1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

‘দেখবো তোমারে…’।। উজ্জ্বল মেহেদী

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯, ২.৩১ পিএম
  • ৩৪২ বার পড়া হয়েছে

‘দেখবো তোমারে…’। তথ্যচিত্রের নাম। আগেই ঠিক করা ছিল। সহজ কথায় প্রকাশ, জীবনভর দেখার আকুতি। তাই নাম নিয়ে কোনো কিছু বলার নেই। কিন্তু তথ্যচিত্রের লেখা, মানে ধারা বর্ণনা কী হবে? নির্মাতাভুবনে যাকে ‌’স্ক্রিপ্ট’ বলা হয়। স্ক্রিপ্ট নাকি নির্ধারণ করবে তথ্যচিত্রের গতিপ্রকৃতি প্রভৃতি।
মোটামুটি বলা যায়, মূল একটি কাজ। আমিতো সংবাদজীবী মানুষ। ঘটনা ঘটার পর সেই সব ঘটনার বর্ণনা দেখা থেকে লিখি। পেশাগত দায় থাকে লেখায়। জবাবদিহিতার রক্তচক্ষু নিয়েও ভাবতে হয়। এরমধ্যে ভালো লাগলে নিজস্বতা উজাড় করি, গৎবাঁধা হলে জলবৎতরলং। এই রুটিনে বড় একটি চিন্তারেখা মাথায় খেলা করে। কী করি, কী করি… এমন ভাবনায় নির্মাতা মানে তথ্যচিত্রের পরিচালক আব্দুল আলিম শাহ জানালেন স্ক্রিপ্ট না পেলে আগে থেকে চিত্রধারণের কিছুই করা যাবে না। তার মানে আগে স্ক্রিপ্ট চাই। নাজিয়াভাবীর (অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী, মইনুদ্দিন আহমদ জালালের স্ত্রী) বাসায় যাই। সেখানে জালালভাইয়ের সর্বশেষ পদচারণের গন্ধ আছে। কথা হয় সুমনভাইয়ের (সিপিবি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাঢভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন) সঙ্গে। তিনি তাগাদা দিলেন। জানালেন সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথাও। সিপিবি নেতার স্মরণসভায় তথ্যচিত্র নির্মাণ শেষে কম্পিউটার ক্রাশ হওয়ায় ঘোষণা সত্ত্বেও আর তথ্যচিত্র প্রদর্শন তো দূরের কথা, সব আয়োজন করেও নির্মাণ শেষ হলো না।
আমি এবার সতর্ক। খোঁজ করলাম সেই তথ্যচিত্র নির্মাণসংশ্লিষ্টদের। সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সরোজ কান্তি ছিলেন নির্মাণকাজে। তাঁকে নিয়ে অফিসে বসলাম। তথ্যচিত্রের স্ক্রিপ্টে কী কী থাকা চাই, তার একটা তালিকা তৈরি করলাম। লিখলাম জীবনের প্রথম স্ক্রিপ্ট- ‘দেখবো তোমারে…’।
তথ্যগত ত্রুটি সংশোধনে অফিসে ডেকে এনে প্রথম পড়তে দিলাম সোহাগকে (তাজউদ্দিন সোহাগ, জালালভাইয়ের আদুরে ভাগ্নে)। এক প্যারা পড়ে তার চোখ ঝাপসা। বললো, মামা আর পড়তে পারবো না। তাঁর নাকি প্রভাতফেরির কথা মনে পড়ে গেছে। পড়তে অপারগ সোহাগের কাছ থেকে শুধু তথ্য সংশোধন করলাম। নির্মাতার কাছে গেল স্ক্রিপ্ট। নির্মাতা আব্দুল আলিম শাহ তথ্যচিত্রের পরিচালক। স্ক্রিপ্ট পড়ে চোখ তাঁর ছানাবড়া হওয়ার মতো। আমি নাকি তথ্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখার প্রথাগত কোনো কিছুই মানিনি। নার্ভাস আমি। তাঁকে জড়তার সঙ্গে বলি, ভাই জীবনে প্রথম লিখছি। অসংগতি যেখানে, বা প্রথা ভাঙছে যেখানটায়, নিজ দায়িত্বে সংশোধন করে নেন। আলিম শাহ আমার সাংবাদিকতা সম্পর্কে জানেন। আমার লেখায় হাত না দেওয়ার কলাকৌশল সম্পর্কেও অবহিত। তাই সংশোধন আর হলো না। জানালেন, এই স্ক্রিপ্ট না হয় প্রথা ভাঙল, কিন্তু লেখার ধারাপাত রক্ষায় যেভাবে লেখা, সেভাবেই যাবে। নির্মাণকাজ শুরু। সঙ্গী চিত্রগ্রাহক রাজন শুভ্র, চিত্রসম্পাদক প্রভাত পাল। সপ্তাহ দিনের কর্মযজ্ঞে গতি পেল ভয়েস। যিনি ধারা বর্ণনা দিয়েছেন, তাঁর ভরাট কণ্ঠ। পেশার বাইরে থাকা একজন কণ্ঠ দিলেন। এবার স্ক্রিপ্টে থাকা হোটেল জালালাবাদের ৩১ নম্বর কক্ষ নিয়ে কবি মোহাম্মদ সাদিকের কবিতার দরকার। বাবলুভাই (আইনুল ইসলাম