হাওর ডেস্ক ::
কৃষক ও মিল মালিকদের সঙ্গে যৌথভাবে আমন ধান ও চাল সংগ্রহসহ বেশ কিছু নতুন নিয়ম অনুসরণ করবে সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রান্তিক কৃষকের ঘরে পৌঁছানো সহজ হবে। এতে ভোগান্তি থেকেও কৃষক রেহাই পাবেন বলে মনে করছে সরকার। কৃষকদের কাছ থেকে আসা বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, এ বছরই প্রথম সরকার চালের চেয়ে বেশি পরিমাণে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আমন মৌসুমে ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহ করবে সরকার। এর মধ্যে ছয় লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে তিন লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন সেদ্ধ ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও মিল মালিকদের সহযোগিতায় চাল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ছয় লাখ মেট্রিক টন ধান সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় গুদাম সরকারের কাছে নেই। তাই এ বছর কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ধান দেওয়া হবে মিল মালিকদের কাছে। তারা এই ধান থেকে চাল বানিয়ে সরকারকে দেবে। বিনিময়ে সরকার তাদের একটি যৌক্তিক সুবিধা দেবে। যা পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। সরকারের এমন পরিকল্পনার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন মিল মালিকরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীবলেন, ‘আমন সংগ্রহে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আমরা নিজেদের উদ্যোগে আমন সংগ্রহ করে চাল সরকারের নির্ধারিত দামে সরবরাহ করবো। এ ছাড়াও সরকার যে ধান কিনবে তা যদি আমাদেরকে দেয় তাহলে কেনা ধান থেকে চাল বানিয়েও সরকারের গুদামে দেওয়া হবে।’ এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হবে বলেও জানান লায়েক আলী।
অন্যান্য বছর এ কাজে কৃষক নির্বাচনে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ এলেও এ বছর তা ঠেকাতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতা নেওয়া হবে। এর অংশ হিসেবে প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কৃষকের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সেই তালিকা খাদ্য বিভাগকে দেবে ইউনিয়ন পরিষদ। খাদ্য বিভাগ সেই তালিকায় থাকা কৃষকের কাছ থেকে আমন ধান ও চাল কিনবে। কৃষকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই করে তাদের কাছ থেকে ধান ও চাল কেনা হবে। আর লটারির মাধ্যমে বাদ পড়া কৃষকরা বোরো সংগ্রহের সময় অগ্রাধিকার পাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, আর্দ্রতার অজুহাতে সরকারি লোকজন কৃষকদের নানাভাবে হয়রানি করে। বিক্রির জন্য সরকারি গুদামের সামনে আনা ধান পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকায়নি বলে কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বছর এমন নাজেহাল থেকে রেহাই দিতে কৃষকের ধান নিয়ে সরকারি গুদামের সামনে যাওয়া লাগবে না। সরকারের বিশেষ করে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তালিকা অনুযায়ী কৃষকের বাড়ি যাবেন। তারা কৃষকের ধান প্রয়োজন অনুযায়ী শুকিয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখে কিনে নিয়ে আসবেন। আর ধান সঠিকভাবে শুকানো না হলে আর কতটা শুকাতে হবে তা বুঝিয়ে দিয়ে আসবেন। পরে আবার গিয়ে সরকারি লোকজন সেই ধান নিয়ে আসবেন। ধান কী পরিমাণ শুকানো হয়েছে তা মাপার জন্য ময়েশ্চার মেশিন নিয়ে যাবেন কর্মকর্তারা। এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ময়েশ্চার মেশিন কিনবে সরকার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারবলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমন বা বোরো সংগ্রহে নানা ধরনের অভিযোগ আমরা পাই। সেসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রকৃত কৃষক পায় না। এ কারণে এবার কিছু নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে আমন ধান ও চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রকৃত কৃষরকরাই পাবেন। অন্যদের কোনও সুযোগ নেই।’
গত ৩১ অক্টোবর সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা, সেদ্ধ চাল ৩৬ টাকা ও আতপ চাল ৩৫ টাকা দরে কেনা হবে। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ধান কেনা শুরু হবে। আর চাল কেনা শুরু হবে ১ ডিসেম্বর থেকে। এ কার্যক্রম চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ নভেম্বরের মধ্যে কৃষকদের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিতে হবে। তারপর যাচাই করে তা চূড়ান্ত করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ বছর এক কোটি ৫৩ লাখ টনের বেশি আমন ধান উৎপাদন হবে। এর মধ্য থেকে মাত্র ১০ লাখ টন আমন ধান ও চাল কিনবে সরকার।’ তিনি জানান, এবার প্রতি কেজি আমন ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ২১ টাকা ৫৫ পয়সা।এ প্রসঙ্গ নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মো. আয়েন উদ্দিবলেন, এখন পর্যন্ত কৃষকের তালিকা করার কোনও নির্দেশনা আমি পাইনি। নির্দেশনা পেলে অবশ্যই তালিকা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দেবো। সঠিকভাবে প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে আমন সংগ্রহ করলে কৃষক লাভবান হবেন।