনগণের লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের লড়াইয়ে সাহস ও শক্তির এবং সত্য ও ন্যায়কে সমর্থন জানানোর নিদর্শন। এটি বর্ণ, মত, ধর্ম, লিঙ্গ বা বয়স নির্বিশেষে জনগণকে একতাবদ্ধ করার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও এর প্রতি সহমর্মিতারও প্রতীক। এ উৎসবকে ঘিরে কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময় হয়ে থাকে। অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে প্রগতিশীলতাকে বিকাশের সুযোগ দেওয়াই এ শোভাযাত্রার লক্ষ্য।

ইউনেসকো বলেছে, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেন। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সামরিক শাসনে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা ১৯৮৯ সালে উন্নততর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার সংস্কৃতি শুরু করেছিল। উৎসবের এক মাস আগে থেকেই মুখোশ ও বাঁশি তৈরির জন্য শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেন। শিল্পকর্ম বিক্রির অর্থ থেকেই এ উৎসবের তহবিল সংগ্রহ করা হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৮ সালে বাউল সংগীত ও ২০১৩ সালে জামদানির বুননে ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা ইউনেসকোর ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

গতকাল যোগাযোগ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের অধ্যাপক শিশির কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘আদ্দিস আবাবার যে সভায় মঙ্গল শোভাযাত্রাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় সেখানে আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নিসার হোসেন অবস্থান করছেন। দুই-তিন দিন পর তিনি দেশে ফিরবেন। এরপর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব।’

মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতির খবরে উচ্ছ্বসিত এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা। বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী হাশেম খান বলেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করার খবরটা অত্যন্ত আনন্দের। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় ‘কালবৈশাখী’ নামে। যদিও সেটা ছিল ছোট পরিসরে। আমি শুরু থেকেই এর সঙ্গে ছিলাম।” তিনি বলেন, ‘মূলত আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যেই এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু শুরুর এক বছর পরেই ১৯৭০ সালে সাংস্কৃতিক শুদ্ধতা, ঐতিহ্য, স্বাধিকার আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়ে নতুনভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। এরপর দীর্ঘদিন সেটি বন্ধ ছিল। তবে এখন যে মঙ্গল শোভাযাত্রা, তার শুরু মূলত ১৯৮৯ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে আমরা মানুষকে দাঁড় করাতে চেয়েছি। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে বিকশিত করতে চেয়েছি।’

হাশেম খান আরো বলেন, ‘শুরুর দিকে এর সঙ্গে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পী এমদাদ হোসেন, রফিকুন নবী, মুস্তাফা মনোয়ার, কাইয়ুম চৌধুরী, কামরুল হাসান, শাহাদাত চৌধুরীসহ আরো অনেকে ছিলেন। এ ছাড়া তৎকালীন আর্ট কলেজের শিক্ষার্থী প্রফুল্ল, নাসির, মনজুরুল, বীরেন সোমসহ অনেকে যুক্ত ছিলেন। আমরা প্রথমে চাঁদা দিয়ে স্বল্প পরিসরে হলেও মুখোশ ও পোস্টার করেছি। এ স্বীকৃতির মাধ্যমে বোঝা গেল শিল্পীরা কিছুটা হলেও দেশের জন্য করতে পেরেছেন।’

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশ্ব স্বীকৃতি অবশ্যই আনন্দের। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। তাই শস্য ওঠার সময় বছরটাকে বরণ করার সংস্কৃতি বেশ পুরনো। এ সংস্কৃতিকেই মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একেবারেই প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদিও অনেকে একে ধর্মের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেছেন।

মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘প্রতিটি জাতিই তার নববর্ষের প্রথম দিনটি পালন করে থাকে। সব কিছু বিদেশ থেকে ধার করে আনলে চলবে না। জাতি হিসেবে আমরা বাঙালি, কিন্তু এই জাতির কিছুই পালন করব না; তাহলে কিভাবে বাঙালি হব? তাই মঙ্গল শোভাযাত্রার স্বীকৃতিতে আমি খুবই খুশি। আর এ শোভাযাত্রায় কিভাবে কাগজ দিয়ে মুখোশ বানিয়ে এর বৈচিত্র্য বাড়ানো যায় তা আমি ছাত্রদের শিখিয়েছিলাম।’

যোগাযোগ করলে চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার স্বীকৃতি আমাদের বড় অর্জন। একসময় শোভাযাত্রার বিরুদ্ধাচরণ করার লোকের অভাব ছিল না। এ বৈরিতা প্রতিরোধ করেই শোভাযাত্রা এগিয়ে এসেছে। এখন লাখ লাখ মানুষ এতে অংশ নেয়। তবে ১৯৮৯ সালে যখন এটা শুরু হয় তখন বৈরিতা ছিল এ জন্য যে অনেকেই মনে করত প্রতীকী জিনিস দিয়ে আমরা কাউকে ভয় দেখাতে চাচ্ছি। আসলে এটা সৃজনশীলতার একটা প্র্যাকটিস। পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, বাংলাদেশবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যাদের অবস্থান তাদেরও এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিরোধের চিন্তা ছিল। আর এ শোভাযাত্রা বড় আকার ধারণ করে স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনের মাধ্যমে। আর নিজ সংস্কৃতিকে ও বাঙালিয়ানাকে ভালোবেসেই এটা পরিচিতি লাভ করে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই তা বিশাল কলেবর ধারণ করে।’

মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস পুরনো হলেও নতুন প্রজন্মের হাত ধরেই এর বিস্তৃতি পেয়েছে। স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এ শোভাযাত্রার মাধ্যমে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বর্তমানের বিশাল পরিসরের এ শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণরাই। বর্তমান প্রজন্মের শিল্পী আমিরুল হাসান লিটু বলেন, এই জয় বাংলার মানুষের, বাংলাদেশের। ১৯৮৯ সালে সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ব্যাপকভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ শোভাযাত্রা কোনো সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয় না। ১৯৮৯ সালে ‘বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক’ এ স্লোগানে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়।

মাঝে উগ্রবাদের উত্থান, রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ধর্মের নামে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চোখরাঙানি—কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। বিদেশি সাংবাদিকদের কাছেও অন্যতম আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা। অনেক বিদেশি নাগরিকও এতে অংশ নেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বাংলা সংস্কৃতির শাশ্বত রূপ পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন। বছরের প্রথম দিন আমরা মঙ্গল কামনা করি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের, বিশ্বের প্রতিটি মানুষেরই মঙ্গল কামনা করা হয়। এরই একটি অংশ মঙ্গল শোভাযাত্রা। আর এর আয়োজন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই। এ শোভাযাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতির মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এ জন্য জাতিসংঘ ও ইউনেসকোকে ধন্যবাদ। এ স্বীকৃতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে।’

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!