বাবলু, সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাাংবাদিক ও আইনজীবী) ১৯৮৫ সালের সেই কবিতা ও বইসমেত দিলেন। নির্মাতা এবার মোহাম্মদ সাদিকের কণ্ঠ ধারণ করতে এক চলচ্চিত্রকারকে ঢাকা পাঠালেন। সিলেটে থেকে ভোরের আলোয় শহীদ মিনার, ঘাস-কুয়াশা ধারণ করতে প্রভাতফেরির মতো নিশিজাগরণ হলো তাঁর। শেষে করলেন মূল আয়োজন। নাগরনাটের উজ্জ্বল চক্রবর্তী জালালভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে কেঁদে কেঁদে একটি গান লিখিছিলেন। শুনে সেটি তথ্যচিত্রে সংযোজন করতে চাইলেন নির্মাতা। যমুন টেলিভিশনের সিলেট বিভাগীয় প্রধান বন্ধু সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান রিপন তখন কানাডায়। খবর পেয়ে তাঁর স্টুডিও গানের আয়োজন করতে বলেন। সিলেটে মাইদুল রাসেল চিত্রগ্রাহককে নিয়ে ইনহাউজ সহায়তা দিলেন। উজ্জ্বল চক্রবর্তী সঙ্গে নিয়ে এলেন অরূপ বাউলকে। গানের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জালালভাইকে নিয়ে প্রথম একটি চিত্রকর্ম তৈরি করেছিলেন অরূপ। সেটি রেখে ধারণ শুরু। বাঁশির সঙ্গে গানটি যেন বুকে বাঁধল। চোখ বেয়ে জল পড়ছিল। আলিম শাহ লক্ষ্য করলেন। চিত্রধারণ মাঝখানে রেখে আমি চলে যেতে চাই। যাওয়ার সময় আলিম বলছিলেন, ‘আপনার কান্না আমি ছড়িয়ে দেব এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে, দেখে সবাই কাঁদবে!’
আলিম শাহ একটি অসাধারণ সংযোজন করেছেন। জালালভাই তো নেপথ্যের নায়ক। তাই সব প্রভাতে তিনি থাকলেও ছবি বা ভিডিও পাওয়া যেত না। আলিম শাহ জালালভাইয়ের জীবনে প্রথম কোনো টেলিভিশন সাক্ষাৎকার জোগাড় করতে সক্ষম হলেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক টিভি চ্যানেল থেকে একটি সংগ্রহে সহায়তা করেছেন সংবাদকর্মী মইনুদ্দিন মনজু। ভোরের আলোয় প্রভাতফেরির ছবি দিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল-আজাদ। সবশেষে ইংরেজি সাবটাইটেল লিখে দিলেন ডেইলি স্টারের করসপনডেন্ট দ্বোহা চৌধুরী।
নির্মাণ শেষ হলো ১৭ অক্টোবর রাত ২টায়। আমি কিম ভাই (আবদুল করিম কিম, বাপা সিলেটের নেতা) ও ছামির মাহমুদ প্রথম দেখলাম। কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। সেগুলো সেরে সর্বশেষ পর্যায়ে আমরা যখন দেখি, তখন কারো মুখে কোনো কথা নেই। সাত তলা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি সবাই। কোনো কথা নেই। দেশে-বিদেশে অনেক তথ্যচিত্র দেখার অভিজ্ঞতায় কিম ভাই ধীমান কণ্ঠে বললেন, ‘ভেতরটা হু হু করের। আও ঠাণ্ডা কিছু খাইয়া জুড়াই!’
১৮ অক্টোবর ভোর সাতটার সময় নির্মাতা আলিম শাহ ইনবক্সে ম্যাসেজ দিয়ে জানালেন, কাজ শেষ। সন্ধ্যার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা হবে, ‘দেখবো তোমারে…’। দেখা হলো রাতের আঁধারে বড় পর্দায়। আমার পাশে ছিলেন জালালভাইয়ের ঘনিষ্টজন শাহরিয়ার বিপ্লব। তথ্যচিত্র দেখা শেষ হওয়া মাত্র ‘উজ্জ্বল…’ বলে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। বাচ্চাদের মতো দুজন কাঁদলাম। আলিম শাহ জানালেন, কোনো ভুল থাকলে জানালে আরেকদফা সংশোধন করা যাবে। কিছু সংশোধিত হলো।
আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে প্রদর্শন হবে তথ্যচিত্রটি। প্রিয় জালালভাই তো দেখার মধ্যে নেই, আছেন শুধু মননে। তথ্যচিত্রটি দেখার আমন্ত্রণ সবাইকে। এ দেখা থেকে চূড়ান্ত সংশোধন করে আমরা তথ্যচিত্রটি আপলোড করবো অন্তর্জাল দুনিয়ায়। তখন হয়তো ভুবনজুড়ে দৃশ্যমান হবে ‘দেখবো তোমারে…’।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!